বেশ কিছুদিন ধরেই টলিপাড়ায় চলছিল অচলাবস্থা। পরিচালক রাহুল মুখোপাধ্যায় বাংলাদেশে চুপিসারে শ্যুটিং করে আসার কারণে ফেডারেশনের তোপের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এরপরই তাঁর ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, তাঁকে পরিচালকের আসন থেকে সরতে হবে বলে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় মিটিং করা হয়। যার জেরে পরিচালক বনাম ফেডারেশনের সংঘাত সামনে আসে। দুদিনের জন্য অচল হয়ে যায় টলিপাড়া। এইসব নিয়ে যখন বাংলা ইন্ডাস্ট্রির তারকা-পরিচালকেরা সরব হন, তখন মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন অভিনেতা জিতু কমল। অনেকেই অবাক হন তাঁর এই আচরণে। তবে সব যখন একেবারে ঠিকঠাক তখনই এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আনলেন জিতু।
বৃহস্পতিবার জিতু কমল তাঁর ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছেন। যেখানে তিনি লিখেছেন, সত্যজিৎ রায়ের গুপি গাইন বাঘা বাইন-এর মুক্তির বিরুদ্ধে দল করেছিলেন উত্তম কুমার, বিকাশ রায়, অসিত চৌধুরী, জহর রায় সহ অন্যান্যরা। জিতু আরও লিখেছেন, ২০২৪ দাঁড়িয়ে যখন বাংলা ফিল্ম হল পায় না,বাংলা ছবির হলের সময় নিয়ে বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে,তখন আমরা সচরাচর স্বর্ণযুগের কথা তুলে ধরি। জিতু কমল বলতে চেয়েছেন, স্বর্ণযুগেও সিনেমা মুক্তি নিয়ে যথেষ্ট ঝামেলা হত। এদিন জিতু লেখেন, ২০২৪ সালে দাঁড়িয়ে যখন বাংলা ছবি প্রেক্ষাগৃহ পায় না,বাংলা ছবির হলের সময় নিয়ে বাকবিতণ্ডা লেগেই থাকে,তখন আমরা সচরাচর স্বর্ণযুগের কথা তুলে ধরি। তখনও মানসিক খুন-খারাপি ছিল।শুধু ডেটাপ্যাক ছিল না ৷ তাই সংক্রমণের রূপ নেয়নি। গুগাবাবা’র শুটিং, এডিটিং শেষ। প্রিন্ট বেরোনোর পথে। মুক্তি নিয়ে বাধল বিরাট ঝামেলা। মিনার, বিজলী, ছবিঘর চেন আগে থেকেই ঠিক হয়ে আছে। ওই সময় তপন সিংহের 'আপনজন' সিনেমাটি চলছে (১৯৬৮)। এরপরই গুগাবাবা আসবে কথা হয়েই ছিল। হঠাৎই 'চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতির' পক্ষ থেকে বলা হল মিনার,বিজলী,ছবিঘরে আগে বিজয় বসুর 'আরোগ্য নিকেতন' মুক্তি পাবে ৷ গুগাবাবার প্রিন্টই বের করতে দেওয়া হবে না ইন্ডিয়া ল্যাব থেকে।
জিতু আরও লেখেন, তবে 'গুগাবাবা'র পরিচালকের নাম শ্রীযুক্ত সত্যজিৎ রায়। উনি ওনার ডিস্ট্রিবিউটার নেপালবাবুকে দিয়ে বোম্বে (বর্তমানে মুম্বই) থেকে গুগাবাবার প্রিন্ট করিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে নেপালবাবুও হল চেনের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেই ফেললেন 'আরোগ্য নিকেতন'-এর পর গুগাবাবা’ই মুক্তি পাবে ৷ কাগজে বিজ্ঞাপনও বেরিয়ে গেল। ব্যাস, শুরু হল মিছিল পর্ব। মিছিলে নেতৃত্ব দিলেন- উত্তম কুমার, বিকাশ রায়, জহর রায়,অসিত চৌধুরীরা। যাতে রিলিজ না হয় গুগাবাবা। সন্ধ্যেতে প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ করারও কার্যক্রম রাখা হয়েছিল। সেখানে অবশ্য স্টার উত্তম কুমার আসেননি। বাকিরা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিজলির বাইরে টুলের উপর দাঁড়িয়ে দিয়েছিলেন বক্তৃতা। স্লোগান তোলা হয়েছিল হলের বাইরে 'গুগাবাবা চলবে না-চলবে না'। অভিনেতা জিতু বলেন, এমতাবস্থায় প্রথম শো ভাঙল ।'চলচ্চিত্র সংরক্ষণ সমিতি'র লোক হলের মধ্যেই ছিলেন। তাঁরা টোন-টিটকিরি দিতে দিতে বেরোলেন 'এই রে ভুতুড়ে ছবি/ও কেউ দেখবে না/আর কত গাঁজাখড়ি দেখব রায় মশাই' ৷ কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে সেকেন্ড শো থেকে জনতা জনার্দন ছবিটিকে নিয়ে মেতে উঠল । টানা ১০৩ সপ্তাহ চলল ছবিটি। যা বোধহয় এখনও পর্যন্ত বাংলা ছবির দৃষ্টান্ত।
পরিচালক-ফেডারেশন দ্বন্দ্ব বা পরিচালক-অভিনেতার ঝামেলা শুধু এযুগের টলি ইন্ডাষ্ট্রিতে নেই ৷ ছয়ের দশক থেকেই নাকি ঝামেলার সূত্রপাত। আর সেদিকেই দৃষ্টিপাত করেছেন জিতু কমল। এ যুগেও একাধিক সিনেমা-সিরিয়ালকে বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হয়েছে বারংবার। প্রসঙ্গত, অপরাজিত ছবিতে জিতুকে দেখা গিয়েছিল কিংবদন্তী পরিচালক সত্যজিতের ভূমিকায়।