কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার প্রতিবাদে জেলায় জেলায়- হাসপাতালে হাসপাতালে বিক্ষোভ চলছে। সুবিচার ও নিরাপত্তার দাবিতে, প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের কর্মবিরতি চলছে এখনও। শাস্তির দাবিতে মিছিল চলছে কলকাতা থেকে শুরু শহরতলির রাস্তায়।
৩১ বছর বয়সী মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুতে সরব সাধারণ মানুষ থেকে তারকারাও। তবে এতদিন অবধি মুখে কুলুপ এঁটেছেন তৃণমূল- কংগ্রেসের সাংসদ- বিধায়কেরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় সায়নী ঘোষ, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্রের মতো সাংসদদের একহাত নিচ্ছেন নেটিজেনরা। স্বাধীনতা দিবসের দিন অবশেষে মুখ খুললেন রচনা।
নিজের রাজনৈতিক পেজ থেকে ১৫ অগাস্ট একটি ভিডিও পোস্ট করলেন অভিনেত্রী- সাংসদ। নিজের মনের কথা বলতে বলতে কেঁদের ভাসালেন তিনি। রচনা প্রশ্ন তুললেন, 'আমরা কি সত্যি স্বাধীন?' ভিডিওর শুরুতেই তিনি বলেন, একজন সাধারণ মানুষ হয়ে তিনি ভিডিওটি করছেন। রচনার মুখে শোনা যায়, "আজকে ১৫ অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবস। দেশ স্বাধীন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সত্যিই কি আমরা স্বাধীন হয়েছি? সত্যিই কি স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারছি? সারা ভারতবর্ষের মহিলারা কি আজ স্বাধীনভাবে ঘুরতে পারছে? দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, মণিপুরে একটার পর একটা ঘটনা। আমরা কেন করতে পারছি না? আমাদের কলকাতা শহরের আরজি কর-র ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়, ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, মুখে আনা যায় না যা ঘটেছে।"
রচনা আরও বলেন, "আমরা প্রতিবাদের সুর তুলেছি। আমরা আওয়াজ তুলেছি, আমরা রাস্তায় হাঁটছি। আমি আপনাদের সাথে আছি। মহিলাদের আওয়াজ আমার মনে হয় না ভারতবর্ষে এর আগে কথাও উঠেছে, সাবাশ এই জন্যে! সব মহিলাদের আমি স্যালুট জানাচ্ছি। আপনারা যা করেছেন, আমি আপনাদের সাথে আছি। মহিলা হিসাবে আমি আপনাদের সাথে আছি, বিশ্বাস করুন। এই আওয়াজ উঠিয়ে রাখবেন। যতক্ষণ না সুবিচার পায়...। দোষী যেন শাস্তি পায়। বিশ্বাস করুন, আমি আছি আপনাদের সঙ্গে।"
অভিনেত্রী আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, দিনের শেষে রাত করে কাজ থেকে ফেরার সময়, তিনি গাড়িতে ফিরলেও বহু মহিলা তা পান না। রচনা বলেন, "আমার এখন মনে হচ্ছে। আমি বাড়িতে ঠিক মতো পৌঁছতে পারব তো? এটা কেন হবে? আমি একজনের বোন, একজনের মেয়ে। পুরুষ মানুষ আমায় দেখে সম্মান করবে, আমি বিপদে পড়লে আমায় হাত ধরে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। এটাই তো পুরুষ মানুষের জাত হওয়া উচিত। পুরুষ মানুষের জাত কি এমন হবে যে, আমায় ছিঁড়ে খাবে? আমি চিৎকার করব, আমার কথা শুনবে না? আমাদের একটা কঠিন স্টেপ নিতে হবে। বিচার ব্যবস্থা এমন হতে হবে যে, কোনও মেয়ের দিকে কোনও পুরুষ কু-নজর দিতে পারবে না... আপনারা সবাই একজোট হয়ে থাকবেন। আমরা সবাই আপনাদের সঙ্গে আছি। আপনারা ভাববেন না, আমরা রাজনীতির মানুষ, অভিনয় করি, তাই আমার মন আপনাদের জন্য কাঁদে না।"
ভিডিওর শেষে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, তিনি আরও কথা বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বলতে পারেননি। এর জন্যে। সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। অভিনেত্রীর এই পোস্ট করার পরেই কমেন্টবক্স ভরেছে নেতিবাচক মন্তব্যে। এতদিন তিনি কোথায় ছিলেন, এই প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন নিন্দুকরা?
প্রসঙ্গত, আরজি কর কাণ্ডে প্রতিবাদ করে বহু শিল্পীকে কটাক্ষের মুখেও পড়তে হয়েছে এর আগেও। সে তালিকায় রয়েছে শ্রীজাত, অপর্ণা সেন, নচিকেতা চক্রবর্তীর মতো শিল্পীদের নাম। দোষীদের শাস্তির দাবিতে রোজই মিছিল চলছে কলকাতা থেকে শুরু শহরতলির রাস্তায়। নৃশংসতার প্রতিবাদে স্বাধীনতা দিবসের আগের রাতে অর্থাৎ ১৪ অগাস্ট কলকাতা সহ বিভিন্ন জেলা, এমনকী রাজ্যে নেওয়া হয় এক কর্মসূচী। এদিন মধ্যরাতে রাত দখলে পথে নামেন মহিলা ও সাধারণ মানুষ। হাজার হাজার মানুষের গলায় শোনা যায়, 'উই ওয়ান্ট জাস্টিস'।