scorecardresearch
 

ভ্যাকসিন নাকি 'বিষ-তরল'! মহামারি সামলাতে ব্রিটিশরা হিমশিম খেত

Pandemic| আজ যখন করোনা অতিমারি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, তখন ব্রিটিশ আমলে কী ভাবে মহামারির মোকাবিলা করত তত্‍কালীন সরকার, তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। বস্তুত, রাজ্য সরকার যে পদ্ধতিতে এখন করোনা অতিমারির মোকাবিলা করছে, তা কিন্তু ব্রিটিশদেরই অবদান।

Advertisement
গেটি ইমেজ গেটি ইমেজ
হাইলাইটস
  • মহামারি কম দেখেনি বাংলা
  • মহিমারির মোকাবিলায় নাজেহাল ব্রিটিশ সরকার
  • ১৮৯৭ সালে মহামারি আইন চালু করেছিল

শরত্‍চন্দ্র চট্টোপাধ্যায় 'শ্রীকান্ত' উপন্যাসে লিখছেন, 'পরদিন বেলা এগার-বারটার মধ্যে জাহাজ রেঙ্গুন পৌঁছিবে; কিন্তু ভোর না হইতেই সমস্ত লোকের মুখচোখে একটা ভয় ও চাঞ্চল্যের চিহ্ন দেখা দিল। চারিদিক হইতে একটা অস্ফুট শব্দ কানে আসিতে লাগিল, কেরেন্টিন। খবর লইয়া জানিলাম, কথাটা quarantine: তখন প্লেগের ভয়ে বর্মা গভর্নমেন্ট অত্যন্ত সাবধান। শহর হইতে আট-দশ মাইল দূরে একটা চড়ায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়া খানিকটা স্থান ঘিরিয়া লইয়া অনেকগুলি কুঁড়েঘর তৈয়ারি করা হইয়াছে; ইহারই মধ্যে সমস্ত ডেকের যাত্রীদের নির্বিচারে নামাইয়া দেওয়া হয়। দশদিন বাস করার পর, তবে ইহারা শহরে প্রবেশ করিতে পায়।'

বাংলায় মহামারী -- গেটি ইমেজ
বাংলায় মহামারী -- গেটি ইমেজ

মহামারি কম দেখেনি বাংলা

বাংলা মহামারি কম দেখেনি। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সুরঞ্জন দাস এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অচিন্ত্য কুমার দত্তের গবেষণা বলছে, ওই সময়েও সংক্রমিত রোগীদের ঘরে থাকতে বলা হত আলাদা ভাবে। ১৮৬০ সাল নাগাদ এবং উনিশ শতকের শুরুতে কলেরার প্রকোপ ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। 

বাংলায় মহামারি

১৯১৯ সালে ৩৭ হাজার মানুষ স্মল পক্সে আক্রান্ত হন। এমনকী ভ্যাকসিন আসার পরেও বহু মানুষ সে কালে নিতে চাননি। মানুষের ভ্রান্ত ধারণা ছিল, ইঞ্জেকশনের মধ্যে দিয়ে বিষ-তরল ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে শরীরে। আজ যখন করোনা অতিমারি মোকাবিলা করতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, তখন ব্রিটিশ আমলে কী ভাবে মহামারির মোকাবিলা করত তত্‍কালীন সরকার, তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ থেকেই যাচ্ছে। বস্তুত, রাজ্য সরকার যে পদ্ধতিতে এখন করোনা অতিমারির মোকাবিলা করছে, তা কিন্তু ব্রিটিশদেরই অবদান। একসময় কলকাতায় পা রেখেই কলেরা, ম্যালেরিয়ার কোপে বহু ব্রিটিশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। 

Advertisement
বাংলায় মহামারি

মহামারি আইন

কী রকম? একের পর এক মহিমারির মোকাবিলায় নাজেহাল ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৭ সালে মহামারি আইন চালু করেছিল। প্লেগ, কলেরার মতো রোগে মহামারির মোকাবিলায় এই আইন প্রণয়ন করে ব্রিটিশরা। এর আইনের আওতায়, মহামারির মোকাবিলায় সাধারণ আইনে বলে দেওয়া কাজ নির্দিষ্ট ব্যক্তিরাই করতে পারেন। সরকার মনে করলে মহামারি রোগ আইনে যে কোনও ব্যক্তিকে দিয়ে আইন রক্ষা, প্রশাসনিক পরিদর্শন এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার দিতে পারে।

বম্বেতে প্লেগ মহামারির আকার ধারণ করার মাস চারেক পর রানি  ভিক্টোরিয়া সরকারকে মহামারি রুখতে কঠোর বন্দোবস্ত নেওয়ার নির্দেশ দেন। ১৮৯৭ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় পাশ হয় মহামারি আইন। এই আইনে বলা হল, যদি সরকার মনে করে যে দেশে মহামারিজনিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তখন তারা কোনও জাহাজ বন্দরে আসার ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করতে পারে। এই আইন অমান্যকারীদের ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮ ধারা অনুসারে সাজা দেওয়া যেতে পারে। জনগণ যেন সরকারের এই বিশেষ ক্ষমতাকে মেনে চলে।

বাংলায় মহামারি

আইন এনেও কি সেকালে মহামারি রুখতে পেরেছিল ব্রিটিশরা? প্রশ্নটা থেকেই যায়। এবং এ কালেও প্রাসঙ্গিক।

Advertisement