প্রতারকের পাল্লায় পড়ে এক লক্ষ টাকা খুইয়ে এমনিতেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন কলকাতার শরৎ বোস রোডের বাসিন্দা সুদীপ দে। এরপরই আচমকা তাঁর মোবাইলে আসা একটি এসএমএস দেখে চমকে ওঠেন সুদীপবাবু। এসএমএস-এ লেখা ছিল তাঁর এটিএম কার্ড ব্যবহার করে ২০০০ টাকার একটি চশমা কেনা হয়েছে রাসবিহারী এক দোকান থেকে। দ্রুত সেই চশমার দোকানে গিয়ে খোঁজখবর নিলে দোকানদার বলেন, "আপনার ছেলে তো একটু আগেই এসে চশমাটি নিয়ে গিয়েছে"। দোকানদারের কথা শুনে মাথায় হাত পড়ে সুদীপবাবুর। তবে ছেলের পরিচয় দিয়ে ওই দোকান থেকে চশমা কেনাটাই শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় প্রতারকের। যার সূত্র ধরে শনিবার রাতে টালিগঞ্জ থানার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে সৌভির বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি।
গত ২৮ অক্টোবর রাসবিহারী অ্যাভিনিউ এলাকায় একটি বেসরকারী ব্যাঙ্কের এটিএম-এ টাকা জমা করতে যান সুদীপ দে। ওই এটিএম কাউন্টারের ভিতরে আগে থেকেই উপস্থিত ছিল অপর এক ব্যক্তি। নিজেকে ব্যাঙ্ক কর্মী পরিচয় দিয়ে সুদীপবাবুকে সে বলে, কেওয়াইসি আপডেট না করা অবস্থায় টাকা জমা করলে এক থেকে দুই শতাংশ কেটে নেওয়া হচ্ছে। তাঁর অ্যাকাউন্টে কেওয়াইসি আপডেট করা আছে কিনা তাও জানতে চায় ওই ব্যক্তি। সুদীপবাবুর কাছে উত্তর না থাকায়, তাঁকে এটিএম মেশিনে কার্ডটি ব্যবহার করে বিষয়টি জেনে নিতে বলা হয়। এরপর সুদীপবাবু এটিএম মেশিনে কার্ডটি ব্যবহার করলে, সেই সুযোগে এটিএম-র পিন দেখে নেয় প্রতারক। ঠিক তারপরেই বিশেষ কৌশলে আগে থেকে নিজের হাতে থাকা বেশ কিছু কার্ডের মধ্যে থেকে একটি কার্ডের সঙ্গে সুদীপবাবুর কার্ডটি বদলে নেয় সে। যা সুদীপবাবু টেরও পাননি। এরপরই তাঁর কার্ড এবং এটিএম পিন ব্যবহার করে এক লক্ষ টাকা তুলে নেয় প্রতারক।
কার্ড হাতানোর পর রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে একটি চশমার দোকানে গিয়ে ২০০০ টাকার চশমা কেনে প্রতারক। চশমা কেনার পর দোকানদারকে প্রতারক বলেন, "আমার বাবা একটু পরে খোঁজ করতে এলে বলে দেবেন, তাঁর ছেলে চশমাটি নিয়ে গিয়েছে।" এদিকে ওই লেনদেনের জেরে ২০০০ টাকা খরচ হওয়ার এসএমএস পেয়েই দোকানে যান সুদীপ দে। তাঁকেও দোকানদার প্রতারকের বলা কথাই জানান। কিন্তু ওই দোকানে চশমা কেনাটাই কাল হয়ে দাঁড়ায় প্রতারকের। চশমার দোকানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ এবং এটিএম এর ভিতরের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে প্রতারকের সন্ধান পেয়ে যায় টলিগঞ্জ থানার পুলিশ। এরপর অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে ও গোপন সূত্র মারফত খবর পেয়ে শনিবার রাতে বিষ্ণুপুর থানা এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে অভিযুক্ত সৌভির বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। রবিবার তাকে আলিপুর আদালতে পেশ করা হলে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
পুলিশ সূত্রে খবর, অতীতেও একাধিক অপরাধের রেকর্ড রয়েছে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে। বহু বছর আগে একবার বিষ্ণুপুরেই একটি সোনার দোকানে হাত সাফাইয়ের পর আইনের কবল থেকে বাঁচতে, আদালতে হলফনামা দিয়ে নাম বদলে ফেলে সে। সেই সময় তার নতুন নাম হয় জয়দেব মণ্ডল। তার কয়েক বছরের মধ্যেই ভিন্ন ধর্মের এক মহিলাকে বিয়ে করে ফের একবার নিজের নাম বদল করে অভিযুক্ত।