এ যেন সর্ষের মধ্যেই ভূত! গ্রাহকের তথ্য জাল করে অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতানোর অভিযোগে রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের এক কর্মীকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। কলকাতার বাসিন্দা দেবাশীষ ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা হাতানোর অভিযোগে একটি রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের নয়াদিল্লি শাখায় কর্মরত অরুণ প্রতাপ নামে এক কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা সূত্রে খবর, এক সহকর্মীর এমপ্লই আইডি ব্যবহার করে ওই গ্রাহকের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য হাতে পায় অভিযুক্ত। তারপরেই টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করে সে।
পুলিশ সূত্রে খবর, চলতি বছরের মার্চ মাসে দেবাশীষ ভট্টাচার্য নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫ লক্ষ টাকা উধাও হয়ে গিয়েছে। তাঁর লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারণার মামলা শুরু করে শেক্সপিয়ার সরণি থানার পুলিশ। পরে এই মামলার তদন্তভার হাতে নেয় গোয়েন্দা বিভাগের ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। লালবাজার সূত্রে খবর, তদন্তে নেমে অ্যান্টি ব্যাঙ্ক ফ্রড সেকশনের তদন্তকারী আধিকারিকরা জানতে পারেন, টাকা হাতানোর কিছুদিন আগেই কলকাতার জীবনদীপ ব্রাঞ্চে গিয়ে দেবাশিসবাবুর রেজিস্টার্ড মোবাইল নাম্বারটি বদলানো হয়েছিল। তার জন্য দেবাশীষ ভট্টাচার্যের প্যান কার্ডও জমা দেওয়া হয় ব্যাঙ্কের নিয়ম মেনে। যদিও গ্রাহক জানান, তিনি কোনও প্যান কার্ড জমা দিয়ে মোবাইল নাম্বার বদলানোর আবেদনই করেননি! এতেই সন্দেহ হয় গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দা আধিকারিকরা আরও জানতে পারেন, ওই ব্যাঙ্কের নয়াদিল্লি শাখা থেকে অসংখ্যবার দেবাশিসবাবু অ্যাকাউন্টের অভ্যন্তরীণ তথ্য ঘেঁটে দেখা হয়েছে। যে ব্যাঙ্ক কর্মীর আইডি ব্যবহার করে লগ ইন করে দেবাশিসবাবু তথ্য দেখা হয়, তার সন্ধান পায় কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। এর পরেই জানা যায়, নয়াদিল্লি শাখার অরুণ প্রতাপ নামে ওই ব্যক্তি তারই এক সহকর্মীর এমপ্লই আইডি ব্যবহার করে একাধিকবার লগ-ইন করে দেবাশিসবাবু সম্পর্কে তথ্য নিয়েছে। গোয়েন্দাদের আতসকাঁচের তলায় এসে যায় অরুণ প্রতাপ নামে ওই ব্যাঙ্ক কর্মীর গতিবিধি। ইতিমধ্যেই জীবনদীপ শাখার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা যায়, যে ব্যক্তি দেবশিস ভট্টাচার্যের নামে প্যান কার্ড জমা দিয়ে মোবাইল নম্বর বদলাতে এসেছিল, তার সঙ্গে হুবহু মিলে রয়েছে নয়াদিল্লির শাখার কর্মী অরুণ প্রতাপের। তারপরেই নয়াদিল্লিতে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় অরুণ প্রতাপকে। ধৃত ব্যক্তি আদতে উত্তর প্রদেশের আম্বেদকর নগরের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে নয়াদিল্লির পশ্চিম সাগরপুরের দয়াল পার্কে থাকে বলে জানা যাচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দেবাশীষবাবুর টাকা হাতাতে প্রথমেই তাঁর নামে একটি ভুয়া জাল প্যান কার্ড বানানো হয়। এরপর সেই প্যান কার্ড জীবনদীপ শাখায় জমা দিয়ে দেবাশীষবাবুর নাম করে তাঁর অ্যাকাউন্টের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বার বদলানোর আবেদন জানায় অরুণ প্রতাপ। শুধু তাই নয়, ওই অ্যাকাউন্টে নেট ব্যাঙ্কিং চালু করার আবেদনও জানান হয়। এরপরই দেবাশীষবাবুর অ্যাকাউন্টে জমা থাকা ফিক্সড ডিপোজিটের ৪৫ লক্ষ টাকা তুলে নেয় অভিযুক্ত। ফিক্সড ডিপোজিটের টাকা তোলার আগে দেবাশীষবাবুর অ্যাকাউন্টের রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর বদলে ফেলায়, কোনও অ্যালার্ট মেসেজ পাননি তিনি।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, জেরার মুখে ধৃত ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছে, ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৫ লক্ষ টাকার তোলার পর কলকাতার একাধিক গহনার দোকানে ঘুরে ঘুরে অসংখ্য গহনা কিনেছে সে। তারপরেই নয়াদিল্লিতে চম্পট দেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নয়াদিল্লি ক্যান্টনমেন্টের গোপীনাথ বাজারের কাছ থেকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। তাকে আদালতে তোলা হলে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিচারক। নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন গোয়েন্দারা। অভিযুক্ত ব্যক্তি এর আগে অন্য কারও অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়েছে কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।