কেরলের ওয়েনাডে প্রবল বর্ষণে ভূমিধস। এখনও পর্যন্ত ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত শতাধিক। উদ্ধারকার্য শুরু হয়েছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়।
ওয়েনাডের বহু জায়গাতে ধসে গেছে রাস্তা, মাটির নিচে চাপা পড়েছে বাড়ি, দোকান। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে ত্রাণের কাজ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীও হাত লাগিয়েছে উদ্ধারকার্যে।
ওয়েনাডের ভয়াবহ ছবি সামনে এসেছে। সেই ছবি থেকেই স্পষ্ট কতটা ভয়াবাহ সেখানকার অবস্থা। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একের পর এক মৃতদেহ কীভাবে বের করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা থেকে শুরু করে সমস্ত কংগ্রেস এবং বাম নেতারা এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
ওয়ানাডে ভূমিধসের কারণে যাঁরা প্রাণ হারিয়েছেন তাঁদের পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ত্রাণ তহবিল থেকে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা করা হয়েছে।
কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নও জানিয়েছেন, ওয়েনাডে উদ্ধারকার্য দ্রুত গতিতে চলছে। সমস্ত সংস্থা উদ্ধারে একসঙ্গে কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, প্রধানমন্ত্রী নিজে সকাল থেকেই ওয়ানাডের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন। কেরালের বিজেপি রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন, যিনি ওয়েনাড থেকে বিজেপি প্রার্থী ছিলেন, অবিলম্বে ঘটনাস্থলে যান।
নিহত ও আহতদের মধ্যে কয়েকজন শিশুও রয়েছে। এলাকার সিএমওর মতে, ভারী বৃষ্টির পর ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন এখানে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করেছে।
জরুরি সহায়তার জন্য হেল্পলাইন নম্বর 9656938689 এবং 8086010833 জারি করা হয়েছে। উদ্ধারকার্যের জন্য হেলিকপ্টারও রাখা রয়েছে সেখানে।
ওয়েনাড চুরামালায় উদ্ধার অভিযানে ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ, সিভিল ডিফেন্স, এনডিআরএফ এবং স্থানীয় জরুরি প্রতিক্রিয়া দলের ২৫০ সদস্য জড়িত। এনডিআরএফ-এর অতিরিক্ত দলকে অবিলম্বে ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকার ৫টি জেলায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে।
ভূমিধসের পরে, সিএমও একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে ভূমিধসের পরিপ্রেক্ষিতে, থামরাসেরি পাস দিয়ে প্রয়োজনীয় যানবাহন ছাড়া অন্য যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ২০২১ সালের সমীক্ষা অনুসারে, কেরালের সমগ্র এলাকার ৪৩ শতাংশ ভূমিধস প্রবণ এলাকা। ইদুক্কির ৭৪ শতাংশ জমি এবং ওয়েনাডের ৫১ শতাংশ জমি পাহাড়ি ঢাল। তার মানে ভূমিধসের সম্ভাবনা খুবই বেশি। তার উপরে বর্ষাকালে ভয়ানক বৃষ্টি হয়।
কেরলের সবচেয়ে ঢালু এলাকাটি পশ্চিমঘাটে ১৮৪৮ বর্গ কিলোমিটার। অর্থাৎ ওয়েনাড, কোঝিকোড়, মাল্লাপুরম, ইদুক্কি, কোট্টায়ম এবং পাথানামথিট্টা জেলা। এসব জেলায় সবচেয়ে বেশি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে।
কেরালার আটটি জেলায় ২০১৯ সালে ৮০ টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। মাত্র তিন দিনে। এতে ১২০ জন নিহত হয়। ২০১৮ সালে, দশটি জেলায় ৩৪১ বড় ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। শুধুমাত্র ইদুক্কিতে ১৪৩টি ভূমিধস। ১০৪ জন মারা গিয়েছিল।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর আর্থ স্টাডিজ একটি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করেছিল। প্রায় এক দশক আগের কথা। তখন এলাকাটি নিরাপদ ছিল। তবে এখন সেই এলাকা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।