২০১৯ সালের শেষে ভারতীয় সেনা প্রধানের পদ থেকে অবসর নেন বিপিন রাওয়াত। তার জায়গায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৮তম প্রধান হন মনোজ মুকুন্দ নারাভানে। তবে সেনা প্রধানের পদ থেকে অবসর নিলেও ভারত সরকার তাঁকে চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (CDS) বা প্রতিরক্ষা প্রধান নিয়োগ করে। রাওয়াতই ছিলেন দেশের প্রথম সিডিএস। বর্তমানে সামরিক বিষয়ে সরকারের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করতেন রাওয়াত। পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনী, ভারতীয় বায়ুসেনা এবং ভারতীয় নৌবাহিনীর মধ্যে আরও ভাল সমন্বয় সাধনের দায়িত্বও ছিল তাঁর ওপর।
২০১৬ এর ৩১ ডিসেম্বর জেনারেল দলবীর সিং সোহাগের থেকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রাওয়াত। তিনি ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২৬তম সেনাপ্রধান। বিপিনের জন্ম ভারতের উত্তরখণ্ড পৌরি গাড়ওয়াল জেলায় ১৯৫৮ সালে। সেনা পরিবারের সন্তান রাওয়াতের বাবা লক্ষ্মণ সিং রাওয়াওত ছিলেন সেনাবাহিনীর জেনারেল।
বিপিন রাওয়াতের ছোটেবলা
বিপিন রাওয়াত ১৯৫৮ সালের ১৬ মার্চ দেরাদুনে জন্মগ্রহণ করেন। বিপিন রাওয়াতের বাবা এলএস রাওয়াতও সেনাবাহিনীতে ছিলেন এবং লেফটেন্যান্ট জেনারেল এলএস রাওয়াত নামে পরিচিত ছিলেন। তার শৈশব কেটেছে সৈন্যদের মধ্যে এবং তার প্রাথমিক শিক্ষা হয়েছিল সিমলার সেন্ট এডওয়ার্ড স্কুলে। এরপর তিনি ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হন এবং দেরাদুনে চলে যান। এখানে তার পারফরম্যান্স দেখে, তাঁকে SWORD OF NOUR দিয়ে ভূষিত করা হয়েছিল। তারপরে তিনি আমেরিকা চলে যান উচ্চশিক্ষার জন্য, যেখানে তিনি সার্ভিস স্টাফ কলেজে স্নাতক হন। একই সঙ্গে হাইকমান্ড কোর্সও করেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিলেন বিপিন রাওয়াত
বিপিন রাওয়াত আমেরিকা থেকে ফিরে আসেন এবং তার পরে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার মনস্থির করেন। ১৯৭৮সালের ১৬ ডিসেম্বর তিনি তার প্রচেষ্টায় সাফল্য পান। তিনি গোর্খা ১১ রাইফেলসের ৫ম ব্যাটালিয়নে নিযুক্ত হন। এখান থেকেই তার সামরিক যাত্রা শুরু হয়। বিপিন রাওয়াত একবার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে তাঁর জীবনে তিনি গোর্খায় থাকতে যা শিখিয়েছিলেন তা তিনি অন্য কোথাও শেখার সুযোগ পাননি। এখানে তিনি সেনাবাহিনীর নীতি বুঝেছেন এবং নীতি প্রণয়নে কাজ করেছেন। গোর্খাতে থাকাকালীন, তিনি Crops , GOC-C , SOUTHERN COMMAND, IMA DEHRADUN , MILLTERY OPREATIONS DIRECTORET-এ LOGISTICS STAFF OFFICER পদেও কাজ করেছিলেন।
বিপিন রাওয়াত শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সেবা দিয়েছেন। তিনি কঙ্গোর রাষ্ট্রসংঘ মিশনে অংশ নেন এবং একই সাথে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সেবা প্রদানের সুযোগ পান। এখানে তিনি ৭০০০ মানুষের জীবন বাঁচিয়েছিলেন। সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন বিপিন রাওয়াত অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন।
রাওয়াতের ব্যক্তিগত জীবন
তার বাবা সেনাবাহিনীর একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন। তার স্ত্রী মধুলিকা একজন সমাজকর্মী, যিনি বেশিরভাগ ক্যান্সার রোগীদের জন্য কাজ করতেন। ১৯৭৯ সালে মিজোরামে প্রথম পোস্টিং করা হয়েছিল রাওয়াতের। ব্যাটালিয়নে যোগদানের পর তিনি অনেক যুদ্ধ মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মিলিটারি অপারেশনস ডিরেক্টরেটের জেনারেল স্টাফ অফিসার গ্রেড ২, কর্নেল মিলিটারি সেক্রেটারি, ডেপুটি মিলিটারি সেক্রেটারি, জুনিয়র কমান্ড উইংয়ে সিনিয়র ইন্সট্রাক্টরের মতো বিভিন্ন পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। তিনি কাশ্মীর উপত্যকায় প্রথম জাতীয় রাইফেলে ব্রিগেডিয়ার হন। পরে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে পদাতিক ডিভিশনের কমান্ড করেন। তিনি চীন সীমান্তে কর্নেল হিসেবে পদাতিক ব্যাটালিয়নের কমান্ড গ্রহণ করেন। তিনি দেরাদুন ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতেও পদে ছিলেন। তিনি সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থী কার্যকলাপ মোকাবেলা করার জন্য অনেক অপারেশন পরিচালনা করেছিলেন, যার কারণে তাকে বিদ্রোহ বিরোধী বিশেষজ্ঞ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ২০০৮ সালে কঙ্গোতে রাষ্ট্রসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে ভারতীয় ব্রিগেডের প্রধান হিসাবে তাঁর নেতৃত্ব অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল। তিনি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬ সালে সেনাপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অতি বিশেষ সেবা পদক, যুদ্ধ সেবা পদক, সেনা পদক এবং বিশেষ সেবা পদক পেয়েছেন। রাষ্ট্রসংঘের সাথে কাজ করার সময় দুইবার ফোর্স কমান্ডারের প্রশংসায় ভূষিত হয়েছেন।