চিনে (China) ক্রমাগত বেড়েই চলেছে করোনা (Covid) ভাইরাসের সংক্রমণ। এই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতেও করোনার ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। করোনার বাড়বাড়ন্ত দেখে তৎপর ভারত সরকার। সম্প্রতি ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি বৈঠক ডেকেছিল, যাতে করোনা সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মঙ্গলবার, অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস (AIIMS) এর প্রাক্তন ডিরেক্টর রণদীপ গুলেরিয়া জানিয়েছেন, চিনে কোভিড -১৯ এর কেস দ্রুত বাড়ছে। তবে ভারতে ব্যপক হারে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তাই চিনের মতো পরিস্থিতি এখানে হওয়ার সম্ভাবনা কম।
রণদীপ গুলেরিয়া বর্তমানে ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারনাল মেডিসিন অ্যান্ড রেসপিরেটরি অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিনের চেয়ারম্যান এবং গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালের পরিচালক। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে ভারতে করোনার পরীক্ষা কমেছে। শীতের মরসুমে সর্দি বা জ্বরের জন্য পরীক্ষা করলে মিউটেশন জানা যাবে।
চিকিৎসক বলেছেন, করোনার বিরুদ্ধে ভারতীয়দের রোগ প্রতিরোধ শক্তি রীতিমতো জোরদার। তাই এখনই খুব আতঙ্কের কিছু নেই। তবে সাবধান থাকতেই হবে। তাঁর কথায়, করোনা অতিমারি শুরুর পরে তিন বছর কাটতে চলেছে। এর মধ্যে বহু মানুষই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁদের করোনা সেরে গিয়েছে। ফলে তাঁদের প্রাকৃতিক উপায়েই রোগ প্রতিরোধ শক্তি তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া তাঁদের অনেকেরই এর মধ্যে করোনার টিকাও নেওয়া হয়ে গিয়েছে। ফলে করোনা এখন আর আগের মতো ভয়াবহ হয়ে ওঠার আশঙ্কা খুব একটা নেই। এমনই মনে করছেন তিনি।
আল্ফা, বিটা, ডেল্টা এবং ওমিক্রন— করোনার নানা ধরনের রূপ ইতিমধ্যেই ভারতের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে করোনা নিজের রূপ আবারও বদলেছে। এবং উপসর্গগুলি এখন আগের চেয়ে অনেকটা কম প্রভাব ফেলার মতো হয়েছে। এমনই বলছেন তিনি।
আরও পড়ুন-হাঁচি-মাথাব্যথা ছাড়াও ১৬ উপসর্গ, COVID-এর নয়া ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত কীভাবে বোঝা যাবে?
তবে এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং সে সম্পর্কে সচেতন থাকারও পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি। বলেছেন, এই পরিস্থিতিতে সাবধান থাকাটা দরকার। হালে কেন্দ্রের তরফেও নতুন করে করোনা মোকাবিলার জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে। সেটিও দরকারি বলে মত তাঁর।
করোনা মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতে লকডাউন জারি করা হয়েছিল যাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। লকডাউন মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে সাহায্য করেছে এবং আমাদের প্রস্তুতির জন্য আরও সময় দিয়েছে। এই সময়ে, আমরা রোগীদের পরিচালনার জন্য পরিকাঠামো পরিবর্তন, পুনর্গঠন ইত্যাদি কাজ করেছি। এসব কারণে পশ্চিমা দেশগুলোর তুলনায় আমরা ভালো কাজ করেছি।
তিনি বলেন, এই মহামারীটি যখন এসেছিল, তখন এই ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের জনগণের কোনো প্রতিরোধ ক্ষমতা ছিল না, যার কারণে কিছু লোককে এই সময়ে মারাত্মক সংক্রমণের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। কিন্তু এখন, করোনা মহামারীর প্রায় ৩ বছর হয়ে গেছে, এবং এখন আমরা এমন পরিস্থিতিতে আছি যে এই সময়ের মধ্যে আমাদের সংক্রমণের মুখোমুখি হতে হবে। মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটাই শক্তিশালী হয়েছে যে নতুন কোনো ভাইরাস আমাদেরকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে না। তবে তা সত্ত্বেও আমাদের চীনে দ্রুত বর্ধনশীল করোনা ভাইরাসের BF.7 ভেরিয়েন্টের দিকে মনোযোগ দিতে হবে এবং এটি সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। আমরা জানি না আগামী সময়ে ভাইরাসটি কেমন আচরণ করবে। এই ভাইরাসটি এখন আগের চেয়ে কম বিপজ্জনক এবং স্থিতিশীল দেখাচ্ছে, তবে চীনে করোনার কারণে হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর দিকে আমাদের কড়া নজর রাখতে হবে।
করোনা মহামারীর পর থেকে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে, তাই আমাদের এই পরিবর্তনগুলি সম্পর্কে নতুন ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং প্রতিটি পরিস্থিতির সাথে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত করা গুরুত্বপূর্ণ।
আরও পড়ুন-COVID-এর নয়া ভ্যারিয়েন্ট ঢুকে পড়েছে ভারতেও, আজ হাই-লেভেল মিটিং মোদীর