আজ, শ্রী কৃষ্ণের জন্মবার্ষিকী জন্মাষ্টমী উৎসব পালিত হচ্ছে। এই বিশেষ দিনে ভগবান শ্রী কৃষ্ণের শিশুরূপের পূজার রীতি ব্যাখ্যা করা হয়েছে। শ্রী কৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে বিশ্বকে গীতা প্রচার করেছিলেন। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রী কৃষ্ণ গীতার পবিত্র বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আজও গীতার আলোয় ভারত-সহ সারা বিশ্বের মানুষ তাদের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন।
গীতার গুরুত্ব অপরিসীম। একজন ব্যক্তি যদি গীতার ৭০০টি শ্লোকের একটিরও প্রকৃত অর্থ বুঝতে পারে তবে তার জীবনের যাত্রা সফল হবে। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৬২তম ও ৬৩তম শ্লোকে শ্রী কৃষ্ণ রাগ ও এর প্রভাব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন।
শ্লোক: ধ্যাতো বিশ্বাঁপুঁসঃ সংগস্তেশূপজায়তে।
সংগতসঞ্জয়তে কামঃ কামতক্রোধবিজয়তে।
ক্রোধাদ্ভবতি সমোহাঃ সমোহাতস্মৃতিভ্রমঃ।
স্মৃতিভ্রমশদ্বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশতপ্রণাশ্যতি ॥
অর্থ: এই শ্লোকের মাধ্যমে শ্রী কৃষ্ণ মনের মধ্যে উদ্ভূত ব্যাধি ও কষ্টের উৎপত্তি ও ক্রমান্বয়ে বিকাশের বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে আমরা যদি কোনো বিষয়ে অবিরত চিন্তা করি, তা আমাদের মানসিক অবস্থার প্রভাবিত করে। এই চিন্তা আমাদের কামনা বৃদ্ধি করে এবং অতৃপ্ত কামনা রাগের জন্ম দেয়। রাগ আমাদের সংযুক্তি সৃষ্টি করে এবং সংযুক্তির ফলে স্মৃতিভ্রম হয়। স্মৃতিভ্রম হলে বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হয়, এবং বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হলে আমরা ধ্বংস হয়ে যাই।
সমাধান: ভগবান গীতায় এর সমাধানও দিয়েছেন। গীতার ৯তম অধ্যায়ের ২২ নম্বর শ্লোকে শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন: যারা ভক্তি সহকারে আমাকে চিন্তা করেন এবং আমার আরাধনা করেন, আমি তাদের যোগ ও কল্যাণের যত্ন নিই। এখানে যোগ মানে পূর্বজন্মের সৎকর্মের সমন্বয় এবং কল্যাণ মানে দক্ষতা।
১৮ তম অধ্যায়ের ৬৬ তম শ্লোকে কৃষ্ণ মুক্তির নিশ্চিত পথের কথা বলেছেন:
সর্বধর্মানপরিত্যজ্য মামেকাম শরণম্ ব্রজ।
অহম্ ত্বা সর্বপাপ্যভ্যো মোক্ষয়িষ্যামি মা শুচঃ।
অর্থাৎ, সকল ধর্ম ত্যাগ করে আমার কাছে এসো, আমি তোমাকে সকল পাপ থেকে মুক্ত করে মুক্তি প্রদান করব।
ভগবান শ্রী কৃষ্ণের এই শিক্ষা মানব জীবনের উন্নতির গভীর উপাদান নিয়ে গঠিত। আমরা যদি এই লক্ষণগুলো বুঝতে পারি এবং আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে শুরু করি, তবে এটি কেবল আমাদের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের জন্য উপকারী হবে।