হিন্দু ধর্মে বিভিন্ন তিথিতে মা কালীর (Goddess Kali) বিভিন্ন রূপের পুজো করা হয়। দেবীর আরাধনা সর্বজনবিদিত। পশ্চিমবঙ্গের প্রসিদ্ধ কালী মন্দিরগুলির (Kali Mandir) মধ্যে অন্যতম ঠনঠনিয়া কালী বাড়ি (Thanthania Kalibari)। উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রীট মোড় থেকে একটু দূরে বিধান সরণিতে অবস্থিত। জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে শোনা যেত, কালী মন্দিরের ঘন্টাধ্বনি। শোনা যায়, সেই ঠনঠন আওয়াজ থেকেই এলাকার নাম ঠনঠনিয়া। এখানে কালীর পুজো হয় সিদ্ধেশ্বরী রূপে। এই কালী বাড়ির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা কাহিনি।
জনশ্রুতি অনুসারে, জঙ্গল অধ্যুষিত সুতানুটি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে ভাগীরথী। নদীর পাশে অরণ্যবেষ্টিত এক শ্মশানে উদনারায়ণ ব্রহ্মচারী নামে এক তান্ত্রিক আনুমানিক ১৭০৩ খ্রিষ্টাব্দে, মাটি দিয়ে মা কালীর এই সিদ্ধেশ্বরী রূপের মূর্তি গড়েন। ১৮৬০ সালে জনৈক শঙ্কর ঘোষ, বর্তমান কালী মন্দির ও পুষ্পেশ্বর শিবের আটচালা মন্দির নির্মাণ করেন। সেই থেকেই প্রচলন হয় নিত্য পুজোর। শঙ্কর ঘোষ পুজোর ভারও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। তাঁর পরবর্তী বংশধরেরাই বংশানুক্রমে এখনও এই মন্দিরের সেবায়েত।
ঠনঠনিয়া কালী বাড়িতে মায়ের মূর্তি
ঠনঠনিয়া কালী বাড়িতে মায়ের মূর্তি মাটির এবং প্রতি বছর মূর্তি সংস্কার করা হয়। পূর্ণ তান্ত্রিক মতে দেবীর পুজো হয়। সিদ্ধেশ্বরী চতুর্ভুজা ও ঘোর কৃষ্ণবর্ণা। বাম দিকের দুই হাতে শভা পায় খড়্গ এবং নরকপাল। অন্যদিকে তাঁর ডান হাতে অভয় ও বরদা মুদ্রা। সোনার গয়না কিছু থাকলেও, মূলত রুপোর গয়নাতেই সজ্জিতা হন দেবী।
জ্যৈষ্ঠ মাসে ফলহারিণীর পুজো, কার্তিক অমবস্যায় আদিকালীর পুজো ও মাঘ মাসে রটন্তী কালীর পুজো হয়। কার্তিক অমাবস্যায় অর্থাৎ কালী পুজোর দিনে মহাসমারোহে পূজিত হন দেবী সিদ্ধেশ্বরী। প্রতি অমাবস্যা তিথিতে মূলত ভক্তদের ঢল নামলেও, প্রায় সারা বছরই মন্দিরে পুণ্যার্থীদের আগমন ঘটে। মনে করা হয়, দেবীর কাছে সকল মানত পূর্ণ হয় বলেই, তাঁর নাম সিদ্ধেশ্বরী।
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির গল্প
শোনা যায়, কামারপুকুর থেকে এসে মন্দিরের অদূরে ঝামাপুকুরে তখন থাকতেন গদাধর চট্টোপাধ্যায় (রামকৃষ্ণদেব)। মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবী গান শুনেছেন কিশোর গদাধরের কণ্ঠে। দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে গদাধর থেকে শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস হওয়ার পরেও তিনি নাকি, বারবার দর্শন করতে এসেছেন ঠনঠনিয়া কালীকে। সাধক কবি রামপ্রসাদ সেনও গান শুনিয়েছেন সিদ্ধেশ্বরী কালীমাতাকে।
রামকৃষ্ণদেব তাঁর ভক্তদের বলতেন ঠনঠনিয়ার কালী বড় জাগ্রত। তিনি ব্রহ্মানন্দ কেশব চন্দ্র সেনের আরোগ্য কামনায় এখানে ডাব-চিনির নৈবেদ্য দিয়ে পুজোও দিয়েছিলেন। পরমহংসদেব অসুস্থ শরীরে শ্যামপুকুরে থাকাকালীনও, এই মন্দিরে ঠাকুরের আরোগ্য কামনায় তাঁর ভক্তেরা পুজো দিয়েছিল বলে শোনা যায়।
কবে- কখন খোলা থাকে?
ঠনঠনিয়া কালীবাড়ি সপ্তাহে ৭ দিনই খোলা থাকে। ভক্তরা যে কোনও দিন সকাল ৬টা থেকে ১১টা এবং বেলা ৩টে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মন্দির দর্শন করতে পারেন।
দুর্গাপুজো শেষ হওয়ার পরেই শুরু হয়ে যায় দীপাবলির (Deepawali) কাউন্ট ডাউন। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা তিথিতে হয় কালী পুজো (Kali Puja) বা শ্যামা পুজো (Shyama Puja)। দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে, প্রায় মাস খানেক আগে থেকে শুরু হয় কালী পুজোর প্রস্তুতি। শ্যামা মায়ের আরাধনায় যাতে কোনও ত্রুটি না থাকে, তাই তার চেষ্টা চলে জোড়কদমে।
কালীপুজো ২০২৪ -এর নির্ঘণ্ট (Kali Puja 2024 Date- Time)
* কালীপুজোর তারিখ - ৩১ অক্টোবর (১৪ কার্তিক), বৃহস্পতিবার।
* অমাবস্যা তিথি - ৩১ অক্টোবর, ঘ ৩/৭/৪২ থেকে ১ নভেম্বর সন্ধ্যা ৫/৮/৭ মিনিট পর্যন্ত অমাবস্যা তিথি থাকবে।