Jagannath Rath Yatra 2023: ভারত একটি বৈচিত্র্যমর দেশ এবং এখানে প্রতিটি অঞ্চলে বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব হল জগন্নাথের রথযাত্রা যা প্রতি বছর ওড়িশার পুরীতে বের হয়। জগন্নাথ রথযাত্রা একটি ধর্মীয় শোভাযাত্রা এবং এতে অংশ নিতে শুধু দেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা অংশগ্রহণ করেন। জগন্নাথ রথযাত্রা রথ মহোৎসব বা দশাবতার নামেও পরিচিত। প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে এই রথযাত্রার আয়োজন করা হয়। এই সময় ভগবান কৃষ্ণ তার ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সঙ্গে শহর ভ্রমণে যান। আসুন জেনে নেওয়া যাক কবে এই বছর জগন্নাথ রথযাত্রা কবে পালিত হবে এবং হিন্দু ধর্মে এর গুরুত্ব?
জগন্নাথের রথযাত্রা ২০২৩-এর তারিখ এবং সময়
প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে এই যাত্রা বের হয়। যা এই বছর ১৯ জুন সকাল ১১:২৫ মিনিটে শুরু হবে এবং ২০ জুন দুপুর ১:০৭ মিনিটে শেষ হবে। উদয়তিথি অনুসারে, ২০ জুন ২০২৩ তারিখে রথযাত্রা উৎসব পালিত হবে। আর যাত্রা শেষ হবে ২১শে জুন। প্রতিবছর দেশ ও বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই যাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।
জগন্নাথ রথযাত্রার গুরুত্ব
হিন্দু ধর্মে জগন্নাথের রথযাত্রাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ধর্মীয় গ্রন্থেও এর উল্লেখ রয়েছে। আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় দিনে জগন্নাথ রথযাত্রা বের হয়। যা পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে বিখ্যাত গুন্ডিচা মাতার মন্দিরে যায়। এখানে প্রভু ৭ দিন বিশ্রাম করেন এবং তারপরে তার আবাসে ফিরে যান। জগন্নাথ যাত্রায় ভগবান কৃষ্ণের সঙ্গে তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন সুভদ্রার সঙ্গে থাকেন। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, ওড়িশার পুরী ক্ষেত্র ভগবান কৃষ্ণের মাসির বাড়ি এবং তিন ভাই-বোনই এখানে তাদের মাসির বাড়িতে বেড়াতে আসেন।
জগন্নাথ রথযাত্রারও জ্যোতিষশাস্ত্রে তাৎপর্য রয়েছে এবং জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে যাত্রা শুরুর দিন সূর্য কর্কট রাশিতে প্রবেশ করে। এরপর ভারতে বর্ষা আসে। এই রথযাত্রা বর্ষা ঋতুর প্রতীক এবং এই যাত্রা একজন ব্যক্তির জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
এ ছাড়া জগন্নাথ রথযাত্রা বৃহস্পতি অর্থাৎ গুরুর সঙ্গেও সম্পর্কিত। জ্যোতিষশাস্ত্রে গুরুকে জ্ঞান ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। এই যাত্রায় ভগবান ভবন থেকে বের হন এবং লাখো মানুষের ভিড় জমে তার দর্শন লাভের জন্য। কথিত আছে যে এই রথযাত্রা বৃহস্পতি গ্রহের গতিবিধিরও প্রতিনিধিত্ব করে।
পাঁচ হাজার বছরের পুরনো রথযাত্রার বিশ্বাস
পুরী জগন্নাথ মন্দিরে রথযাত্রার ঐতিহ্য পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো। ঐতিহ্যগতভাবে ওড়িশার পুরীতে প্রতি বছর রথযাত্রা উৎসব পালিত হয়। এই উৎসবে ভগবান জগন্নাথকে তাঁর ভাই বলভদ্র এবং বোন দেবী সুভদ্রার সঙ্গে পূজা করা হয়। রথযাত্রার একটি আধ্যাত্মিক তাৎপর্যও রয়েছে – যার কথা উপনিষদে গভীরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি মানবদেহকে রথ হিসাবে এবং এর সারথিকে (চালক) ভগবান হিসাবে বর্ণনা করে, যিনি ভবসাগরের (বস্তুগত অস্তিত্ব) থেকে বের করার জন্য রথকে চালিত করেন।
কবে থেকে রথ তৈরি হয়?
রথযাত্রায় ব্যবহৃত রথ প্রতি বছরই তৈরি করা হয়। অক্ষয় তৃতীয়ার দিনে রথ নির্মাণ শুরু হয়। রথগুলি উজ্জ্বল রঙে আঁকা হয় এবং শীর্ষগুলি লাল, কালো, হলুদ বা সবুজ রঙের ছাতা দিয়ে আবৃত। ভগবান জগন্নাথ লাল এবং হলুদ ব্যবহার করেন, ভগবান বলরাম লাল এবং সবুজ ব্যবহার করেন, আর সুভদ্রা লাল এবং কালো ব্যবহার করেন।
ভগবান জগন্নাথের রথ কেমন হয়
ভগবান জগন্নাথের রথকে চক্রধ্বজ বা নন্দীঘোষ বলা হয়, যার অর্থ কোলাহলপূর্ণ এবং আনন্দময় ধ্বনি। ১৬টি চাকা ব্যবহার করা হয়, এটি প্রায় ৪৫ ফুট লম্বা এবং ৬৫ টন ওজনের। এটির চূড়ায় গরুড়ের একটি মূর্তি রয়েছে এবং চারটি সাদা কাঠের ঘোড়া দ্বারা টানা হয়েছে।
বলরামের রথে বিশেষ কী আছে
বলরামের রথকে তালধ্বজা বলা হয়, যার অর্থ শক্তিশালী ছন্দের ধ্বনি। এটিতে ১৪ টি চাকা রয়েছে এবং চারটি কালো কাঠের ঘোড়া দ্বারা টানা হয়। এখানে হনুমানকে শিখরে বসানো হয়েছে।
সুভদ্রার রথকে কী বলা হয়?
সুভদ্রার রথকে পদ্মধ্বজ বা দর্পদলান বলা হয়, যার অর্থ অহংকার ধ্বংসকারী। এটির চূড়ায় একটি পদ্ম রয়েছে, ১২টি চাকা রয়েছে এবং চারটি লাল কাঠের ঘোড়া দ্বারা টানা হয়েছে। যাত্রা চলাকালীন ভগবান বলভদ্রকে সবার প্রথমে, তারপর দেবী সুভদ্রা এবং অবশেষে ভগবান জগন্নাথকে মন্দির থেকে বের করে আনা হয়।
Disclaimer: এখানে দেওয়া সমস্ত তথ্য সামাজিক এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। আজতক বাংলা এটা নিশ্চিত করে না। এ জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।