লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে আবারও সরকার গড়ার পথে এনডিএ। তেলেগু দিশম পার্টি, জেডিইউ-সহ বেশ কয়েকটি দলের সমর্থন নিয়ে আবারও কেন্দ্রে সরকার গড়তে চলেছে বিজেপি। আবারও প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন নরেন্দ্র মোদী। একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়াতে সহযোগী দলগুলিতে বেশি সুবিধা দিতে হবে বিজেপিকে। স্পিকার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পদ দিতে হতে পারে। আর এই বিষয়ে নিজের মত প্রকাশ করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ। মোদীর কাছে নীতীশ-চন্দ্রবাবুদের দাবিদাওয়া নিয়ে দিলীপের কটাক্ষ, 'হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙেও লাথি মারে।'
বৃহস্পতিবার সকালে নিউটাউন ইকোপার্কে মর্নিং ওয়াকের পরে দিলীপ ঘোষ বলেন, 'হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙ লাথি মারে। হাতি তো কাদায় পড়ে গেছে। তবে মোদী শাহ জুটি আছেন। আর এরা পুরনো পার্টনার। চিনি এদের। একটু বেশি দর হাঁকছেন। মানুষ ম্যান্ডেট দিয়েছে। সুশাসন দিতেই হবে। সেটা যেন কেউ ভুলে না যায়। আঞ্চলিক দল সবসময় নিজের কথা ভাবে। অনেকে আগে নিজের স্বার্থেই জোট ছেড়েছে, আবার নিজেই ফিরে এসেছে। মোদী ভোটের জন্য রাজনীতি করেন না। তিনি উন্নয়নের জন্য সরকার চালান। উনি একটা রোড ম্যাপ তৈরি করেছিলেন। আমার মনে হয় না এই সব ঘটনায় ওই কাজে খুব বাধা আসবে। কারণ দেশের আর্থিক স্থিতি ভাল। পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা গত মাসে জিএসটি কালেকশন হয়েছে। টাকার অভাব নেই। ইচ্ছার অভাব নেই। যারা এগুলোতে বাধা দেবেন তাঁদের নিজের এলাকায় গিয়ে জবাব দিতে হবে। ২০০৪ সালের কথা মনে আছে। বাজপেয়ীর সঙ্গে যারা বেশি দর কষাকষি করেছিলেন তাঁরা পরে সাপ হয়ে গেছেন। তাঁর মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পার্টি ছিল।'
কর্মীদের মনোবল আবার চাঙ্গা করা যাবে?
দিলীপ বলেন, 'ভোট এলেই এই রাজ্যে এই জিনিস হয়। যারা বিজেপি করেন, তাঁরা এটা জেনেই বিজেপি করেন। প্রায় দশ বছর ধরে এটাই চলে আসছে। পুলিশের ওপর আর কেউ ভরসা করে না। তা সত্ত্বেও দলীয় কর্মীরা পার্টির সঙ্গেই আছেন। ১৯ তারিখ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী আছে। আমি সব জেলায় যাব। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলব। আজ থেকেই আমি এই কাজ শুরু করছি। আগেও করেছি। এখনও করব। আগে সরকার গঠন হোক। পরিস্থিতি পর্যালোচনা হোক।'
এবার আপনি কী করবেন?
দিলীপ বলেন,'আমাকে মেদিনীপুর থেকে ওরা ফোন করেছিল। ওদের মন খারাপ। ভেবেছিল আমি জিতে যাব। আমি যাব ওখানে। বর্ধমানও যাব। ওখানেও কর্মীরা আক্রান্ত। আমি রাজ্য সভাপতি থাকার সময় পুরো রাজ্যে ঘুরতাম। দল আমাকে সেই দায়িত্ব দিক বা না দিক, আমার সেই একই ভূমিকা থাকবে। যতদিন আমি রাজনীতি করব আমার ভূমিকা পাল্টাবে না।'
তৃণমূলের তারকা জয়ী প্রার্থীদের আর এলাকায় দেখা যাবে?
এই বিষয়ে দিলীপ বলেন,'ইতিহাস তো উল্টো কথা বলছে। মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়, মিমি, নুসরত। মানুষকে লোভ দেখানো হয়। দিয়ে বিভ্রান্ত করে ভোট টেনে নেওয়া হয়। ভোট মিটলে আর খেয়াল থাকে না। উল্টে ওরা বলে বিজেপির লোক কোথায়? আমরা তো ছিলাম। কাজের দায়িত্ব কিন্তু আমাদের নয়। এই দায়িত্ব সরকারের। এবার মানুষের এটা বোঝা উচিত।
আপনার দলে ক্ষোভ বাড়ছে?
দিলীপের কথায়, 'ভোটে হারজিত হয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সংগঠন শুয়ে পড়েছে। কর্মীরা বেরোননি। আমি নিজে মেদিনীপুরে বুথ লেভেল পর্যন্ত সংগঠন তৈরি করেছিলাম গতবার। সেখানে প্রচুর কাজ করেছিলেন সংসদ কোটার টাকায়। মানুষ খুশি ছিল। সব দলের লোক আমার পক্ষে ছিল। যে কোনও কারণে হোক পার্টি ওখানে আর আমাকে দেয়নি। সেই সিদ্ধান্ত যে ভুল এটা প্রমাণ হয়ে গেল। দলের সংগঠন ঢিলে হয়ে গেছে। আমরা এবার প্রথম লোক খুঁজেই পাইনি। তাই সব জায়গায় আমাদের ভোট কমে গেছে আর পরাজয় হয়েছে। বিজেপির রাজনীতি দেশের স্বার্থে। কিছু প্রকল্প করেও কোনও লাভ হয়নি। সংখ্যালঘু মানুষ সব থেকে বেশি কেন্দ্রীয় গরিব কল্যাণ যোজনার লাভ পেয়েছেন। কিন্তু আমাদের ভোট দেয়নি। দেয়নি তো দেয়নি। আমরা চেষ্টা করেছি। সবার জন্য কাজ করছে বিজেপি।'