লোকসভা ভোটের মাত্র কয়েক দিন আগে সন্দেশখালিতে বিজেপিতে ভাঙন ধরাল তৃণমূল। সন্দেশখালির ঘটনাকে সামনে এনেছিলেন যাঁরা, তাঁদেরই এক জন বিজেপি নেত্রী এবার তৃণমূলে যোগ দিলেন। বৃহস্পতিবার তৃণমূলে যোগ দিলেন বসিরহাটের বিজেপি নেত্রী সিরিয়া পারভিন। বাংলার শাসকদলে যোগ দিয়েই সিরিয়ার দাবি, 'সন্দেশখালির ঘটনা সাজানো, পুরোটাই বানানো গল্প।'
রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা এবং মমতাবালা ঠাকুরের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেন সিরিয়া। সাংবাদিক বৈঠকে সিরিয়া বলেন, 'সন্দেশখালি এবং বসিরহাটে যে সব মহিলা শ্লীলতাহানি এবং হেনস্থার অভিযোগ করেছিলেন, তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। সত্যের জন্য লড়েছিলাম। কিন্তু পরে দেখলাম, এটা সাজানো গল্প। মোবাইল, টাকা, মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে।' সিরিয়া আরও বলেছেন, 'বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে। যখন জানতে পারলাম যে, তৃণমূলের নেতারা স্বচ্ছ, তাঁরা কোনও ভুল করেননি, তখনই সিদ্ধান্ত নিই যে, ভুয়ো জিনিসের সঙ্গে থাকব না।' তাঁর দাবি, সন্দেশখালির ঘটনা যে বিজেপি নেতাদের সাজানো, তার অনেক প্রমাণ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি সন্দেশখালির দাপুটে তৃণমূল নেতা শাহজাহানের বাড়িতে ইডির তল্লাশি অভিযান ঘিরে গোলমালের ঘটনার পর থেকেই তেতে ওঠে উত্তর ২৪ পরগনার ওই এলাকা। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা শিবপ্রসাদ হাজরা, উত্তম সর্দারদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয়রা। একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। জোর করে জমি দখল, মহিলাদের উপর অত্যাচার, যৌন নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে শাহজাহান-ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতার বিরুদ্ধে। গ্রেফতার করা হয়েছে উত্তম, বিজেপি নেতা বিকাশ সিংহকে। পরে জামিন পান বিকাশ। গ্রেফতার করা হয়েছে শিবপ্রসাদকেও। গ্রেফতার করা হয়েছে তৃণমূল নেতা অজিত মাইতিকেও। ঘটনার ৫৫ দিন পর গ্রেফতার করা হয় শাহজাহানকে। বর্তমানে তিনি জেলবন্দি। এই ঘটনার পর বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো (যদিও এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আজতক বাংলা) প্রকাশ্যে এনে তৃণমূল দাবি করে যে, সন্দেশখালির ঘটনা বিজেপির চক্রান্ত। যা ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় রাজ্য রাজনীতিতে।
সন্দেশখালি আন্দোলনের অন্যতম মুখ রেখা পাত্রকে এবার বসিরহাট থেকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। বিজেপি প্রার্থী হওয়ার পর রেখাকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রেখা-মোদীর সেই ফোনালাপ প্রকাশ্যে এসেছিল। এই নিয়ে মঙ্গলবার বসিরহাটের সভায়প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রেখার নাম করেননি মমতা। বলেন, 'আপনি একজনকে ফোন করছেন, সবাইকে শোনাচ্ছেন।' এরপরই মোদীর উদ্দেশে মমতার প্রশ্ন, 'ক'জনের খোঁজ নেন?' সন্দেশখালির ঘটনায় আগেও সরব হয়েছিলেন মমতা। প্রথমবার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারে এসে মমতা বলেন, 'সন্দেশখালিতে মা-বোনেদের যেভাবে অসম্মান করা হয়েছে, তাতে আমি মর্মাহত।' 'বিজেপির চক্রান্ত' বলে ফের সরব হন মমতা। প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতা বলেছেন, 'আপনার আমলে ভারতে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের উপর অত্যাচার হয়েছে। আপনার উত্তরপ্রদেশে...আমাদের এখানে একটা-দুটো ঘটনা হলে ব্যবস্থা নিই। কাউকে ছেড়ে কথা বলিনা।'