গতবার ১৮টি আসন পেয়ে বাংলায় চমক দিয়েছিল পদ্মফুল শিবির। এবারও একাধিক বুথ ফেরত সমীক্ষা বাংলায় বিজেপির ভালো ফলের ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু তার বাস্তব প্রতিফলন হল না। বরং ধরাশায়ী হল গেরুয়া শিবির। গতবারের প্রায় অর্ধেক আসনে নেমে গেল তারা। হারাল জেতা আসনও। কেন এমন হাল হল? কোথায় ভুল হল বিজেপির?
১। সংগঠন- বাংলায় ভোটে জিততে দরকার সংগঠন। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং ইডি-সিবিআই তদন্তের উপর নির্ভর করে ভোটে জেতা যায় না। ২০০১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবল হওয়া ছিল। কিন্তু মমতা ক্ষমতায় আসতে পারেননি। কারণ সংগঠন। বিজেপি নেতৃত্বও সংগঠনের অভাব টের পেল। ভোটের দিন বহু বুথে এজেন্ট বসাতে পারেনি বিজেপি। স্থানীয় সংগঠন না থাকলে বাংলায় জেতা অসম্ভব। সেটাই কাল হল বিজেপির।
২। দিলীপের আসন বদল- ২০১৯ সালে মেদিনীপুরের জিতেছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেবার বিজেপি জিতেছিল ১৮ আসনে। এবার সেই দিলীপকেই পাঠানো হল বর্ধমান-দুর্গাপুরে। যেখানে তিনি হারের মুখে। অন্যদিকে, মেদিনীপুরে অগ্নিমিত্রা পলও পিছিয়ে। ফলে জেতা দুই আসনই খোয়াতে হচ্ছে বিজেপিকে। সূত্রের খবর, দিলীপ অন্য আসনে যেতে চাননি। শেষপর্যন্ত সম্মত হন।
৩। কৌশলে ভুল- বাংলায় বিজেপির কৌশল বলতে, হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ আর ইডি-সিবিআই তদন্ত। এর বাইরে মোদীর মুখের উপর ভরসা করে বৈতরণী পার হতে চেয়েছিল। এর বাইরে দলের তরফে কোনও পোক্ত কৌশল ছিল না। যার খেসারত দিতে হল। উল্টো দিকে বাংলার প্রতি বিজেপি বঞ্চনার অভিযোগ ক্রমাগত তুলে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কৌশল সফল হয়েছে বলে ভোটের ফলেই প্রমাণিত।
৪। মমতার বিপরীতে বিশ্বাসযোগ্য মুখ- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, তিনি বিশ্বাসযোগ্য মুখ নন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাদের মতে, তৃণমূল ছেড়ে আসার পর দু-দুটো নির্বাচন পার করলেন শুভেন্দু। কিন্তু, দলকে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দিতে পারলেন না। দিলীপ ঘোষের মতো নেতা যিনি দলকে সাফল্য এনে দিয়েছিলেন, তিনিই চলে গেলেন অন্তরালে। দিলীপের সভাপতিত্বেই ১৮ আসন পেয়েছিল গেরুয়া শিবির।
৫। সংখ্যালঘু ভোট- বাংলায় সংখ্যালঘু ভোট একটা বড় ফ্যাক্টর। ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট হাতছাড়া হওয়া মানে অনেকটা পিছিয়ে থেকে শুরু করা। এবারও রাজ্যে সংখ্যালঘুদের মন জেতার চেষ্টা করেনি বিজেপি। তাছাড়া সংখ্যালঘু মুখও তেমন নেই তাদের দলে। উল্টে বিজেপি নেতাদের নানা মন্তব্য সংখ্যালঘুদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।