সোমবার তৃণমূলের বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তাপস রায়। তাঁর ইস্তফা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেননি বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। যদিও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া আগে দল থেকেও পদত্যাগ করেছেন তাপস। তিনি জানিয়েছেন যে দলের সব দায়িত্ব থেকেই তিনি ১ মার্চ পদত্যাগ করেছেন। বিধায়ক পদ ছাড়ার পরে রাজনীতি ছাড়বেন নাকি অন্য দলে যোগ দেবেন? এই প্রশ্নে স্পষ্ট করে কোনও উত্তর দেননি তাপস। যদিও তিনি বলেছেন, 'আমি কোন দলে যাব তা নিয়ে কিছু বলব না। আমি এখন ফ্রি বার্ড।'
এদিকে তাপসের তৃণমূল ছাড়া, বিধায়ক পদ ছাড়া নিয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাপসকে কি বিজেপিতে নেওয়া হবে? এই প্রশ্নের জবাবে বিরোধী দলনেতা বলেন, 'উনি কোনও রাজনৈতিক দলে যুক্ত হবেন কি না বা কোনও দলে যেতে চান কি না, তা নিয়ে কোনও প্রস্তাব আমার বা আমাদের কাছে আসেননি। এলে উত্তর কলকাতা জেলা বিজেপির মত নিয়ে আমাদের টিমের সঙ্গে আলোচনা করে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের অনুমতি নিয়ে জানিয়ে দেব।' এরপরই ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে নন্দীগ্রামের বিধায়ক বলেন, 'তাপস রায় যেভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে পারেন।'
কানাঘুষো ছিল, দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে জল্পনা আরও বাড়ে। সোমবার সকালে আচমকাই তাপস রায়ের বাড়িতে কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসুর উপস্থিতি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়। তাপসের সঙ্গে বৈঠকের পর বেরিয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, 'দলের কর্মী হিসেবে নেতাকে অনুরোধ করেছি দলে থাকার জন্য। দাদা ও ভাই হিসেবে কথা বলেছি। যদি কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার থাকে, সেটা তিনিই জানাবেন।'
পরে সাংবাদিক বৈঠকে তাপস একরাশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ১২ জানুয়ারি তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযান চালিয়েছিল। সেই থেকে তাঁর সঙ্গে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব কোনও যোগাযোগ করেননি। তাপস বলেন, ' এত দুর্নীতি, তারপর সন্দেশখালি, ঘরে বাইরে আপমান ও উপেক্ষা। সে সব আমাকে তাড়না দিয়েছে। ২৩-২৪ বছর আমার সম্পর্ক তৃণমূলের সঙ্গে। আমি যা মনে করেছি সেটা করেছি। ১২ জানুয়ারি আমার বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে যায়। ইডি অভিযান চালিয়েছিল। সেই অভিযানের পর ৫২ দিন কাটলেও দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি। ৫২ দিন হয়ে গেলেও মুখ্যমন্ত্রীও আমার কথা বলেননি। উনি শাহজাহানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমার পাশে দাঁড়াননি। কেউ ফোন করে আমার পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলেননি। সেটা সকলেই জানে। আমাকেও ডাকা হয়নি বা ফোন করেননি। এটার পেছনে কে আছে সেটা সবাই জানে। অনেকেই বলেছে এর পেছনে আমার দলেরই কেউ আছে। যখন আমার বাড়িতে রেড চলছে তখন স্বামী বিবেকানন্দর বাড়িতে কেউ কেউ উল্লাস করেছেন। আমাকে অনেকেই এটা বলেছেন। তবে অনেকেই এটা নিয়ে প্রতিবাদও করেছেন। ব্রাত্য ও কুণাল এসেছিল। কুণালের কাছে শোকজের নোটিশ পাঠিয়েছে দল। এই দলে যাদের শোকজ করা উচিত, বহিষ্কার করা উচিত, তাঁরা বহাল তবিয়তে।'
সাংবাদিক বৈঠকের পরেই বিধানসভার উদ্দেশে রওনা দেন তাপস রায়। পরে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন তিনি। দলত্যাগের মুহুর্তেও সাংবাদিকদের সামনে উগড়ে দিলেন একরাশ ক্ষোভ এবং অভিযোগ। বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে তাপস রায় বললেন, 'আমি ইস্তফা দিলাম কারণ ইদানিংকালে আমার মনে হচ্ছিল না দলে আমার দরকার আছে। দুর্নীতি, সন্দেশখালির ঘটনা আমায় নাড়া দিয়েছে। ১২ জানুয়ারি আমার বাড়িতে দলের একজন ইডিকে পাঠায়। আমার দলের তরফ থেকে কেউ আাময় সহানুভূতি জানায়নি। ৫২ দিন ধরে আমায়, আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সহানুভূতি জানাননি। কিছু মানুষের কৃতকর্মের জন্য এই অবস্থা দলের। তাই আমার মনে হয়েছে আমার এই দলে থাকা উচিত নয়। তবে আমি কোন দলে যাব তা নিয়ে কিছু বলব না। আমি এখন ফ্রি বার্ড।'