লোকসভা ভোটের আগে কি তৃণমূল ছাড়তে পারেন তাপস রায়? এই জল্পনা গত কয়েকদিন ধরেই চলছিল। সোমবার বিধানসভায় বিধায়ক পদ থেকে ইস্তাফা দিয়ে দল থেকেও নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়ে দিলেন তাপস রায়। দলের সব দায়িত্ব থেকেই তিনি ১ মার্চ পদত্যাগ করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানালেন তাপস। সেইসঙ্গে নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়েও মুখ খুললেন।
বিধানসভা থেকে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে তাপস রায় বললেন, "আমি ইস্তফা দিলাম কারণ ইদানিংকালে আমার মনে হচ্ছিল না দলে আমার দরকার আছে। দুর্নীতি, সন্দেশখালির ঘটনা আমায় নাড়া দিয়েছে। ১২ জানুয়ারি আমার বাড়িতে দলের একজন ইডিকে পাঠায়। আমার দলের তরফ থেকে কেউ আাময় সহানুভূতি জানায়নি। ৫২ দিন ধরে আমায়, আমার মেয়ে ও স্ত্রীকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা সহানুভূতি জানাননি। কিছু মানুষের কৃতকর্মের জন্য এই অবস্থা দলের। তাই আমার মনে হয়েছে আমার এই দলে থাকা উচিত নয়। তবে আমি কোন দলে যাবো তা নিয়ে কিছু বলবো না। আমি এখন ফ্রি বার্ড।"
ইডি অভিযান নিয়ে দলনেত্রীর নীরবতায় অভিমান হয়েছে, সেকথা এদিন বিধানসভায় পদত্যাগের আগেই স্পষ্ট করেছিলেন তাপস রায়। আর সেই ফলস্বরূপ তৃণমূলের সঙ্গে দু'দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন বরানগরের বিধায়ক। সোমবার বিধানসভায় গিয়ে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। পাশাপাশি দলেরও সমস্ত পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলে নিজেই জানালেন তাপস। এই মুহূর্তে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তৈরি হচ্ছে একাধিক জল্পনা।
প্রায় ২৩ বছর ধরে বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায় তৃণমূল শিবিরের একনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন। বেশ কয়েকবারের বিধায়ক তাপস রায় এবার কি বিজেপিতে যোগ দেবেন? এই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজ্য রাজনীতিতে। এই নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তাপস বলেন, এই সমস্ক কথার উত্তর দেবনা , আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
কানাঘুষো ছিল, দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়ছে। কয়েকদিন ধরে জল্পনা আরও বাড়ে। সোমবার সকালে আচমকাই তাপস রায়ের বাড়িতে কুণাল ঘোষ, ব্রাত্য বসুর উপস্থিতি ঘিরে জোর চর্চা শুরু হয়। এদিন পদত্যাগ করার আগে সাংবাদিকদের সামনে তাপস রায় বলেন, 'এত দুর্নীতি, সন্দেশখালি আমাকে তাড়না দিচ্ছে। এই প্রথম বাজেট অধিবেশন ঠিক করে করলাম না। ২৩ -২ ৪ বছর তৃণমূলের সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমায় যখন যা বলেছে তা করেছি। কিন্তু আমার বাড়িতে একটি ঘটনা ঘটে যায় গত ১২ জানুয়ারি। যদিও মুখ্য বিষয় দুর্নীতি এবং সন্দেশখালি। তারপরের ঘটনা আমার বাড়িতে ইডি অভিযান। আজ ৫২ দিন দল আমার পাশে দাঁড়ায়নি। কেউ ফোন করে আমার পরিরবারের কাউকে সমবেদনা জানায়নি। অনেকে আমায় বলেছে, এর পেছনে দলেরই কেউ কেউ আছে। যখন আমার বাড়িতে ইডি রেড চলছে, তখন তাদের মধ্যে উল্লাস দেখা যায়। ব্রাত্য - কুণাল এসেছিল। শুনলাম আমায় কুণাল বোঝাতে এসেছিল, তখনই ওর কাছে সুব্রত বক্সির শোকজ নোটিশ এসেছে। এই হচ্ছে দল। আমি আহত, অঘাতপ্রাপ্ত।'
এখানেই শেষ নয়, সাংবাদিক বৈঠকের পরেই বিধানসভার উদ্দেশে রওনা দেন তাপস রায়। পরে অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে পদত্যাগপত্র তুলে দেন তিনি। দলত্যাগের মুহুর্তেও সাংবাদিকদের সামনে উগড়ে দিলেন একরাশ ক্ষোভ এবং অভিযোগ। দলত্যাগের সময়ে তিনি জানিয়েছেন যে সন্দেশখালি এবং দুর্নীতি ইস্যু তাঁকে তাড়না দিয়েছে। তিনি জানিয়েছেন দলের অন্দরেই একরাশ 'অপমান', 'অসম্মান', 'অবহেলা' এবং 'উপেক্ষা'-র শিকার হয়েছেন তিনি। তাঁর বাড়িতে ইডি অভিযানের পিছনে দলেরই একাংশের ষড়যন্ত্রেরও অভিযোগ তুলেছেন তাপস। তিনি বলেন, ‘ইডি অভিযানের নেপথ্যে দলেরই কেউ ছিল’। পাশাপাশি দলেরও সমস্ত পদ থেকে তিনি ইস্তফা দিয়েছেন বলেও জানান। এই মুহূর্তে তাঁর পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে তৈরি হচ্ছে একাধিক জল্পনা।