রাজ্যে সিপিএম কোনও আসন পায়নি। তাদের ভোটের হার ৫.৬৭ শতাংশ। কিন্তু জয় পরাজয়ে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছেন সিপিএম প্রার্থীরা। রাজ্যে এমন ১৭টি কেন্দ্র রয়েছে যেখানে বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় সুবিধা পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী। পাঠিগণিত বলছে, রাজ্যে ১২টি কেন্দ্র এমন রয়েছে যেখানে সিপিএম প্রার্থী ভোট পাওয়ায় তৃণমূলের জয় সহজ হয়েছে। এর মধ্যে বারাসতের মতো কেন্দ্রও রয়েছে যেখানে বিজেপি, আইএসএফ এবং ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থীর মধ্যে ভোট ভাগ হওয়ার সুবিধা পেয়েছে রাজ্যের শাসক দল।
১। আরামবাগ
তৃণমূলের মিতালি বাগের প্রাপ্ত ভোট ৭,১২,৫৮৭। বিজেপি প্রার্থী অরূপকান্তি দিগরের প্রাপ্ত ভোট ৭০৬১৮৮। ৬৩৯৯ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন বিজেপি প্রার্থী। সেখানে সিপিএম প্রার্থী বিপ্লবকুমার মৈত্র পেয়েছেন ৯২৫০২ ভোট। এই বিরোধী ভোট ভাগ না হলে এই কেন্দ্রে অরূপকান্তির জেতার সম্ভাবনা ছিল।
২। আসানসোল
২০১৪ এবং ২০১৯ সালে আসানসোলে জিতেছিল বিজেপি। এবার তারা হেরেছে। এই কেন্দ্রে তৃণমূলের শত্রুঘ্ন সিনহা পেয়েছেন ৬,০৫,৬৪৫ ভোট। বিজেপি সুরিন্দরসিং আলুওয়ালিয়ার প্রাপ্ত ভোট ৫৪৬০৮১। আলুওয়ালিয়া হেরেছেন ৫৯,৫৬৪ ভোটে। এখানে সিপিএম প্রার্থী জাহানারা খান পেয়েছেন ১,০৫,৯৬৪ ভোট। ফলে এখানেও বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় সুবিধা পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী।
৩। বাঁকুড়া
বাঁকুড়ায় জমিতেছেন তৃণমূলের অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৬,৪১,৮১৩। দ্বিতীয়স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার পেয়েছেন ৬,০৯,০৩৫ ভোট। তৃণমূল জিতেছে ৩২৭৭৮ ভোটে। সেখানে সিপিএম প্রার্থী নীলাঞ্জন দাশগুপ্ত পেয়েছেন ১,০৫,৩৫৯ ভোট। এখানেও জয়-পরাজয়ে নির্ণায়ক ভূমিকা নিয়েছে সিপিএমের ভোট।
৪। মেদিনীপুর
মেদিনীপুরে তৃণমূলের জুন মালিয়া পেয়েছেন ৭,০২,১৯২ ভোট। বিজেপি প্রার্থী অগ্নিমিত্রা পলের প্রাপ্ত ভোট ৬,৭৫,০০১। জয়ের ব্যবধান ২৭১৯১। সেখানে সিপিএম প্রার্থী পেয়েছেন ৫৭,৭৮৫ ভোট।
৫। শ্রীরামপুর
শ্রীরামপুরে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আরও একবার জিতেছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী কবীর শংকর বোসের থেকে ১,৭৪,৮৩০ ভোটের ব্যবধানে জিতেছেন কল্যাণ। এই কেন্দ্রে সিপিএমের দীপ্সিতা ধর পেয়েছেন ২৩৯১৪৬ ভোট।
৬। কৃষ্ণনগর
কৃষ্ণনগরে মহুয়া মৈত্র পেয়েছেন ৬২৮৭৮৯ ভোট। বিজেপির অমৃতা রায় পেয়েছেন ৫৭২০৮৪ ভোট। ৫৬,৭০৫ ভোটে জমিতেছেন মহুয়া। অন্যদিকে সিপিএমের এসএম সাদি ভোট টেনেছেন ১৮০২০১। বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় লাভবান হয়েছেন মহুয়া।
৭। কলকাতা উত্তর
তৃণমূলের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির তাপস রায়কে হারিয়েছেন ৯২৫৬০ ভোটে। এই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রদীপ ভট্টাচার্য পেয়েছেন ১১৪৯৮২ ভোট। এই কেন্দ্রেও বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল।
৮। হুগলি
হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের লকেট চট্টোপাধ্যায়কে হারিয়েছেন রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ের ব্যবধান ৭৬,৮৫৩। এই হুগলি লোকসভায় সিপিএম প্রার্থী মনদীপ ঘোষ পেয়েছেন ১,৩৯,৯১৯ ভোট। বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় লাভ হয়েছে রচনার।
৯। দমদম
দমদমে আরও একবার দিতেছেন তৃণমূলের সৌগত রায়। এই কেন্দ্রে জয়ের ব্যবধান ৭০৬৬০। তৃতীয় স্থানে থাকা সুজন চক্রবর্তী ভোট টেনেছেন ২৪০৭৮৪। ফলে সুজনের প্রাপ্ত ভোট জয়-পরাজয়ে নির্ধারক হয়ে উঠেছে।
১০। বীরভূম
বীরভূমে শতাব্দী রায় হারিয়েছেন বিজেপির দেবতনু ভট্টাচার্যকে। ব্যবধান ১৯৭৬৫০। এই কেন্দ্রেই কংগ্রেস প্রার্থী মিল্টন রশিদের প্রাপ্ত ভোট ২২৬২৬০। বিরোধী ভোট ভাগ হওয়ায় সুবিধা পেয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী।
১১। বারাকপুর
পার্থ ভৌমিক হারিয়েছেন অর্জুন সিংকে। ভোটের ব্যবধান ৬৪৪৩৮। এই কেন্দ্রেই সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষ পেয়েছেন ১,০৯,৫৬৪ ভোট। এখানেও বিরোধী ভোট ভাগ হয়েছে।
১২। বর্ধমান দুর্গাপুর
বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে ১৩৭৯৮১ ভোটে হেরেছেন দিলীপ ঘোষ। ওই কেন্দ্রে জমিতেছেন তৃণমূলের কীর্তি আজাদ। বর্ধমান দুর্গাপুর কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী সুকৃতী ঘোষাল পেয়েছেন ১৫৩৮২৯ ভোট।
১৩। বর্ধমান পূর্ব
বর্ধমান পূর্বে বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারকে ১৬০৫৭২ ভোটে হারিয়েছেন বিজেপির শর্মিলা সরকার। এই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী নীরব খান পেয়েছেন ১৭৬৮৯৯ ভোট। যা জয়ের ব্যবধানের চেয়ে বেশি।
১৪। বারাসত
বারাসতে জিতেছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রে ৩ বিরোধীর মধ্যে ভোট ভাগ হয়েছে। তৃণমূল প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার জিতেছেন ১,১৪,১৮৯ ভোটে। দ্বিতীয়স্থানে বিজেপি। এই কেন্দ্রে তৃতীয়স্থানে থাকা আইএসএফ প্রার্থী পেয়েছেন ১,২১,৪৪০ ভোট। আর ১ লাখ ভোট পেয়েছেন ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়।
মুর্শিদাবাদের ৩ লোকসভায় ত্রিমুখী লড়াইয়ে ফায়দা হয়েছে তৃণমূলের
১৫। মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর আর বহরমপুরে আবার উল্টো হয়েছে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী এত ভোট পেয়েছেন যে জয়-পরাজয়ে নির্ণায়ক হয়ে উঠেছেন। মুর্শিদাবাদে জয়ী তৃণমূলের আবু তাহেরের সঙ্গে সেলিমের ভোটের ব্যবধান ১৬৪২১৫। ওই কেন্দ্রে বিজেপির গৌরীশংকর ঘোষ পেয়েছেন ২৯২০৩১ ভোট।
১৬। ১৯৯৯ সাল থেকে বহমপুরের সাংসদ ছিলেন অধীর চৌধুরী। এবার ওই কেন্দ্রে ইন্দ্রপতন ঘটেছে। তৃণমূল প্রার্থী ইউসুফ পাঠান জিতেছেন ৮৫,০২২ ভোটে। এই কেন্দ্রেই বিজেপির নির্মল সাহা পেয়েছেন ৩৭১৮৮৫ ভোট।
১৭। জঙ্গিপুরে তৃণমূলের খলিলুর রহমান জিতেছেন ১,১৬,৬৩৭ ভোটে। দ্বিতীয়স্থানে কংগ্রেস প্রার্থী মুর্তজা হোসেন বকুল। তৃতীয়স্থানে থাকা বিজেপি প্রার্থী ধনঞ্জয় ঘোষ পেয়েছেন ৩,৪০,৮১৪ ভোট। অর্থাৎ এখানে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে বিরোধী ভাগের সুবিধা পেয়েছে তৃণমূল।