চোখের চিকিৎসা করাতে বিদেশে গিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর এই বিদেশ যাত্রা নিয়ে ইডির সঙ্গে আদালতে টানাপোড়েন কম হয়নি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জারি হওয়া লুকআউট নোটিশ তুলে নিতে ইডিকে নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত। আদালত জানায়, বিদেশ যাত্রার এক সপ্তাহ আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তা ইডিকে জানাতে হবে। তারপরই তিনি বিদেশে যেতে পারবেন। এর আগে আদালতকে ইডি জানায় যে, ২৬ জুলাই থেকে ২০ অগাস্ট পর্যন্ত বিদেশ যেতে তাঁরা অভিষেককে অনুমতি দিয়েছেন।
এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে একটি ভিডিয়ো। গত ২৭ জুলাই ভাঙ্গড় ISF বাংলা নামের একটি ফেসবুক পেজে ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়েছে। যেখানে বিস্ফোরক দাবি করে বলা হয়েছে, দুবাইয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নাকি ঘিরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে এরপরই তড়িঘড়ি দিল্লি ছুটে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করেন তিনি। কিন্তু তাতেও কোনও লাভ হয়নি। ভিডিয়োটি প্রায় ৬ হাজার ন'শো জন শেয়ার করেছে। যা এখন রীতিমতো ভাইরাল।
যদিও ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম তদন্ত করে দেখেছে যে, ভিডিয়োতে করা দাবির কোনও সত্য়তা নেই। পুরোটাই কাল্পনিক।
কীভাবে এগলো অনুসন্ধান?
বুধবার অর্থাৎ ২৬ জুলাই কলকাতা থেকে বিদেশ যাত্রা করেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রতিবেদনটি যখন লেখা হয়েছে ৩০ জুলাই। অর্থাৎ মাঝে প্রায় চারদিনের ফারাক। যদি সত্যি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদককে দুবাইতে কেন্দ্রীয় বাহিনী ঘিরে রাখত, তবে সেটা বাংলা তথা দেশের রাজনৈতিক মানচিত্রে একটা বড় খবর হত। কিন্তু ইন্টারনেটে কিওয়ার্ড সার্চ করে এমন কোনও খবর আমাদের নজরে পড়েনি।
সত্যি এমন ঘটনা ঘটলে,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক, CRPF, সেনা, ইডি বা সিবিআই-এর তরফে সংবাদমাধ্য়মকে কিছু বলা হত। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।
এরপর ইন্ডিয়া টুডের তরফে যোগাযোগ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে করা হয়। আমাদের প্রতিনিধি সূর্যাগ্নি রায়কে তাঁরা জানান, দুবাই নয় চোখের চিকিৎসা করাতে আমেরিকায় গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ অগাস্ট তাঁর চোখে একটি অপারেশন হবে। ভাইরাল ভিডিয়োর দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। আমাদের প্রতিনিধি এও নিশ্চিত করেন যে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম বর্তমানে এ রাজ্যেই রয়েছেন। সাম্প্রতিক কালে তাঁরা দিল্লি যাননি, অদূর ভবিষ্যতেও যাওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই। ফলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
আর যদি সত্যিই মোদী-মমতার সাক্ষাৎ হতো, তবে তা একটি বড় রাজনৈতিক খবর হত। এযাবৎ কালে এমন কোনও আমাদের নজরে পড়েনি। শেষবার ২০২২ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এরপর ২০২২ সালের শেষে, ভার্চুয়ালি হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। হাওড়া স্টেশনে মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ইন্ডিয়া টুডের তরফে তৃণমূলের মুখপাত্র তথা সোশ্যাল মিডিয়া ও আইটি শাখার প্রধান দেবাংশু ভট্টাচার্যের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। তিনি ভাইরাল ভিডিয়োটিকে ফেক বলেই দাবি করেন। সরাসরি আক্রমণ করেন আইএসএফ-কেও।
বিভিন্ন যুক্তি বিচার করে এখন এটা বলাই যায় যে, ভাইরাল ভিডিয়োর দাবিটি মনগড়া ও ফেক।
দুবাইয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে ফেলেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফিরহাদ হাকিমকে নিয়ে এরপরই তড়িঘড়ি দিল্লি ছুটলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভাইরাল ভিডিয়োর দাবিটি মনগড়া ও ফেক।