scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: মেয়েকে হত্যার অভিযোগে হাত-পা বেঁধে মাকে শাস্তির ভিডিয়োটি অন্য কিশোরীর

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি বিশেষ ভিডিয়ো। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একটি ঘরের ভিতরে বেডের উপরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছেন একজন মহিলা। আর কিছু পুলিশ এসে প্রথমে তার হাত ও পায়ের বাধন খুলে দিচ্ছেন। এবং পরে আবার হাত ও পায়ের বাধন পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, নিজের ১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার শাস্তির দৃশ্য।

Advertisement

কথায় আছে পৃথিবীতে মায়ের থেকে আপন আর কেউ হয় না। সন্তানের জন্য একজন মা যতটা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেন তা অন্য কেউ পারেন না। তবে কিছুক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও দেখা যায়। এমন অনেক সময় শোনা যায় দুধের শিশুকে ফেলে রেখে পালিয়েছেন কোনও মা। আবার এমন মা-ও আছেন যিনি নিজের সন্তানকে হত্যা করতে পর্যন্ত পিছপা হন না।

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই এক মায়ের ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, একটি ঘরের ভিতরে বেডের উপরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছেন একজন মহিলা। আর কিছু পুলিশ এসে প্রথমে তার হাত ও পায়ের বাঁধন খুলে দিচ্ছেন। এবং পরে আবার হাত ও পায়ের বাঁধন পরিয়ে দিচ্ছেন। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, নিজের ১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার শাস্তির দৃশ্য।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছেন, “১৬ মাসের কন্যা সন্তানকে রেখে দশ দিনের জন্য ঘুরতে গেছিলেন তাঁর মা। ফিরে এসে দেখে শিশুর নিথ দেহ পড়ে আছে, শিশুটিকে মৃ*ত্যু বলে ঘোষণা করা হয়, সেই মায়ের কঠোর শা*স্তির আবেদন করেছিল সবাই, আর তার শা*স্তি কিছু দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করে সকলকে দেখানোর সুযোগ করে দেয়া হলো।” (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত)

অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই একই ভিডিয়ো পোস্ট করে একই ধরনের দাবি করছেন। এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।

 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োটি ১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার শাস্তির দৃশ্য। বরং সেটি মানসিক রোগে আক্রান্ত কিশোরীর মেন্টাল হেলথ সেশনের ২০১৮ সালের ভিডিয়ো।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

Advertisement

ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জানতে আমরা প্রথমে ভিডিয়োটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৯ সালের ১ অগস্ট এই একই ভিডিয়ো ‘Hannah Critchfield’ নামক একটি ইউটিউব চ্যানেলও দেখতে পাই। 

এই ভিডিয়োর বিস্তারিত অংশে আমরা একটি খবরের লিঙ্ক দেখতে পাই। সেটির সূত্র ধরে ফিনিক্স নিউ টাইমস নামক একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ২০১৯ সালের ২২ অগস্ট প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ভিডিয়োতে যাকে দেখা যাচ্ছে তার নাম ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া। সে একজন অটিজম এবং গুরুতর মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত তরুণী। যার প্রধান লক্ষণ হলো মানসিক অস্থিরতা, হ্যালুসিনেশন, এবং মিথ্যা ধারণা।

 

আমরা আমাদের সার্চে এবিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য খুঁজে পাই ‘National Center on Disability and Journalism’র তরফে প্রকাশিত অপর একটি প্রতিবেদনে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেন্ট লুক হাসপাতালের মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগে চিকিৎসা চলছিল ১৯ বছরের ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়ার। সেখানে দু’জন নার্সকে থুতু ও ঘুষি মারার অপরাধে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাকে জেল হেপাজতে রাখা হয়। 

 

এরপর ২০২০ সালের ১৭ জানুয়ারি ‘The Real News Network’ নামক ইউটিউব চ্যানেল আমরা ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়ার মায়ের একটি ইন্টারভিউ দেখতে পাই। সেখানে তিনি তার মেয়ের সঙ্গে হওয়া ভুল চিকিৎসা ও বাজে ব্যবহারের অভিযোগ তুলে ধরেছেন।

অন্যদিকে আমরা ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি ফিনিক্স নিউ টাইমসের অপর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, চিকিৎসার জন্য ৯ মাস পর জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে মানসিক রোগে আক্রান্ত ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়াকে। 

এর থেকে স্পষ্ট যে ভাইরাল ভিডিয়োটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়ার মেন্টাল হেলথ সেশনের। সেই সেশন চলাকালীন নার্সদের থুতু ও ঘুষি মারার অপরাধে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত তাকে জেল হেফাজতে রাখা হয়। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য মুক্তি দেওয়া হয়। ভ্যালেন্টিনার থুথু মারার সেই ভিডিয়ো শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে সেটি ১৬ মাসের সন্তানকে একা রেখে ১০ দিনের জন্য ঘুরতে যাওয়া মায়ের শাস্তির ভিডিয়ো।

এরপর ইন্ডিয়া টুডের তরফে ভাইরাল ভিডিয়োর ক্যাপশনে উল্লেখিত দাবি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা হয়। তখন আমরা গত ১৯ মার্চ ‘সিএনএন’র একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ৬ জুন নিজের ১৬ মাসের কন্যা সন্তান জাইলিনকে বাড়িতে একা রেখে ১০ দিনের জন্য ডেট্রয়েট, মিশিগান আর পুয়ের্তো রিকো ঘুরতে যান আমেরিকার ওহাইও রাজ্যের ক্লিভল্যান্ডের বাসিন্দা ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিও। ১০ দিন পর বাড়ি ফিরে এসে তিনি দেখেন তার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার পর তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে মেয়েকে হত্যার অপরাধে ক্যান্ডেলারিওকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে দেশটির আদালত।

 

এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, ‘১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার শাস্তির দৃশ্য’ দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভ্যালেন্টিনা গ্লোরিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত কিশোরীর ২০১৮ সালের মেন্টাল হেলথ সেশনের ভিডিয়ো শেয়ার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার নাম ক্রিস্টেল ক্যান্ডেলারিও। যাকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা দিয়েছে আদালত।

Advertisement

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

নিজের ১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার শাস্তির দৃশ্য।

ফলাফল

১৬ মাসের সন্তানকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার মহিলার শাস্তির দৃশ্য দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়েছে অপর এক মানসিক রোগে আক্রান্ত কিশোরীর ২০১৮ সালের চিকিৎসার ভিডিয়ো।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement