scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: পাকিস্তানি নন, ভারতীয় কুস্তিগীরের সঙ্গেই লড়াই করেছিলেন কবিতা

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে একটি রেসলিং ম্যাচের ভিডিয়ো। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, একজন মহিলা কুস্তিগীর রেসলিং রিংয়ের উপরে দাঁড়িয়ে নিচে থাকা দর্শকদেরকে তার সঙ্গে লড়াই করার জন্য চ্যালেঞ্জ করছেন। তখন দর্শকদের মধ্য থেকে গেরুয়া পোশাক পরা একজন মহিলা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাকে ব্যপকভাবে মারতে থাকেন। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ওই মহিলা কুস্তিগীর একজন পাকিস্তানি নাগরিক। এবং যিনি তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তিনি একজন ভারতীয়।

Advertisement

কাশ্মীরের অস্থিরতা সৃষ্টি করা কিংবা ভারতে একের পর এক জঙ্গি হামলায় মদত দেওয়া। সব ক্ষেত্রেই বরাবরই নিজেদের নাম জড়িয়েছে পাকিস্তান। সেটা হোক ২৬/১১-র মুম্বাই, ২০১৬-র পাঠানকোট কিংবা ২০১৯-র পুলওয়ামা হামলা। প্রতিটি সন্ত্রাসবাদী হামলার সঙ্গে পাওয়া গেছে পাকিস্তানের সম্পর্ক। আর এই সব ঘটনার জেরে প্রভাবিত হয়েছে উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক।

তবে সম্প্রতি একটি রেসলিং ম্যাচের ভাইরাল ভিডিয়োকে কেন্দ্র করে সোশ্যাল মিডিয়ার শিরোনামে উঠে এসেছে দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের নাম। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, একজন মহিলা কুস্তিগীর রেসলিং রিংয়ের উপরে দাঁড়িয়ে নিচে থাকা দর্শকদেরকে তার সঙ্গে লড়াই করার জন্য চ্যালেঞ্জ করছেন। তখন দর্শকদের মধ্য থেকে গেরুয়া পোশাক পরা একজন মহিলা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। এবং তিনি রিংয়ে উঠে ওই মহিলা কুস্তিগীরকে ব্যপকভাবে মারতে থাকেন। শেষে অবশ্য কিছু পুরুষ কুস্তিগীর এসে তাঁদের দু’জনকে সরিয়ে নিয়ে যান। 

ভাইরাল ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে ওই মহিলা কুস্তিগীর একজন পাকিস্তানি নাগরিক। তিনি দুবাইয়ে আয়োজিত কুস্তি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ভারতীয় মহিলাদের উদ্দেশ্যে কুৎসিত ভাষায় আক্রমণ করেন এবং তাঁর সঙ্গে লড়ার করার চ্যালেঞ্জ করেন। তখন তামিলনাড়ুর একজন মহিলা সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন এবং তাঁকে উচিত শিক্ষা প্রদান করেন।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিয়োটি পোস্ট করে লিখেছেন, “দুবাইয়ে এক কুস্তি প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হ'ন এক পাকিস্তানি মহিলা প্রতিযোগী। এর পরেই এই পাকিস্তানি মহিলা ভারতীয় মহিলাদের উদ্দেশ্যে গ্যালারির দিকে বিদ্রুপ করতে থাকে ------ কোন মাইকে লাল আছে ? --- আমার সঙ্গে টক্কর নেবে ? কবিতা বিজয়লক্ষ্মী* *নামে তামিলনাড়ুর এক মাক্কাল মহিলা হাত তুলে দাঁড়ান। তিনি স্টেজে উঠে পড়েন। এরপর মজাটা দেখুন। দেখুন চ্যাম্পিয়ন কেমন নাস্তানাবুদ হন।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন। এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। 

Advertisement

 

 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োর দাবিটি সম্পূর্ণ রূপে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর। আসলে ভিডিয়োটি দুবাইয়ের নয় বরং ২০১৬ সালে জলন্ধরে আয়োজিত কুস্তি প্রতিযোগিতার। আর যাকে পাকিস্তানি কুস্তিগীর বলে দাবি করা হচ্ছে তিনি আসলে পাকিস্তানি নন, ভারতের প্রথম পেশাদার মহিলা কুস্তিগীর বিবি বুলবুল।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল ভিডিয়োটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার পর আমরা সেখানে ‘CWE’ লেখা সহ ভারতীয় পেশাদার রেসলার তথা প্রাক্তন WWE প্রতিযোগী দ্য গ্রেট খালির পোস্টার দেখতে পাই। সেই সূত্র ধরে আমরা জানতে পারি, CWE-এর পুরো নাম ‘কন্টিনেন্টাল রেসলিং এন্টারটেইনমেন্ট’। যেটি পঞ্জাবের জলন্ধরে অবস্থিত খোলির রেসলিং ট্রেনিং স্কুল। যেখানে তিনি সারা দেশের উদীয়মান কুস্তিগীরদের ফ্রিস্টাইল রেসলিংযের কৌশল শেখান। আর এই সব তথ্য থেকে কিছুটা অনুমান করা যায় যে ভাইরাল ভিডিয়োটি দুবাইয়ের নয় বরং পঞ্জাবের জলন্ধরের হলেও হতে পারে। এবং যে দু’জন মহিলা ভিডিয়োতে লড়াই করছেন তাঁরাও ভারতীয় হতে পারে। 

তবে এবিষয়ে আরও নিশ্চিত হতে আমরা ভিডিয়োটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৬ সালের ১৩ জুন গ্রেট খালির রেসলিং ট্রেনিং স্কুলের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেল ‘CWE India’তেও এই একই ভিডিয়ো দেখতে পাই। ভিডিয়োটি পোস্ট করে সেখানে লেখা হয়েছে, “বিবি বুলবুলের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করল কবিতা।” অর্থাৎ এ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে যিনি লড়াই করার চ্যলেঞ্জ করছেন তার নাম বিবি বুলবুল এবং যিনি লড়াইযের চ্যলেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তাঁর নাম কবিতা।

এরপর আমরা ‘CWE India’ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০১৬ সালের ১৬ জুন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে ভাইরাল ভিডিয়োর কথা উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, হরিয়ানার প্রাক্তন পুলিশ অফিসার কবিতা। যিনি একাধারে পাওয়ার-লিফটিং এবং মিক্সড মার্শাল আর্ট চ্যাম্পিয়ন। তিনি কয়েক মিনিটের মধ্যে মহিলা কুস্তিগীর বিবি বুলবুলকে নক ডাউন করেছেন।

আমরা আমাদের সার্চে এই একই তথ্য খুজে পাই দৈনিক ভাস্করের একটি প্রতিবেদনে। সেখানে এই ভাইরাল এই রেসলিং প্রতিযোগিতার কথা উল্লেখ করে লেখা হয়েছে যে, “সম্প্রতি, জলন্ধরের দিলীপ সিং ওরফে দ্য গ্রেট খালির ট্রেনিং স্কুলে দুই মহিলার মধ্যে আশ্চর্যজনক লড়াই দেখা গেছে। যেখানে হরিয়ানার প্রাক্তন পুলিশ অফিসার কবিতা ভারতের প্রথম পেশাদার মহিলা কুস্তিগীর এবং খালির ছাত্রী বিবি বুলবুলকে মারাত্মকভাবে মারধর করেন।” 

 

এরপর আমরা বিবি বুলবুল ও কবিতার সম্পর্কে আরও বিষদে জানতে পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘PTC Punjabi’-র অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে বিবি বুলবুলের একটি সাক্ষাৎকার দেখতে পাই। সেখানে বিবি বুলবুল জানান, তিনি পঞ্জাবের বাসিন্দা এবং তাঁর আসল নাম সরবজিৎ কৌর। তিনি গ্রেট খালিকে দেখে রেসিলিং শুরু করেন। পরে খালি যখন ২০১৫ সালে জলন্ধরে নিজের রেসলিং ট্রেনিং স্কুল খোলেন সেখানে তিনি প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। এবং খালিই তাঁকে বিবি বুলবুল নামটি দিয়েছিলেন। 

অন্যদিকে ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর DNA-র একটি প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি কবিতার পুরো নাম কবিতা দেবি দালাল। তিনি হরিয়ানার জিন্দ জেলার বাসিন্দা। তিনি ২০১৬ সালে খালির রেসলিং ট্রিনং স্কুলে যোগ দেন এবং ২০১৭ সালে তিনি প্রথম ভারতীয় মহিলা কুস্তিগীর হিসাবে WWE-র সঙ্গে সাইন করেন। আর WWE-তেও তিনি গেরুয়া পোশাক পরে রেসলিং করতেন।

Advertisement

এর খেকে প্রমাণ হয় ভাইরাল ভিডিয়োতে যে মহিলা কুস্তিগীরকে দেখা যাচ্ছে তিনি আসলে পাকিস্তানি নন বরং ভারতের পাঞ্জবের বাসিন্দা বিবি বুলবুল তথা সরবজিৎ কৌর। অন্যদিকে গেরুয়া পোশাক পরা যে মহিলা বিবি বুলবুলের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন তাঁর নাম কবিতা বিজয়লক্ষ্মী নয় বরং কবিতা দেবি দালাল। তিনি তামিলনাড়ুর নয় হরিয়ানার বাসিন্দা। একই সঙ্গে ভাইরাল ভিডিয়োটি দুবাইয়ের নয় বরং পঞ্জাবের জলন্ধরের।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

পাকিস্তানি কুস্তিগীরের ওপেন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে তাঁকে ব্যপকভাবে মারলেন ভারতীয় মহিলা।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিয়োতে যে মহিলা কুস্তিগীরকে দেখা যাচ্ছে তিনি পাকিস্তানি নন বরং ভারতের পাঞ্জবের বাসিন্দা বিবি বুলবুল তথা সরবজিৎ কৌর। অন্যদিকে তাঁর চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছেন কবিতা দেবি দালাল। তিনি তামিলনাড়ুর নয় হরিয়ানার বাসিন্দা।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement