হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বা স্কুলে ছাত্রীদের ক্লাস করতে বাধা দেওয়ার ঘটনা বিশ্বে নতুন নয়। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের কেরলে হিজাব পরে স্কুলে যাওয়ার জন্য ক্লাসে ঢুকতে পারেনি একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। কেরলের কোঝিকোড়ের ওই ঘটনার প্রতিবাদে সেই সময় সংশ্লিষ্ট স্কুলের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে মুসলিম সংগঠনগুলি। এই একই ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালের অগস্ট মাসে মুম্বইয়ের একটি কলেজে। সেখানে বোরখা পরা ছাত্রীদের কলেজে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
তবে সেই সব ঘটনা এখন অতীত। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে হিজাব বিতর্কের অন্য একটি ভিডিয়ো। তাতে দেখা যাচ্ছে, কিছু মহিলা পুলিশ কয়েকজন হিজাব পরিহিতা মেয়েকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্ছে। ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসায় ভারতে ছাত্রীদের উপর অত্যচার করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিয়োটি পোস্ট করে সেটির ফ্রেমের উপরে লিখেছেন, “হিজাব পড়াকে কেন্দ্র করে ভারতের বিশ্ব বিদ্যালয়ে চলছে দমন - পীড়ন।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। এই ধরনের আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োর দাবিটি বিভ্রান্তিকর ও অর্ধসত্য। ভিডিয়ো যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের হিজাব পরার জন্য নয় বরং সিএএ-র বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করার জন্য আটক করেছে পুলিশ।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত, সম্প্রতি যদি ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরে আসার জন্য ছাত্রীদের বাধা দেওয়া ও আটক করা হতো তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু ইন্ডিয়া টুডের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি যা থেকে প্রমাণ হয় যে, সম্প্রতি ভারতের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব পরে আসার জন্য ছাত্রীদের বাধা দেওয়া হয়েছে।
এরপরে ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা জানতে আমরা ভিডিয়োটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা গত ১২ মার্চ এক ‘এক্স’ ব্যবহারকারীর ওয়ালে এই একই ভিডিয়োটি দেখতে পাই। সেখানে তিনি ভিডিয়োটি শেয়ার করে লিখেছেন, মুসলিমদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করার উদ্দেশ্যে তৈরি সিএএ ও এনআরসি-র বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ করার সময় পুলিশের হাতে নিগৃহীত ছাত্রীসহ অন্যান্য সমাজকর্মীরা।
The state agency once again repressed the voice of dissent and democracy, exhibiting its usual behavior. Women activists and students were mishandled and beaten, improperly thrashed to the point where Sanghi spectators joined the police in venting 1/n#DelhiUniversity pic.twitter.com/vGht15HpJx
— Hashim Azmi (@hashimjournal) March 12, 2024
এই সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত জানতে উপরে উক্ত ‘এক্স’ ব্যবহারকারীর থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে আমরা পুনরায় একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন আমরা গত ১২ মার্চ লেটেস্টলির তরফে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে লেখা হয়েছে, সিএএ বাস্তবায়নের প্রতিবাদে ১২ মার্চ বামপন্থী ছাত্র সংগঠন অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (এআইএসএ)-এর নেতৃত্বে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে একটি বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করা হয়। সেই সময় বিক্ষোভরত ৫০ জন ছাত্রীকে আটক করে পুলিশ।
আমরা আমাদের সার্চে গত ১৩ মার্চ এই একই ভিডিয়ো খুঁজে ‘DU Updates’ নামক একটি ইনস্টাগ্রাম পেজেও। সেখানে ভিডিয়োটি পোস্ট করে উল্লেক করা হয়েছে, সিএএ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৬০ জন শিক্ষার্থী আটক করেছে দিল্লি পুলিশ।
এর থেকেই প্রমাণ হয় যে, ‘হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসায় ভারতে ছাত্রীদের উপর অত্যচার’ দাবি করে শেয়ার করা ভিডিয়োটি বিভ্রান্তিকর ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আসলে সেটি সিএএ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের প্রতিবাদ ও আটকের ঘটনার ভিডিয়ো।
হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসায় ভারতে ছাত্রীদের উপর অত্যচার করা হচ্ছে।
হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসায় ভারতে ছাত্রীদের উপর অত্যচার দাবি করে ভাইরাল সিএএ বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের প্রতিবাদের ভিডিয়ো।