হাওড়ায় ট্রেন থামলেই ধর্মতলাগামী লোকজন ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকে হাঁটা দিচ্ছেন। সেখান থেকেই সোজা ঢুকে যাওয়া যাচ্ছে দেশের সবথেকে গভীরতম মেট্রো স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। কিন্তু সেখানে ঢুকে দেখা যাচ্ছে শুধু মেট্রোয় ওঠার জন্য লম্বা লাইন পড়ছে গেটগুলির মুখে। প্রতিটি ব্যাগ স্ক্যান করে তারপর ঢোকা যাচ্ছে। টিকিট কাউন্টার হাতেগোনা কয়েকটি খোলা। তাই টিকিটের জন্যও সর্পিল লাইন। টিকিট পেতে ২০ থেকে ৩০ মিনিটও লাগছে। কোথাও কোনও মেট্রো কর্মী, কোনদিক দিয়ে কোথায় যাবেন যাত্রীরা, বুঝে উঠতে পারছেন না। বেসরকারি সংস্থার নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে কর্মীর অভাব পূরণ করা হয়েছে। যার জেরে যারা গঙ্গার নীচের মেট্রোকে শুধুই জয়রাইড বলে মনে করে আসছেন, তাঁদের সমস্যা নেই। কিন্তু অফিস যাত্রীদের কাছে এই মেট্রো মানেই লেট হওয়ার প্রবল চান্স।
হাওড়ার বিভিন্ন ট্রেন এসে থামছে। নামছেন কোলাঘাট থেকে অন্ডাল বা খড়্গপুর থেকে আসানসোলের মানুষজন। বহু মানুষ বেরিয়ে বাস না খুঁজে চড়ে বসছেন মেট্রোয়। পিছিয়ে নেই ভিনরাজ্যের আগন্তুকরাও। পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া ডিআরএম অফিস-এর ঠিক পিছনে তৈরি হয়েছে মেট্রো রেলওয়ের এই ভূগর্ভস্থ স্টেশন। তীব্র দাবদাহ বা ভ্যাপসা গরমের প্যাচপ্যাচানি উপেক্ষা করে নির্ঝঞ্জাটে অতি দ্রুত ও পকেটের রেস্ত বাঁচিয়ে যদি কেউ কলকাতার প্রাণকেন্দ্র ধর্মতলায় পৌঁছাতে চান তবে তাঁদের সাদরে স্বাগত জানাচ্ছে হাওড়া মেট্রো স্টেশন।
শহরতলির যাত্রীদের সুবিধার্থে পূর্ব রেলওয়ের হাওড়া স্টেশনে ইতিমধ্যে লেগে গেছে মেট্রো স্টেশনের দিক-নির্দেশক নীল বোর্ড। বোর্ডের তীর চিহ্ন অনুসরণ করে শহরে ঘুরতে আসা আনকোরা যাত্রীরাও খুব সহজে হাওড়া স্টেশনের বড় ঘড়ির দিকে এক ঝলক তাকিয়ে সময় মেপে নিয়ে, বড়ব্লেডের সিলিং ফ্যানের হওয়া খেতে খেতে , দেশি-বিদেশি খাবারের সুঘ্রাণের মায়াবী আহ্বান উপেক্ষা করে দ্রুত পদ-সঞ্চারণে সহজে খুঁজে নিতে পারছেন বহু আলোচিত হাওড়া মেট্রো স্টেশন।
মাটির নীচের প্ল্যাটফর্মে নামার জন্য এখানে রয়েছে একাধিক এসকেলেটর ও লিফট। কিন্তু সাইনেজ কম। কর্মীও তেমন নেই, যাকে জিজ্ঞেস করে যাত্রীরা টিকিট কাউন্টার বা কার্ড রিচার্জের দিকে এগোবেন। মেট্রো ধর্মতলা জংশন স্টেশনে পৌঁছনোর পর কোনদিকে এগোবেন যাত্রীরা, বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সেখানেও কর্মী কম। অনেকেই ভুল করছেন।
মেট্রোর তরফে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৭ দিনে হাওড়া মেট্রো স্টেশনে যাত্রী হয়েছে ৩,১৪,৪৫৯। জনস্রোতের বহর দেখে অনায়াসেই বলে দেওয়া যায় যে আগামীদিনে এই সংখ্যা লাফিয়ে বাড়বে। কিন্তু অফিস যাত্রী বা স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের কোনও সুবিধে হচ্ছে কী?