এসির বিক্রি আচমকাই লাফ দিয়ে বেড়েছে কলকাতায়। নগদ টাকা না থাকলেও কিস্তিতে এসি কিনছেন একটা বড় অংশের মানুষ। সাধারণত কোনো এলাকার তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মৃদু দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে বলে ধরা হয়। তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে সেখানে মাঝারি দাবদাহ এবং ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে তীব্র দাবদাহ চলছে বলে ধরা হয়। আর কলকাতায় তো টানা প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস চলছে। গরমের কষ্ট থেকে রেহাই পেতে অনেকেই এসি কিনে ফেলছেন। কিন্তু আচমকা এত এসি বিক্রিতে চিন্তায় কলকাতা পুরসভা। জানা যাচ্ছে, পুরসভার তরফে এসি কম কেনার আবেদন করা হবে শহরবাসীকে। পরিবার পিছু একটি এসি, এই প্রচারও করা হবে।
চাদঁনি চকের এক এসি বিক্রেতা জানালেন, ‘অন্য সময়ে গরমকালে আমাদের রোজ দু–তিনটে করে এসি বিক্রি হতো। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে দিনে ১৫–২০টা করে এসি বিক্রি হচ্ছে। এই রবিবার সবচেয়ে বেশি ২৫টি এসি বিক্রি হয়েছে।’
তবে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে এসি কিনলেও তা ইনস্টেলেশন বা বসাতে এখন খানিকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। অনেকেই বলছেন, সকালে এসি কিনে বিকেলেও বসানোর লোক মিলছে না। অন্তত ৪-৫ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যে পরিমাণে এসি বিক্রি হচ্ছে, তার তুলনায় টেকনিশিয়ান কম রয়েছে। যেহেতু তারা পর্যায়ক্রমে কাজ করছেন, তাই একটু অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
রাজ্যে শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনারের চাহিদা প্রতিবছরই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে এর উৎপাদন। এসির দাম মধ্যবিত্তের নাগালে আসায় এই যন্ত্রের বাজারও বড় হচ্ছে। বছর দশেক আগেও দেশের এসির বাজার ছিল উচ্চবিত্তকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। আর সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গরম।
আগুন ঝড়ানো দাবদাহের কারণ হিসেবে অতিরিক্ত এসির ব্যবহারকেও দায়ী করছেন পরিবেশবিদরা। অনেকের দাবি, হাইড্রোফ্লুরোকার্বন এবং ক্লোরোফ্লুরোকার্বন, নাইট্রাস অক্সাইডের মতো গ্যাসগুলি এসি থেকে নির্গত হয়। যা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী। এতে ওজ়োন স্তরে ক্ষতি হয়।
বিষয়টিতে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (পরিবেশ) স্বপন সমাদ্দার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুরসভার তরফে এসির কম ব্যবহারে উৎসাহ দিতে প্রচার করা হবে। পুরসভা চায় মানুষ এসির ব্যবহার কমিয়ে দিক। একটি বাড়িতে একটি এসি থাকুক। কিন্তু দেখা যাচ্ছে একটি বাড়িতে ৩-৪টে এসির ব্যবহার হচ্ছে। বিষয়টিতে প্রচার করবে কলকাতা পুরসভা।
কলকাতায় মূলত মার্চ থেকেই গরম শুরু হয় এবং বেশিসংখ্যক এসি বিক্রি শুরু হয়। তবে চলতি বছরের মার্চ মাসে গরম বেশি পড়েনি। ফলে ক্রেতারা এসির বাজারে ঢুকতে শুরু করেননি। তবে গত কয়েক দিনের দাবদাহের ফলে এসির দোকান গুলিতে ক্রেতার সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। বাজার ঘুরে জানা যাচ্ছে, ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকা দামের এসির চাহিদা বেশি। এ ছাড়া গ্রাহকেরা সহজ মাসিক কিস্তিতে এসি কিনছেন। কিন্তু পুরসভা চায়, এসির ব্যবহার কম করুক মানুষজন। কিন্তু যা গরম পড়েছে এবছর, পুরসভার আবেদন শুনবে কলকাতাবাসী ?
আরও পড়ুন-তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা, তার মাঝেই শিলাবৃষ্টি! কোন কোন জেলায়?