হরে পুজোর আমেজ চারদিকে। আর এর মাঝেই শহরবাসীকে দুর্গাপুজোর উপহার দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ টালা ব্রিজের উদ্বোধন করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় আড়াই বছর পর খুলে যাচ্ছে উত্তর কলকাতার অন্যতম ব্যস্ত এই পথ। নতুন তৈরি হওয়া টালা ব্রিজকে নিয়ে এখন সাধারণ মানুষের তাই উৎসাহের শেষ নেই। জানা যাচ্ছে নতুন সেতুটি ১২টি স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে রয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় সেতুতে কোনও নাট বোল্টের ব্যবহার হয়নি। আগামী ১০০ বছরের স্থায়িত্বের কথা চিন্তা করেই এই সেতু বানিয়েছেন ইঞ্জিনিয়াররা৷ তবে ব্রিজ খুললেও আপাতত বড় গাড়ি ও লরি চলবে না টালা ব্রিজ দিয়ে। কেবলমাত্র ছোট গাড়ি চলবে। কয়েকদিন পর্যবেক্ষণের পর বড় গাড়ি চলার অনুমতি দেবে প্রশাসন। ততদিন বাস চলবে পুরনো রুটেই।
চার লেনের নতুন টালা সেতুর বৈশিষ্ট্য
সেতুটি তৈরি হয়েছে খুবই আধুনিক প্রযুক্তিতে। কোনও নাট-বোল্ট ব্যবহার করা হয়নি। এর ফলে কাঠামোর স্থায়িত্ব অনেকটাই বেড়েছে। সেতুটি সংস্কারে খরচ হয়েছে প্রায় ৪৬৮ কোটি টাকা। নতুন টালা সেতুটি প্রায় ১ কিলোমিটার লম্বা। সূত্রের খবর, প্রায় সাড়ে সাতশো মিটার দীর্ঘ সেতুটি ১২টি স্তম্ভের উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই ব্রিজের ২৪০ মিটার অংশ রেলপথের উপরে তৈরি হয়েছে। চার লেনের নতুন সেতুর দু’দিকে অ্যাপ্রোচ রোড তৈরি করতে রেলের জমিতে থাকা ৩৮টি আবাসনও ভাঙা হয়েছে। রাজ্য সরকার -রেলের পাশাপাশি, খড়গপুর আই আই টি-র বিশেষজ্ঞরা এই সেতুর যাবতীয় খুঁটিনাটি পদ্ধতি দেখেছেন। বর্তমান সময়ে যে সংখ্যক গাড়ি চলাচল করে, সেটা মাথায় রেখেই নকশা করা হয়েছে নতুন টালা সেতুর আ৷গামী ১০০ বছরের স্থায়িত্বের কথা চিন্তা করেই তৈরি করা হয়েছে সেতুটি।
সমস্যার সমাধান হবে উত্তর কলকাতাবাসীর
১৯৬২ সালে এই টালা ব্রিজ তৈরির পর থেকেই মিটে যায় উত্তর কলকাতা ও শহরতলীর যাতায়াতের অসুবিধা। ১৫০ টন ভার বহনের ক্ষমতা ছিল পুরোনো ব্রিজের। তবে যানবাহনের চাপ বেড়ে যাওয়ায় ৫০ বছর পরেই ব্রিজের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে ওঠে। ২০১৯ সালে পুজোর সময় টালা ব্রিজে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। পাশাপাশি ভারী যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরের বছর টালা ব্রিজে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শুরু হয় ব্রিজ ভাঙার কাজ। ফলে দীর্ঘ সময় থেকেই বন্ধ এই ব্রিজ। গত দু'বছর ঘুরতি পথে উত্তর কলকাতার মানুষের যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে এই ব্রিজ চালু হয়ে গেলে সেই সমস্যার সমাধান হবে। এই সেতু চালু করে শুধু কলকাতায় নয়, উত্তর ২৪ পরগনার মানুষও উপকৃত হবেন। তাই ব্রিজ খুলে যাওয়ার অপেক্ষায় দীর্ঘদিন থেকেই দিন গুনছিলেন উত্তর কলকাতার একটা বড় অংশের মানুষ। উত্তর কলকাতার মানুষদের শহরের একাধিক প্রান্তের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থাও এর ফলে আরও মসৃণ হবে। একইসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে কলকাতার প্রত্যক্ষ যোগাযোগও অনেকটা সহজ হবে। শ্যামবাজার, চিৎপুর এবং সিঁথির দিকে ব্রিজ থেকে নামার জন্য সিড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে।
পুজোর সময় যানজট থেকে রেহাই মেলার সম্ভাবনা কম
তবে আপাতত ছোট গাড়ি টালা ব্রিজে চলবে। ফলত টালা ব্রিজের ওপর দিয়ে আগে যেসব রুটের বাস চলত তা গত দুবছর ধরে যে পথে চলছিল তাই চলবে। অর্থাৎ, বি টি রোড ধরে কলকাতার দিকে আসা সব বাসই হয় চিড়িয়ামোড় দিয়ে নর্দার্ন অ্যাভিনিউ হয়ে, নয়তো পাইকপাড়া দিয়ে টালা পার্কের দিক দিয়ে শহরে চলবে। বেলগাছিয়া সেতু হয়ে আর জি কর হাসপাতালের সামনের দিয়েই শ্যামবাজারের দিকে যাবে বাসগুলি। পাশের ক্যানাল ইস্ট বা ওয়েস্ট রোড দিয়েও যাওয়া যাবে। তবে পুজোর সময় সব জায়গাতেই গাড়ির লম্বা লাইন পড়বে।