জেএমবি (JMB) জঙ্গি সন্দেহে খাস কলকাতা থেকে এসটিএফ-এর হাতে ধরা পড়েছে ৩ জন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী জিজ্ঞাসাবাদে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে, ধৃতদের মধ্যে দু'জন প্রায় আড়াই-তিন বছর আগেই কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঘাঁটি গাড়ে। তৃতীয়জন মাস দেড়েক আগে, অর্থাৎ লকডাউনের মাঝে বসিরহাট সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছেছে। আর এই তথ্য সামনে আসার পরেই কার্যত কপালে চিন্তার ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে তদন্তকারীদের। কারণ এখান থেকে স্বাভাবিকভাবেই দুটি প্রশ্ন উঠে আসছে তদন্তকারীদের সামনে। প্রথমত, নিরাপত্তা বাহিনীর নজর এড়িয়ে কীভাবে তারা সীমান্ত পেরিয়ে এদেশে এল? আর দ্বিতীয়ত, যে ব্যক্তি লকডাউনের মাঝে এদেশে এসেছে, সে কীভাবে কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছাল, এবং পুলিশের নজর এড়িয়ে কীভাবে সেখানে বসবাস শুরু করল?
এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যখন ধৃতদের লাগাতার জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা, ঠিক সেই সময়েই এই ইস্যুতে নতুন করে তর্জায় জড়িয়ে পড়ল শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস (TMC) ও রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। এই প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসুর (Sayantan Basu) অভিযোগ, "জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গে পলিটিক্যাল প্রোটেকশান পায়। আর এই প্রোটেকশান দেয় এখানকার শাসকদল।" বিজেপি নেতা বলেন, "অনুপ্রবেশ যে একেবারেই হচ্ছে না তা নয়, তবে আগের চেয়ে কমেছে। কিন্তু জঙ্গিরা যেভাবে কলকাতায় থাকছে তা চিন্তার বিষয়। রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানানর জন্য যে ভূমিকা নিয়েছে এটা তার আরও একটা পদক্ষেপ।" এর নেপথ্যে মূলত ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি রয়েছে বলেই দাবি সায়ন্তন বসুর।
পালটা তৃণমূলের যুব নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যের (Bebangshu Dhattacharya) দাবি, "যারা ধরা পড়েছে তারা এর আগে কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানা ঘুরে বাংলায় এসেছে। কিন্তু সেই ৩ রাজ্যের পুলিশ তাদের ধরতে পারেনি। বাংলার পুলিশ ধরেছে।" একইসঙ্গে লকডাউনের মাঝে কিভাবে ধৃতদের মধ্যে একজন সীমান্ত পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছাল এবং পুলিশের নজর এড়িয়ে শহরে বসবাস শুরু করল সেই প্রশ্নের উত্তরে দেবাংশুর জবাব, "লকডাউনে চিকিৎসাগত কারণে ছাড় গিয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। যে জঙ্গিরা ভুয়ো আধার কার্ড, ভোটার কার্ড যোগার করতে পারে তাদের কাছে ভুয়ো মেডিক্যাল সার্টিফিটেক যোগার করা কোনও বিষয় নয়।"
এদিন সীমান্ত সুরক্ষা নিয়েও কেন্দ্র তথা বিজেপিকে (BJP) খোঁচা দেন দেবাংশু। কেন্দ্রকে তাঁর পরামর্শ, "সিআরপিএফ অফিসারদের বিজেপি নেতাদের নিরাপত্তার কাজে ব্যবহার না করে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ-নেপাল, এই দুটি সীমান্ত আটকানর ব্যবস্থা করা হোক।" এক্ষেত্রে দেবাংশুর সাফ কথা, "কেন্দ্র সীমান্ত খুলে রাখবে, আর রাজ্যকে তার মাশুল দিতে হবে, এটা বারবার হতে পারে না।" এখন দেখার শাসক-বিরোধী বাকযুদ্ধের মাঝেই ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও কী কী তথ্য উঠে আসে তদন্তকারীদের হাতে।