সংখ্যালঘু-বহুল সাগরদিঘিতে উপনির্বাচনে হেরেছে তৃণমূল কংগ্রেস। একুশের নির্বাচনের পর মাত্র ২২ মাসে কমে গিয়েছে শাসক দলের ভোটের হার। সংখ্যালঘুদের মধ্যে কি সরকারকে নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে? বিশেষ করে কলকাতার রাজপথে নওশাদ সিদ্দিকির গ্রেফতারি হোক বা আনিসকাণ্ডে ধাক্কা খেয়েছে সরকার। এই প্রেক্ষাপটে আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগে ভাঙড়ে চিন্তা বেড়েছে শাসক দলের। গোদের উপর বিষফোঁড়া তৃণমূলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। শনিবার স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তৃণমূলের রাজ্য-সভাপতি সুব্রত বক্সি। সেখানেই শওকত মোল্লাকে ওই এলাকার পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূলের রাজ্য-সভাপতি সুব্রত বক্সির বাড়িতে বৈঠকে বসেন আরাবুল ইসলাম, কাইজাররা, শওকতরা। ওই বৈঠকেই শওকত মোল্লাকে ভাঙড়ের পঞ্চায়েত ভোটে পর্যবেক্ষক করা হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে স্থির হয়েছে ভাঙড়ে কোনও ধরনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা কোন্দল বরদাস্ত করা হবে না। এলাকার নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন শওকত মোল্লা। পঞ্চায়েতের প্রার্থী ঠিক করবে দলই। তা নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মত লাগবে না বলে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এ দিন শওকত বলেন,'আগামিকাল আমি ফুরফুরা শরিফে যাব। মুখ্যমন্ত্রীর জনহিতকর প্রকল্প ভাঙড়ের মানুষের কাছে তুলে ধরব।'
আরও পড়ুন- বাড়ছে বাম, কমছে BJP, ভোটের পাটিগণিতে পিছিয়ে কৌশল বদল শুভেন্দুর?
শনিবার ভাঙড়ের শীর্ষস্থানীয় সব নেতাদের নিয়ে বৈঠক হয় তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বের। তবে ভাঙড়ে তাঁদের দায়িত্ব নিয়ে তিনি যে ভাবিত নন, তা জানিয়ে নওশাদ বলেন, ‘‘ভাঙড়ে কে দায়িত্ব পাচ্ছেন, কে অব্যাহতি নিচ্ছেন না, তা নিয়ে ভাবিত নই। আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছি। ভাঙড়ের মানুষকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছিল দীর্ঘ দিন। সেই শৃঙ্খল মুক্ত করেছি। মানুষ তাঁর গন্তব্য খুঁজে নেবে।’’ আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে উন্নয়নের লক্ষ্যেই ভাঙড়ের দায়িত্ব অভিষেক নিন। সঙ্গে মমতাও থাকুন বলে মন্তব্য নওশাদের। তাঁর কথায়,'দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ পঞ্চায়েত চায় ভাঙড়। পঞ্চায়েতের টাকা উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করা যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। দায়িত্ব নেওয়ার হলে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বা দলের সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড অভিষেক ব্যানার্জি ভাঙড়ের দায়িত্ব নিন।'
ভাঙড় ও সংলগ্ন এলাকার অধিকাংশই সংখ্যালঘু। আশেপাশের হাড়োয়া, বসিরহাট ও মিনাখায় সংখ্যালঘু ভোট হার-জিত নির্ধারণ করে। পঞ্চায়েত তো বটেই লোকসভা ভোটেও শাসক দলের জন্য সংখ্যালঘু ভোট নির্ণায়ক শক্তি। ভাঙড়ে দাপট বেড়েছে আইএসএফের। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের অভাব-অভিযোগ শোনায় মন দিয়েছে শাসক দলও। এই প্রেক্ষাপটে আগেভাগেই ভাঙড়ের রণনীতি তৈরি করতে নামল তৃণমূল। মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।