রাজ্যপাল হিসাবে এরাজ্যে আসার পর থেকে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে তাঁর দ্বৈরথ বারবার প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিকবার রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জগদীপ খনখড়। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি বলতে ছুটে গিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের কাছেও। উত্তরবঙ্গ সফরে গিয়ে গত কয়েকদিন একাধিকবার রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়ে ট্যুইট করতে দেখা গেছে রাজ্যপালকে। বরাবরই এরাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার প্রসঙ্গ তুলেছেন তিনি। আর এই নিয়ে রাজ্যপালের নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে একাধিকবার প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল শিবির। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বাঁকুড়ার জনসভাতেও নাম না করে রাজ্যপালের ট্যুইট করা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যাপধ্যায়। তবে বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের দ্বৈরথ এক নতুন মাত্রা পেল। এবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি পথে হাঁটার হুঁশিয়ারি দিল তৃণমূল কংগ্রেস।
এরাজ্যে ভোট যতই এগিয়ে আসছে ততই রাজনৈতিক দলগুলির একে অপরের বিরুদ্ধে কাদা ছোড়াছুড়ি যেমন বাড়ছে, তেমনি সক্রিয় হচ্ছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। আর ধনখড়ের সেই ট্যুইট নিয়েই এবার ময়দানে নামতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। সম্প্রতি এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর নথি জাল করে ‘তোলাবাজি’-র মামলায় গ্রেফতার হন স্বঘোষিত ব্যবসায়ী সুদীপ্ত রায়চৌধুরী। বিধাননগর উত্তর থানায় সুদীপ্তর বিরুদ্ধে এ বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করা হয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তরফে।অভিযোগে জানানো হয়েছিল, ইডি-র নথি জাল করে প্রতারণা করা হয়েছে অনেকের সঙ্গে। তদন্তে উঠে আসে, ওই নথি কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং নেতাকে ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করা হত। মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের পর বিধাননগর উত্তর থানা সুদীপ্তকে গ্রেফতার করে। তার আগে সুদীপ্তর বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। এরআগে রোজভ্যালি কাণ্ডে ইডির হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছিল সুদীপ্তকে। তৃণমূলের অভিযোগ গরু পাচার ও মানুষ পাচারের মত ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সুদীপ্ত। ইডির অভিযোগের ভিত্তিতেই তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর সেই অপরাধীকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন রাজ্যপাল।
এদিকে বুধবার ফের ট্যুইটারে সক্রিয় হতে দেখা যায় রাজ্যপালকে। রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে পরপর ৩টি ট্যুইট করেন রাজ্যপাল। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রাজ্যপালের বক্তব্য ছিল, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারে আমলে বিভিন্ন নিয়ম ভাঙছে পুলিশ। তাঁরা সংবিধানের আওতার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন এবং আইনের নিয়ম নিয়ে খেলছেন। নিজেদের আইনের ঊর্ধ্বে বলে মনে করা অত্যন্ত হতাশাজনক। আইন লঙ্ঘনকারীদের বাঁচানোর জন্য দল তৈরি করা গুরুতর অপরাধ।’ ট্যুইটে বর্তমান এডিজি আইনশৃঙ্খলা জ্ঞানবন্ত সিংয়ের বিরুদ্ধে পুরনো মামলার প্রসঙ্গ টেনে আনেন ধনখড়। তাঁর অভিযোগ, এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং রাজ্য পুলিশের ডিজি। এই মামলার তদন্তে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ এবং রিনা মিত্রের ভূমিকা কী তা নাম উল্লেখ করে জানতে চেয়েছেন রাজ্যপাল। সেই ট্যুইট নিয়েই এবার ময়দানে নামল তৃণমূল কংগ্রেস। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, সুদীপ্ত রায়চৌধুরীর মত ক্রিমিনালদের আড়াল করতেই ট্যুইটারে পুলিশকে হুমকি দিয়েছেন রাজ্যপাল। সরকারি কর্মীদের কাজে বাধা ও হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কলকাতা পুলিশকে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পরামর্শও দেন দুঁদে আইনজীবী কল্যাণ।
তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ভারতীয় সংবিধানের ১৮৬ ও ১৮৯ ধারায় মামলা দায়ের করার ক্ষমতা রয়েছে কলকাতা পুলিশের। এরজন্য আগাম অনুমতির প্রয়োজন নেই। এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ২ বছরের কারাবাসের বিধানও রয়েছে। এর আগে পাহাড় সফরের প্রথমে দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে কড়া ধমক দিয়েছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সরকারি আধিকারিকের পদে বসে তাঁরা রাজনৈতিক কর্মীর মতো আচরণ করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। একাধিকবার পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সরকারের পদানত হয়ে কাজ করার অভিযোগ তুলেছেন রাজ্যপাল। এবার সেই পুলিশ বাহিনীকেই সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিল শাসক তৃণমূল কংগ্রেস।