জল্পনার অবসান। আর কিছুক্ষণের মধ্যে তৃণমূলে ফিরতে চলেছেন মুকুল রায়। সঙ্গে তাঁর পুত্র শুভ্রাংশু রায়। নির্বাচনের এক মাসের মধ্যে মুকুলের পুরনো দলে প্রত্যাবর্তন স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্য রাজনীতিতে সাড়া ফেলে দিয়েছে। বিধানসভা ভোটের পর থেকেই রাজ্য বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন মুকুল রায়। ২০১৭ সালে ৩ নভেম্বর বিজেপিতে যোগ দেন মুকুল রায়। তৃণমূল থেকে বিজেপি আসা নেতাদের মধ্যে সেইসময় সবথেকে হেভিওয়েট নামটি অবশ্যই মুকুল রায়ের। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে তাঁর পুত্র শুভ্রাংশ রায় বিজেপিতে যোগ দেন। কিন্তু সাড়ে ৪ বছরে গেরুয়া শিবিরে একাধিক সমস্যায় পোহাতে হয়েছিল মুকুল রায়কে। এমনটাই দাবি অনুগামীদের।
দীর্ঘদিন কোনও পদই পাননি মুকুল
বিজেপিতে ২০১৭ সালে যোগদানের পরে দীর্ঘদিন কোনও পদই পাননি মুকুল। সেই নিয়ে দিল্লির শীর্ষ নেতাদের অনুযোগও জানিয়েছিলেন তিনি। ২০১৮ রাজ্য পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের বিজেপির হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সামলেছিলেন মুকুল। কিন্তু তারপরেই গুরুত্বপূর্ণ কোনও সাংগঠনিক পদই তাঁকে দেওয়া হয়নি। ক্ষোভ যে বাড়ছিল পরে তা অনুমান করতে পেরেছিল বিজেপির দিল্লির নেতারা। তাই সাড়ে ৩ বছর পরে অর্থাৎ ২০২০ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর মুকুল রায়কে সাংগঠনিক ক্ষেত্রে বড় পদ দেওয়া হয়। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি করা হয় মুকুল রায়কে।
আরও পড়ুন, 'তৃণমূূল ভবন যাচ্ছি,' শুভ্রাংশুকে নিয়ে রওনা দিলেন মুকুল রায়
পাননি সংগঠনের রাশ
২০১৯ লোকসভা নির্বাচন রাজ্যে বিরাট সাফল্য পায় বিজেপি। একলাফে সাংসদ সংখ্যা পৌঁছে যায় ১৮তে। ওই নির্বাচনে বেশ সক্রিয় ভাবেই কাজ করতে দেখা গিয়েছিল মুকুল রায়কে। এমনকি তৃণমূল থেকে বিজেপিতেও সেই সময়ে একাধিক নেতা এসেছিলেন। তাদের বেশ কয়েকজন জিতে সাংসদও হন। এই পুরো প্রক্রিয়ায় মুকুল রায়ের একটা বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। কিন্তু মুকুল শিবিরের দাবি, আশা করা হয়েছিল সংগঠনের রাশ এর পর হয়তো রায়বাবুকেই দেওয়া হবে। কিন্তু আদতে তা হয়নি।
নির্বাচনে কার্যত দেখা যায়নি মুকুলকে
২০২১ রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে কার্যত দেখা যায়নি মুকুল রায়কে। কৃষ্ণনগর উত্তরে তাঁকে প্রার্থী করে বিজেপি। সেই আসনেই তিনি নিজের প্রচারে সীমাবদ্ধ রেখেছেন। সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি। তৃণমূলের কৌশানি মুখোপাধ্যায়কে হারিয়ে জিতেও যান তিনি। কিন্তু জিতেও শেষ ১ মাস মুকুলকে সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। ২০০১ সালে শেষবার ভোটে লড়েছিলেন মুকুল রায়। তারপরে তিনি এবার বিজেপির হয়ে লড়লেন। মাঝে তৃণমূলে আগে থাকার সময়ে মূলত সংগঠনের দেখভাল ও শক্তিশালী করার কাজ করতেন তিনি। তাই নির্বাচনে লড়তেন না বলে দাবি। এবারের নির্বাচনে একটি আসনে তাঁকে প্রার্থী করে দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই প্রবল অসন্তুষ্ট হন মুকুল।
ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নেন মুকুল
২০২০ সালে ডিসেম্বরের প্রায় ৪৩ জন নেতাকে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারীর। তারপর থেকেই বিজেপিতে বাড়তে থাকে শুভেন্দুর প্রভাব। যে মুকুল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সাড়ে ৩ বছরে পরে বড় পদ পান, শুভেন্দু সেখান কয়েকমাসেই বিজেপিতে যোগ দিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার পদ পেয়ে গিয়েছেন। বিজেপিতে শুভেন্দুর প্রতিপত্তি দেখে ক্রমশ নিজেকে গুটিয়ে নেন মুকুল। বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে গোটা রাজ্যজুড়ে প্রচার করতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দুকে। সেখানে মুকুলকে দেখাই যায়নি।
অসুস্থ স্ত্রীয়ের খোঁজ নেয়নি বিজেপি
দীর্ঘদিন ধরে মুকুল রায়ের স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। মুকুল শিবিরের আক্ষেপ বিজেপির কোনও নেতা খোঁজ নেননি। সপ্তাহখানেক আগে আচমকা মুকুল রায়ের স্ত্রীকে দেখতে হাসপাতালে আসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সময়ে মুকুল রায় হাসপাতালে ছিলেন না। কিন্তু ছিলেন শুভ্রাংশ রায়। তাঁর সঙ্গে অভিষেকের বেশ কিছুক্ষণ কথা হয়। তারপরেই মুকুলের তৃণমূলে ফেরা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। এমনকি অভিষেককে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে ফেসবুক পোস্টও করেন শুভ্রাংশ রায়। মুকুল ও শুভ্রাংশুর তৃণমূলে ফেরা যে সময়ের অপেক্ষা তখনই তার ইঙ্গিত মিলেছিল।
দিলীপের সঙ্গে দূরত্ব
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি, রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে খুব একটা সম্পর্ক ভালো নয় মুকুল রায়ের। মূলত বিজেপিতে যোগ দিয়ে সংগঠনের দিকটা নিজের হাতেই রাখতে চেয়েছিলেন মুকুল। তাইজন্য পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের প্রবল খেটেছিলেন তিনি। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের আগে দেখা গেল ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর হাতেই সব রয়েছে। ফলে সেই বিষয়টিকেও ঘিরেই দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কার্যত বড় দূরত্ব তৈরি হয় মুকুলের।