রাতে গভীর ঘুমের পর সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীরের সমস্ত ক্লান্তি দূর হয় এবং শরীর প্রাণবন্ত লাগে। তাই বিশেষজ্ঞরা অন্তত ৭- ৯ ঘণ্টা গভীর ঘুমের পরামর্শ দেন। আসলে, পর্যাপ্ত ঘুম আপনার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাল ঘুম হলে, কিছু দীর্ঘস্থায়ী রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমতে পারে। মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, ওজন কম হয় এবং সেই সঙ্গে পেশির বিকাশ হতে পারে।
বর্তমান সময়ে এমন অনেক মানুষ আছে যাদের রাতে গভীর ঘুম হয় না। যার কারণে সারাদিন ক্লান্ত ও অলসভাব থাকে। এছাড়াও কিছু খাবার আছে, যেগুলি খেলে ঘুমের উন্নতি ঘটতে পারে এবং অনেক শারীরিক উপকারিতা রয়েছে। অনেক রাসায়নিক, অ্যামিনো অ্যাসিড, এনজাইম, পুষ্টি এবং হরমোন ঘুমের উন্নতির জন্য একসঙ্গে কাজ করে। যদি এইগুলি ধারণকারী খাবার খাওয়া হয়, তবে এটি গভীর ঘুমের উন্নতিতে সাহায্য করতে পারে।
একটি ভোক্তা পণ্য সংস্থার দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা অনুসারে, ভারতের প্রায় ৯৩ শতাংশ মানুষের পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় না। জীবনযাত্রার পরিবর্তন, রাতে দেরি করে খাওয়া, গ্যাজেট ব্যবহার এবং কম শারীরিক পরিশ্রমের কারণে এগুলি আরও বেশি হয়। গবেষণা অনুসারে, ৭২ শতাংশ ভারতীয় রাতে ১ থেকে ৩ বার জাগেন এবং তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ তাদের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ১১ শতাংশ লোক অসম্পূর্ণ ঘুমের কারণে কাজ থেকে ছুটি নেন এবং ১৯ শতাংশ ভারতীয়দের অসম্পূর্ণ ঘুমের কারণে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়।
আপনার যদি রাতে গভীর ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ঘুমানোর আগে উল্লেখিত জিনিসগুলি খেতে পারেন।
বাদাম
বাদামে মেলাটোনিন হরমোন ভাল পরিমাণে পাওয়া যায়। মেলাটোনিন একটি হরমোন যা, ঘুম এবং জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ২৮ গ্রাম বাদামে রয়েছে ৭৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম এবং ৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, যা পেশীগুলিকে শিথিল করে এবং ঘুম বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ইচ্ছা করলে ঘুমানোর আগে কিছু বাদাম খেতে পারেন।
উষ্ণ দুধ
অনেলে ঘুমানোর আগে গরম দুধ খান। কারণ দুধে চারটি ঘুম- প্রবর্তক যৌগ ট্রিপটোফ্যান, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি এবং মেলাটোনিন পাওয়া যায়। এই যৌগগুলি ঘুম বাড়াতে অনেক সাহায্য করবে। তাই রাতে ঘুমানোর আগে এক কাপ উষ্ণ দুধ পান করলে অনেক উপকার পাবেন। দুধ কম ফ্যাট থাকলে আরও ভাল।
আখরোট
আখরোটে মেলাটোনিন, সেরোটোনিন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো কিছু যৌগ থাকে যা ঘুমের উন্নতি ঘটায়। ১০০ গ্রাম আখরোটে রয়েছে ১৫৮ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ৪৪১ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৯৮ মাইক্রোগ্রাম ফোলেট এবং ৯৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। সুতরাং ইচ্ছা হলে, এটি কিছু পরিমাণে খেতে পারেন। আখরোটে মেলাটোনিনের পরিমাণ বেশি, তবে গবেষকরা এখনও আখরোট খাওয়ার সঙ্গে ঘুমের কোনও সম্পর্ক প্রমাণ করতে পারেননি।
চর্বিযুক্ত মাছ
স্যামন, টুনা এবং ম্যাকেরেলের মতো চর্বিযুক্ত মাছ স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়, যা গভীর ঘুমে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, একটি ৮৫ গ্রাম স্যামন খেলে প্রতিদিনের ভিটামিন ডি-র ৭১ শতাংশ সরবরাহ করে। এছাড়াও, স্বাস্থ্যকর ওমেগা -৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এই ধরনের মাছে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। যা, প্রদাহ কমাতে সাহায্য করতে পারে, হার্টকে রক্ষা করতে পারে এবং মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখে। তাই রাতের খাবারে চর্বিযুক্ত মাছ খেলে রাতে গভীর ঘুম হয়।
ক্যামোমাইল চা
ক্যামোমাইল চা হল এক প্রকার ভেষজ চা, পান করার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়, যা প্রদাহ কমাতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যামোমাইল চা পান করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এবং উদ্বেগ ও বিষণ্ণতাও কম হয়। এমন কিছু গুণ এতে রয়েছে, যা ঘুমের মান উন্নত করতে পারে। অতএব, আপনি যদি চান, এটি ঘুমানোর কিছু সময় আগে খেতে পারেন।