ভেন্টিলেশনে রয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ফুসফুসের সংক্রমণ এবং শ্বাসকষ্টেরর পাশাপাশি নিউমোনিয়াতেও আক্রান্ত রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। নিউমোনিয়া সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের, যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল বা কম তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে তরুণ, অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান লোকদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে। শীতকালে শিশুদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। নিউমোনিয়ার জীবাণু মানুষের ফুসফুস এবং শ্বাসতন্ত্রকে আক্রান্ত করে।
ফুসফুসের সংক্রমণের প্রভাবে যেসব অসুখে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের অন্যতম নিউমোনিয়া। এই অসুখে ফুসফুসে প্রদাহ তৈরি হয়, অনেক সময় ফুসফুসে জল জমতে পারে ফুসফুসে। নিউমোনিয়ার কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার শিশু ও বয়স্কের মৃত্যু ঘটছে। স্ট্রেপ্টোকক্কাস নিউমোনি নামের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের অন্যতম কারণ হলেও ভাইরাস বা ছত্রাকের প্রভাবেও এই অসুখ দানা বাঁধে শরীরে।
নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ
মূলত ক্রনিক ঠান্ডা লাগা, বুকে শ্লেষ্মা জমে থাকার সূত্র ধরেই এই অসুখ ছড়ায়। ঠান্ডা লাগলেই যে সবার নিউমোনিয়া হবে তা নয়, তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, মূলত, বয়স্ক ও শিশুরাই এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ
নিউমোনিয়ার প্রাথমিক লক্ষণ হলো প্রচণ্ড জ্বর। ওষুধে জ্বর কমলেও এর প্রভাব শেষ হতেই জ্বর বেড়ে যায়। ১০৩-১০৪ ডিগ্রি উঠতে পারে জ্বর। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ইত্যাদি তো থাকেই। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে ছুঁলেই নিউমোনিয়ার জীবাণু শরীরে ছড়ায় না। তবে আক্রান্তের কাশি বা হাঁচি থেকে ছড়াতে পারে নিউমোনিয়া। এই ‘ড্রপলেট ইনফেকশন’ থেকে বাঁচতে মাস্ক ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
নিউমোনিয়ার উপসর্গ
নিউমোনিয়ার উপসর্গগুলো নির্ভর করে শারীরিক অবস্থা এবং কী ধরনের জীবাণুর সংক্রমণ হয়েছে তার ওপর। এ রোগের কয়েকটি লক্ষণ-
জ্বর (রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের দুর্বল তাদের জ্বর নাও থাকতে পারে)
নিউমোনিয়া ও সাধারণ সর্দি-জ্বরের পার্থক্য
সাধারণ সর্দি-জ্বরের সঙ্গে নিউমোনিয়ার বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। একটু খেয়াল রাখলেই এই রোগ নির্ণয় করা সহজ। চিকিৎসকদের মতে, প্রথম দিকে সাধারণ জ্বর-সর্দি-কাশি দিয়ে নিউমোনিয়া শুরু হলেও পরে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও কশি বাড়ে। সাধারণত ভাইরাল ফিভার হলে যেখানে ওষুধ খেলে কমে যায় সেখানে নিউমোনিয়া হলেও তা সারতে চায় না। বুকের ব্যথাও বাড়তে থাকে। অনেক সময় জ্বরের ওষুধের কড়া ডোজে জ্বর নামলেও তা আবার ফিরে আসে। অবস্থা গুরুতর হলে কাশির সঙ্গে রক্তও উঠতে পারে। এসব লক্ষণ দেখা দিলেই দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। একমাত্র চিকিৎসকই বুঝতে পারেন কোনো ব্যক্তি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কি না। তবু নিশ্চিত হতে কিছু পরীক্ষা করাতে হয়। এক্স-রে, সিটি স্ক্যানও করে দেখা হয় অনেক সময়।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি কাদের?
নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে কী কী করবেন?
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা কী?
নিউমোনিয়ার চিকিৎসা এর ধরন, আপনার অবস্থার তীব্রতা এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা নিম্নলিখিত পদ্ধতি অবলম্বন করেন।
চিকিৎসকরা আপনাকে নিউমোনিয়ার লক্ষণগুলি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য ওষুধ দিতে পারেন। এই ওষুধগুলি নিউমোনিয়ার ধরন এবং কারণের পাশাপাশি এর তীব্রতার উপর নির্ভর করে। ব্যাকটেরিয়া নিউমোনিয়ার বেশিরভাগ রোগীর অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের মাধ্যমে সফলভাবে চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে আপনার অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সটি সম্পূর্ণ করা উচিত, এমনকি যদি আপনার লক্ষণগুলি উপশম হয় তাও অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সটি সম্পূর্ণ করতে হবে । এটি করতে ব্যর্থ হলে সংক্রমণ সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হবে না এবং নিউমোনিয়ার চিকিৎসা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসকে প্রভাবিত করে না। কিছু ক্ষেত্রে, ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ খেতে বলতে পারেন। এমন অনেক ক্ষেত্রেও দেখা যায় যখন ভাইরাল নিউমোনিয়া কয়েক দিনের বাড়িতে চিকিৎসার পরে নিজেই সেরে যায়। ছত্রাকজনিত নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা খেতে দেন অ্যান্টিফাঙ্গাল ওষুধ। সংক্রমণ পরিষ্কার করার জন্য আপনাকে কয়েক সপ্তাহ ধরে ওষুধ খেতে হতে পারে। ডাক্তার আপনাকে কাশি থেকে মুক্তি দিতে কাশির সিরাপও পরামর্শ দিতে পারেন। কাশির সময় বের হওয়া শ্লেষ্মা সাহায্যে আপনার ফুসফুস পরিষ্কার হয়ে যায়।
এ ছাড়া ওটিসি ওষুধও ব্যবহার করতে পারেন। এই ওষুধগুলি প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাওয়া যায়, তবে আমরা আপনাকে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার পরেই ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এই ওষুধগুলির মধ্যে রয়েছে অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন এবং অ্যাসিটামিনোফেন সল্ট।