প্রখ্যাত দুটি মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের উপর পরীক্ষা চালাচ্ছে। এই পরীক্ষায় যথেষ্ট উৎসাহজনক ফলাফল লক্ষ্য করা গেছে। বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল, ঘন জনবসতিতে তারা কীভাবে এই করোনার টিকাকরণের রূপরেখা তৈরি করবে। অন্যদিকে আবার বিশ্বের ধনী দেশগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি মাত্রায় ভ্যাকসিন জমা করে রাখার কারণেও একটা চাপ তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
একটি রিপোর্ট থেকে দেখা গেছে, গোটা বিশ্বে প্রায় পাঁচ কোটি ৩০ লক্ষ জনগণ এই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে মৃত্যু হয়েছে দশ লাখের।
মডার্না এবং ফাইজ়ার নামে দুটো সংস্থা করোনার এই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করছে। মার্কিন ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাসি বললেন, "আপাতত আপাতত আমাদের কাছে দুটো ভ্যাকসিন রয়েছে। আশা করা যায়, এই দুটো ভ্যাকসিনের মাধ্যমে আগামীদিনে করোনাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।"
মডার্না এবং ফাইজ়ার করোনার ভ্যাকসিন প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ট উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েছে। জানা গেছে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রথমে RNA প্রস্তুত করা হয়। RNA হল একধরণের মলিকিউল যা শরীরের বিভিন্ন কোষের মধ্যে অ্যান্টিজেন তৈরি করে। সাধারণ বাংলায় বলতে গেলে, শরীরের মধ্যে করোনা ভাইরাসের জেনেটিক কোডের অংশ ইনজেক্ট করা হয়। এতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে করোনার ভাইরাস খুব সহজে আক্রমণ করতে পারে না।
কিন্তু, এই ভ্যাকসিন বাজারে কতটা পাওয়া যাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় তৈরি হয়েছে। কারণ এই দুটো ভ্যাকসিনের জন্য মূলত ঠাণ্ডা জলবায়ুর অত্যন্ত প্রয়োজন, যা ভারতে পাওয়া যাবে না। মডার্নার জন্য মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ফাইজ়ারের জন্য মাইনাস ৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন।
এইমসের অন্যতম শীর্ষ কর্ণধার রণদীপ গুলেরিয়া বললেন, "ফাইজ়ার ভ্যাকসিনের জন্য মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার দরকার আছে। যা ভারতের মতো একটা উন্নয়নশীল দেশের কাছে একটা যথেষ্ট বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। বিশেষত দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে এই ধরনের কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা যথেষ্ট মুশকিল।"
এবার জেনে নিন এই ডোজ় প্রতি এই ভ্যাকসিনের দাম। মডার্না ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজ়ের দাম ২,৮০০ টাকা এবং ফাইজ়ার প্রায় ৩,০০০ টাকা। তবে সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ার সিইও আদার পুনাওয়ালা ইঙ্গিত দিলেন ভারতে এই ভ্যাকসিনের দাম ১,০০০ টাকার থেকে কম হবে। নিম্ন এবং মধ্য আয়সম্পন্ন দেশগুলোর জন্য অক্সফোর্ড ২২৫ টাকার মধ্যে এই ভ্যাকসিন নিয়ে আসার চেষ্টা করছে।
তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে যে ভ্যাকসিন আসার আনন্দে কেউ যেন করোনাকে নিয়ে ছেলেখেলা না করেন। প্রত্যেককেই সাবধনতা অবলম্বন করতে হবে। WHO-এর মহানির্দেশক টেড্রোস অ্যাডহোম বললেন, "এখন একেবারেই ঢিলে দেওয়ার সময় নয়। কোভিড টিকা সম্পর্কে উৎসাহজনক খবর পাওয়া গেলেও আগামী সময়ে করোনা নতুন বৈশিষ্ট্য নিয়ে হাজির হতে পারে। সেকারণে প্রত্যেককে আগে থেকে সতর্ক হতে হবে।"