আর মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরই বাগদেবীর আরাধনায় মেতে উঠবে গোটা বাংলা। যদিও এই পুজো ঘিরে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখা যায় স্কুল ও কলেজের পড়ুয়াদের মধ্যে। এই বছর সরস্বতী পুজো পড়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি। পুজোর দিন তো বাড়িতে বাড়িতে খিচুড়ি, বাঁধাকপির তরকারি, আলুর দম, কুলের চাটনি হয়ে থাকে। তবে পুজোর পরেরদিন আরেকটা লোভনীয় জিনিস হয় সকলের বাড়িতে তা হল গোটা সেদ্ধ। কিন্তু কেন সরস্বতী পুজোর পরই গোচা সেদ্ধ খাওয়ার চল রয়েছে? আসুন জেনে নিই।
গোটা সেদ্ধ কেন খাওয়া হয়
পঞ্চমীর তিথি কেটে যাওয়ার পর ঘরে ঘরে পালন করা হয় শীতল ষষ্টি। এই শীতল ষষ্টিতে মা-বোনেরা সন্তান ও সংসারের মঙ্গল কামনায় ব্রত করেন, সেই ব্রত ভঙ্গন করেন এই গোটা সেদ্ধ খেয়ে। এই চলকে অনেক জায়গায় অরন্ধনও বলা হয়ে থাকে। এই দিন বাঙালির ঘরে ঘরে অরন্ধন পালন করা হয়, সেই জন্য আগের দিন থেকেই এই গোটা সেদ্ধ রান্না করে রেখে দেওয়ার নিয়ম আছে। এছাড়াও এর একটি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিও আছে। এই সময়ে যেহেতু হাম, পক্স, চিকেন পক্স ইত্যাদি হতে দেখা যায় তাই গোটা সেদ্ধ খেয়ে শরীরকে ঠাণ্ডা রাখা হয়। ডাক্তাররাও এই গোটা সেদ্ধ খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এই খাদ্যটিকে কমর্ফট ফুডও বলা হয়।
গোটা সেদ্ধ তৈরির নিয়ম
এই গোটা সেদ্ধ বানানোর একটি নির্দিষ্ট নিয়মাবলী আছে। নতুন মরশুমি শাকসবজি যেমন শীষ পালং, গোটা মুগ, গোটা বেগুন, গোটা শিম, গোটা কড়াইশুঁটি, টোপা কুল, সজনে ফুল দিয়ে তৈরি হয় এই গোটা সেদ্ধ। পুজোর পর বিকেলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হাঁড়িতে করে চাপানো হয় গোটা সেদ্ধ। অনেকে মশলাও দিয়ে থাকেন। সবজি গুলো ফুটে গেলেই রান্না হয়ে যায় অতি সহজেই। কোন সবজি কাটা হয়না, সব কিছু গোটা গোটা দেওয়া হয়, তাই এর নাম গোটা সেদ্ধ। শীতল ষষ্টির দিন আগে বাড়ির শীল-নোড়ার পুজো করা হয়, টক দইয়ের ফোঁটা দেওয়া হয় শীল-নোড়াতে, তারপর সেই টক দই ছড়িয়ে দেওয়া হয় গোটা সেদ্ধর ওপরে। তারপর এটি হয়ে ওঠে ভোজনের উপযুক্ত। এই গোটা সেদ্ধ অত্যন্ত সহজপাচ্য। এটি শুধু এই দিনের জন্য নয়, যে কোন সময়ের জন্য এটি পুষ্টিকর খাদ্য।যেমন স্বাদ, তেমন গুন। এখনকার ব্যাস্ততার দিনে অনেক ঘরে ঘরে গোটা সেদ্ধর চল প্রায় নেই বললেই চলে কিন্তু মা-দিদিমার হাতের এই রান্নার স্বাদের সাথে অন্যকিছুর তুলনাই বৃথা।
গোটা সেদ্ধর রেসিপি জেনে নিন এখানে।
উপকরণ
পাঁচটি আলু, পাঁচটি রাঙা আলু, পাঁচটি বেগুন, পাঁচটি শিষ পালং শাক, পাঁচটি শিম, পাঁচটি মটরশুঁটি,৩০০ গ্রাম সবুজ মুগ কড়াই, পরিমাণমতো সর্ষের তেল, এককাপ আদা বাটা, এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো এক চা চামচ লঙ্কা গুঁড়ো, এক চা চামচ জিরে, দুই চা চামচ পাঁচ ফোঁড়ন, স্বাদমতো শুকনো লঙ্কা, নুন ও চিনি।
পদ্ধতি
প্রথমে সবকটি সবজি ভাল করে ধুয়ে নিন। তবে বাইরের খোসা ছাড়াবেন না বা কেটে টুকরোও করবেন না। এরপর হাঁড়িতে তেল দিন।
তেল গরম হয়ে এলে পাঁচফোঁড়ন ও শুকনো লঙ্কা দিন। এবার একে একে সব সবজি হাঁড়িতে দিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন। খেয়াল রাখতে হবে, নাড়াচাড়ার চাপে কোনও সবজি যেন ভেঙে না যায়।
১২ মিনিট ভালো করে নাড়া চাড়া করার আধ কাপ আদা বাটা দিন। এরপর আবার নাড়তে থাকুন। এবার হাঁড়িতে সবুজ মুগ কড়াই এবং শিষ পালং শাক দিন।
কিছুক্ষণ নেড়েচেড়ে আন্দাজ মতো নুন ও হলুদ দিন। এরপর হাঁড়িতে পরিমাণ মতো জল দিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঢেকে রাখুন।
সবজিগুলি সেদ্ধ হয়ে এলে, চিনি ও লবঙ্গগুঁড়ো দিয়ে আরও কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করতে হবে। জল শুকিয়ে মিশ্রণটি কিছুটা মাখা মাখা হয়ে এলে আঁচ নিভিয়ে দিন। তৈরি আপনার গোটা সেদ্ধ!