scorecardresearch
 

Lionel Messi: মাথা ঠান্ডা রেখে সফল হবেন কীভাবে? মেসির থেকে শিখুন

‘এমন কারও মধ্যে নেতৃত্ব খোঁজাই অর্থহীন, যে একটা খেলার আগে ২০ বার টয়লেটে যায়,’ এ কথা বলেছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কার সম্পর্কে? লিওনেল মেসি!

Advertisement
ফাইল ছবি। ফাইল ছবি।
হাইলাইটস
  • ‘এমন কারও মধ্যে নেতৃত্ব খোঁজাই অর্থহীন, যে একটা খেলার আগে ২০ বার টয়লেটে যায়,’ এ কথা বলেছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা।
  • কার সম্পর্কে? লিওনেল মেসি!

‘এমন কারও মধ্যে নেতৃত্ব খোঁজাই অর্থহীন, যে একটা খেলার আগে ২০ বার টয়লেটে যায়,’ এ কথা বলেছিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কার সম্পর্কে? লিওনেল মেসি!

আর্জেন্টিনার তখন খুব খারাপ সময় যাচ্ছিল। সবাই বড় আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিল মেসির জাদুকরি পায়ের দিকে। কিন্তু একের পর এক ব্যর্থতায় ‘ভিনগ্রহের ফুটবলার’ এতই মুষড়ে পড়েছিলেন যে ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার কথাও ভাবতে শুরু করেছিলেন।

আপনি পৃথিবীর সেরা খেলোয়াড় হতে পারেন। কিন্তু দুশ্চিন্তা, উদ্বেগ আপনাকেও ভোগাবে। এটাই স্বাভাবিক। উদ্বেগের সঙ্গে কীভাবে লড়াই করেন মেসি? কীভাবে মাথা ঠান্ডা রাখেন? তাঁর আছে নিজস্ব, বিশেষ এক কৌশল।

আরও পড়ুন

একটু খোলাসা করে বলা যাক। ৯০ মিনিটের ফুটবলে সাধারণত খেলা শুরুর বাঁশি বাজার সঙ্গে সঙ্গেই অধিকাংশ ফুটবলার তৎপর হয়ে যান। কোচের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চাপ নিয়ে খেলা শুরু করেন। কিন্তু মেসি এ ক্ষেত্রে আলাদা। খেলা শুরু হওয়ার প্রথম কয়েক মিনিট একরকম নিষ্ক্রিয় থাকার জন্য তাঁর বিশেষ পরিচিতি আছে। তিনি মাঠে থাকেন ঠিকই, তবে খুব একটা দৌড়ঝাঁপ করেন না। খেলা শুরুর সময় মাঝমাঠে ধীরপায়ে হাঁটেন, প্রায় রক্ষণভাগে নেমে আসেন। সতীর্থদের সঙ্গে খুব একটা জড়ান না৷ অন্যরা যখন প্রাণপণে ছোটেন, মেসি তখনো কিছুটা হেঁটে, কিছুটা জগিংয়ের মতো দৌড়ে সময় কাটান।

আমাকে মেসি মুগ্ধ করে তখন, যখন তার পায়ে বল থাকে না: পিকে

এমনটা তিনি কেন করেন? প্রারম্ভিক এই সময়ে আদতে দুটো কাজ করেন মেসি। প্রথমত, নিজেকে শান্ত রাখেন। শান্ত ও স্থির মনে খেলায় প্রবেশ করার মাধ্যমে নিশ্চিত করেন, বাকি খেলাটার জন্য তিনি সম্পূর্ণ তৈরি। আগের মতো অল্পেই ভেঙে পড়ার সমস্যা তিনি মূলত এভাবেই কাটিয়ে উঠেছেন। স্নায়ুকে বশে রাখার কার্যকর উপায় তিনি পেয়ে গেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি এই সময়ে বিপক্ষ দলকে বিশ্লেষণ করেন। তাঁর পা হয়তো ধীরে চলে, কিন্তু তাঁর চোখ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে বিপক্ষ দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়কে। বিপক্ষ দলের সামর্থ্য, দুর্বলতা, কৌশলও তিনি ধরে ফেলার চেষ্টা করেন শুরুতেই। নিজের দলের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করেন পেছন থেকে। তাই খেলার একদম শুরুতে মেসি দলের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও তাঁর কৌশলগত ‘ধীরে চলো নীতি’ খেলার বাকি প্রায় ৯৫ ভাগ সময়ে তাঁকে করে তোলে অমূল্য।

Advertisement

মাঠে মেসিকে খুব একটা ছোটাছুটি করতে দেখা যায় না। তিনি বরং প্রতিপক্ষকে পর্যবেক্ষণ করেন সময় নিয়ে
‘প্রস্তুতিমূলক’ ও ‘কার্যকর সময়’—আপনি যদি ফুটবলকে এই দুই ভাগে ভাগ করেন, তাহলে প্রস্তুতিকেই বেশি প্রাধান্য দেন মেসি। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে। ২০১৭ সালে বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়েল মাদ্রিদের সঙ্গে এল ক্লাসিকোর একটি ম্যাচে মাত্র ৪ মিনিট দৌড়েছেন মেসি। বাকি ৮০ মিনিটের বেশি হেঁটেছেন। মজার ব্যাপার হলো, পূর্ণোদ্যমে এই অল্প সময় খেলেই তিনি ৯টি সুযোগ তৈরি করেন, একটি গোল করেন এবং সতীর্থকে একটি গোলে সহায়তাও করেন। এই মডেল মেসির জন্য খুব স্বাভাবিক। বড় ম্যাচের আগে তিনি খেলার প্রস্তুতি পর্বে বেশি মাথা খাটান। প্রকৃতপক্ষে এই প্রস্তুতিই ব্যাখ্যা করে, কীভাবে তিনি বারবার সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় নিজেকে খুঁজে পান। এটা কোনো জাদুবিদ্যা নয়। মিনিটের পর মিনিট, ম্যাচের পর ম্যাচ খেলে তিনি এটি রপ্ত করেছেন। খেলার কোন সময়ে, কোন ডিফেন্ডার তাঁর নির্দিষ্ট জায়গা থেকে সরে যান কিংবা দুজন মিডফিল্ডার কখন মাঝমাঠের একটা ছোট্ট অংশ ফাঁকা রাখেন, সব দিকেই নজর রাখেন এই ফুটবল মাস্টারমাইন্ড।

এসব খুঁটিনাটি থেকে আমরা কী শিখতে পারি? অ্যাথলেটিকস হোক কিংবা সাধারণ জীবনযাপন; আপনি যখনই উদ্বিগ্ন হবেন, তখনই শুরু করুন এই চক্র—থামুন, ধীরে চলুন, প্রস্তুতি নিন। তবে থেমে যাওয়া বা বিরতি নেওয়া শুনতে যতটা সহজ, আসলে কিন্তু ততটাই কঠিন। কারণ, উদ্বিগ্ন অবস্থায় আমাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তিই হলো তৎক্ষণাৎ কিছু করে ফেলা। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও স্নায়ুবিজ্ঞানী জাডসন ব্রিউয়ার ক্যারিয়ারের অনেকটা সময় কাটিয়েছেন এটা ভেবে—‘কীভাবে কিছুই না করে থাকা যায়।’

মাদকাসক্তদের অনেক সময়ই ভীষণ উদ্বেগ চেপে ধরে। এ সময় তাঁরা যেন মনকে শান্ত রাখতে পারেন, সে জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি বের করেছেন ব্রিউয়ার। তাঁর এই পদ্ধতির চারটি ধাপ: ১. একটা কিছু ঘটছে, তা ধরতে পারা, ২. বিষয়টি মেনে নেওয়া, ৩. নিজের আবেগ ও চিন্তা পর্যবেক্ষণ করা, ৪. কী কী ঘটছে, লিখে রাখা।

তবে সবার ক্ষেত্রে এক পদ্ধতি কাজ করে না, পরিকল্পনাও সব সময় ঠিক পথে যায় না। মেসি তাঁর জীবনে বহু ম্যাচ হেরেছেন এবং ব্রিউয়ারের পর্যবেক্ষণে থাকা সব রোগীও পূর্ব আসক্তি থেকে ফিরতে পারেননি। তাই উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অস্বস্তির মতো উপাদান; যার কারণে মানুষ ব্যর্থ হয়, এগুলোকে নিজের আয়ত্তে আনতে হবে৷

 

Advertisement