রামায়ণ ও মহাভারত। ভারতের দুই মহাকাব্য। যে দুই গ্রন্থের কদর গোটা বিশ্বে। বেদ-উপনিষদের জটিল ও গূঢ় রহস্যকে সহজ করে মহাকাব্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করেন অনেকে। এই দুই মহাকাব্যেই রয়েছে জীবনের চলার পাঠ। মহাভারতের রচয়িতা বেদব্যাস। তাঁর মহাকাব্যে রয়েছে ১,০০,০০০ লক্ষেরও বেশি শ্লোক। মহাভারত মানে শুধু রাজ সিংহাসন দখলের লড়াই নয়, বরং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে লড়াই করার এবং জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর মহাকাব্য। মহাভারতে রয়েছে এমন কয়েকটি কথা যা আজও প্রাসঙ্গিক। জীবনে সাফল্য পাওয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু আর হয় না!
লড়াই চালিয়ে যাওয়া- মহাভারতের সবচেয়ে বড় শিক্ষা কখনও লড়াই না ছাড়া। জীবনে নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। কখনও হার মানলে চলবে না। লড়াই করলেই মেলে সাফল্য। পাণ্ডবরাই ১২ বছর বনবাস ও ১ বছরের অজ্ঞাতবাস কাটিয়েছেন। রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পাণ্ডবদের রাজপ্রাসাদ। তা সত্ত্বেও তাঁরা হার মানেননি। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে রথী-মহারথীদের দেখেও ভয় পাননি। বরং সমস্ত প্রতিকূলতাকে ছাপিয়ে তাঁরা যুদ্ধজয় করেছেন।
সংযম- মহাভারতে ক্রোধের বশে অনেকে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথবা সাময়িক লোভ তাঁদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে নিয়ে গিয়েছে। জুয়ায় সবর্স্ব হারিয়েছেন যুধিষ্ঠির। কোথায় থামতে হয়, তা বোঝেননি। আবার দুর্যোধন নিজের অহংয়ের জন্য রাজ্যপাঠের সামান্য অংশ ছাড়তে পারেননি। তাই সংযম খুব জরুরি। যে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভাবনাচিন্তা করা দরকার। সেই সিদ্ধান্তের পর পরিণাম কী হতে পারে, তা ভেবেই কাজ করা উচিত। মন শান্ত রেখে সিদ্ধান্ত নিন।
আত্মবিশ্বাস- আত্মবিশ্বাসী হওয়ার শিক্ষা দেয় মহাভারত। নিজের ক্ষমতার উপরে আস্থা রাখুন। যে কোনও পরিস্থিতিতেই আত্মবিশ্বাসী থাকলে সফল হওয়া যায়। পাণ্ডবরাও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কুরুক্ষেত্রে সামনে ভীষ্ম, দুর্যোধন, কৃপ, দ্রোণাচার্য ও কর্ণের মতো তাবড় বীররা থাকলেও তাঁরা লড়ে গিয়েছেন। শ্রীকৃষ্ণ ঠান্ডা মাথায় সামলেছেন অর্জুনকে।
ভয়ডরহীন- লক্ষ্যে পৌঁছতে গেলে কষ্ট করতে হয়। আর লক্ষ্যের পথ বড় বাধা হল 'ভয়'। ভয়ই বাধা সৃষ্টি করে। মনে ভয় থাকলে সফল হওয়া যায়। ভয় না দূর করলে সাফল্য পাওয়া অসম্ভব। যুদ্ধক্ষেত্রে পরিজনদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে ভয় পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ ধর্নুধর অর্জুন। সেই ভয় দূর করেন শ্রীকৃষ্ণ। ভয় থাকলে কখনও নিঃসঙ্কোচে কর্ম করা যায় না।
অর্ধেক শিক্ষা- অর্ধজ্ঞান ভয়ঙ্কর। অর্ধেক শিক্ষা নিয়ে বা প্রস্তুতি সম্পূর্ণ না করে কখনও কোনও কাজ করা উচিত নয়। অভিমন্যূ অর্ধেক জ্ঞান নিয়েই ঢুকে পড়েছিলেন চক্রব্যূহে। আর ফিরতে পারেননি। তাই অর্ধজ্ঞান পরাক্রমীদেরও মাত দিতে পারে। সুতরাং সবসময় বড় কাজের আগে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি সেরে রাখা দরকার। সেটাই সাফল্যের চাবিকাঠি।