শীতের রোদ গায়ে মেখে, কমলালেবু খেতে খেতে জমে ওঠে গল্প, সঙ্গে কফি-পকোড়া। মেনুতে যদি থাকে, সবজি দিয়ে ডাল, আলচুর বা বেগুনী আর মাংস কষা। কখনও আয়োজন বসে নদীর ধারে বা কখনও বাগান বাড়িতে। এভাবেই পিকনিকের জন্য জায়গা খুঁজতে পারদর্শী বাঙালি। বঙ্গে শীত প্রবেশের পর বাঙালি চড়ুইভাতির প্ল্যান করবে না, তা আবার হয়?
বাঙালি বরাবরই ভ্রমনপ্রিয়। নতুন নতুন পিকনিক স্পট, পাড়ার খেলার মাঠ এমনকী বাড়ির ছাদেও পিকনিক করে থাকে অনেকে। তবে, বাড়ির ছাদ বা পাড়ার খেলার মাঠে যখন খুশি পিকনিক হতে পারে। তবে একটু দূরে লোকেশন হলে, সেই মজা অনেক বেশি। শহরের চারপাশেই রয়েছে এমন কিছু জায়গা, যেখানে কম খরচেই পিকনিক করতে পারবেন। রইল কলকাতার কাছাকাছি এমনই কয়েকটি জায়গার খোঁজ।
টাকি
কলকাতা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটারের দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি পিকনিকের জন্য বিখ্যাত। টাকি স্টেশন থেকে নেমে মিনিট খানেক এগোলেই পড়বে ইচ্ছামতী নদী, তার পাড়েই রয়েছে বিশ্রাম বাগান বাড়ি। বাগান বাড়ির ভেতরে রয়েছে আড্ডা দেবার জন্য ছোট ছোট কটেজ। রয়েছে দীঘি, মন্দির, ছাউনি দেওয়া পুকুর ঘাট আর অজস্র সবুজের সমারোহ। শহরের কোলাহল থেকে দূরে নিরিবিলি পরিবেশে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এটি।
মাছরাঙ্গা দ্বীপ
বাঙালির অন্যতম জনপ্রিয় পিকনিক স্পট অবশ্যই টাকি। শীতের রবিবারের দুপুরগুলোতে প্রচুর মানুষ ভিড় করে এই টাকিতে। টাকি থেকে আরও কিছু দূর গেলে রয়েছে মাছরাঙ্গা দ্বীপ। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ইচ্ছামতী ও ভাসা নদীর ঠিক মাঝখানে রয়েছে এই মাছরাঙ্গা দ্বীপ। কলকাতা থেকে মাত্র ৭০ কিলোমিটার দূরের এই মাছরাঙ্গা দ্বীপে যদিও মানুষের আনাগোনা কম। যারা প্রকৃতি ভালবাসেন,পক্ষীপ্রেমী, তারা এই শীতে ঘুরে আসুন মাছরাঙ্গা দ্বীপ থেকে। এখান থেকে বাংলাদেশী জেলেদের মাছ ধরাও দেখতে পাবেন।
পুষ্পবন
শীতকালে পিকনিকের জন্য যাওয়াই যায় ডায়মন্ড হারবার। এখানেই রয়েছে দারুণ এক পিকনিক স্পট। পুষ্পবনের একটু দূরেই রয়েছে দুটি কেল্লা। তবে হ্যাঁ, ধ্বংসাবশেষই পড়ে রয়েছে। একটি তৈরি হয়েছিল পর্তুগিজদের আমলে, অন্যটি ইংরেজ আমলে। পুষ্পবনে পিকনিক করতে হলে আগে থেকে বুকিং করে রাখুন।
ক্যাপ্টেন ভেরি
কলকাতার মধ্যেই যে এরকম একটা শান্ত পিকনিক স্পট আছে, এটা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। ইস্টার্ন মেট্রোপলিটনে ক্যাপ্টেন ভেরি শীতকালে পিকনিকের জন্য ভাড়া দেওয়া হয়। এখানে পিকনিক করতে এলে উপরি পাওনা টাটকা মাছ। চিংড়িঘাটা এবং মেট্রোপলিটন বাসস্টপের মধ্যবর্তী এলাকাতেই রয়েছে এই ভেরি। রান্নাবান্নার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে, আপনাকে শুধু কাঁচামাল আর রাঁধুনি জোগাড় করতে হবে। বিকেলের দিকে বোটিংও করতে পারেন।
সুকান্তনগর ভেরি
সল্টলেকের সেক্টর ৫ বলতে প্রথমেই চোখে ভেসে ওঠে বড় বড় অফিস, খাবারের দোকান ইত্যাদি। কিন্তু এই অফিস পাড়াতেই আছে শীতে পিকনিক করার এই জায়গা। এখানে এসে জলের ধরে বসে পিকনিক করা ছাড়াও, বিভিন্ন জলচর পাখিদের দেখতে পাবেন।
গাদিয়াড়া
কলকাতা থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরেই রয়েছে গাদিয়াড়া। হাওড়া জেলার অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র এই গাদিয়াড়া। রূপনারায়ণ, ভাগীরথী এবং হুগলি নদীর সঙ্গমস্থল এই গাদিয়াড়া। শীতের মরশুমে নদীর ধারে বসে পিকনিক করার মজাই আলাদা। গাড়িতে মাত্র দেড় ঘণ্টাতেই পৌঁছে যাবেন এখানে। গাদিয়াড়ায় রাত কাটানোরও ব্যবস্থা রয়েছে।
মাইথন
পিকনিক হোক বা দু’দিনের উইকএন্ড ট্রিপ, দামোদরের তীরে সময় কাটাতে চাইলে দেরি না করে ঘুরে আসুন মাইথন থেকে। কলকাতা থেকে প্রায় ৫ ঘণ্টার পথ মাইথন। কিন্তু আসানসোল থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে বরাকর নদীর উপর ১৫৭১২ ফুট দীর্ঘ ও ১৬৫ ফুট উঁচু বাঁধ এবং ৬৫ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে দেখার মতো জায়গা এই মাইথন। আশেপাশে রয়েছে ছোট ছোট পাহাড়। এছাড়া খুব কাছেই রয়েছে ৫০০ বছরের পুরনো কল্যাণেশ্বরী মন্দির। এখানেও রাত কাটাতে পারেন রাজ্য পর্যটন উন্নয়ন নিগমের মাইথন ট্যুরিস্ট লজে।