সরস্বতী পুজো আর ভ্যালেন্টাইনস ডে এবার পড়েছে একই দিনে। একটা বাঙালির প্রেম দিবস আর একটা বিশ্বজনীন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ও সরস্বতী পুজোয় এবার দুদিন পরপর ছুটি রয়েছে। আবহাওয়া ক্রমশ আরামদায়ক হয়ে উঠছে। আবহাওয়া যদিও বৃষ্টির ভ্রুকুটি দেখাচ্ছে তবে তাতে দমে কোন বান্দা। অনেকে যাঁরা এই দুটো দিন কাটাতে চান আরামে, তাঁরা আসপাশেই ঘুরে আসতে পারেন। এমনই কয়েকটি দারুণ জায়গা রয়েছে।
১. বাঁকুড়ার জয়পুর
জঙ্গল-নির্জনতা ভালবেসেন? তাহলে বাঁকুড়ার জয়পুর জঙ্গলে ঘুরে আসুন। ছবির মতো সাজানো কিছু রিসর্ট রয়েছে। কলকাতা থেকে মোটামুটি ৪-৫ ঘন্টার পথ। নিরিবিলি পরিবেশে ছুটি কাটানোর পাশাপাশি জঙ্গল সাফারি আর মন্দির দর্শন— সবেরই সুযোগ পাবেন এখানে। দেশি মুরগির কষা মাংসের সঙ্গে এই সময়টায় পিঠেপুলি -পাটিসাপটার মতো মুখরোচক মিষ্টিও দেয় অনেক স্টেগুলিতে। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে খরচ মোটামুটি ২,০০০-২,২০০ টাকা।
২. দারিয়াপুর
কলকাতার আশেপাশে শহরের কোলাহল, ব্যস্ততা থেকে দূরে একটু নিরিবিলিতে সময় কাটাতে চাইলে একেবারে ‘পারফেক্ট’ জায়গা হল দারিয়াপুর। কুয়াশার চাদর জড়িয়ে কোলাহলমুক্ত গ্রামীণ পরিবেশে দুটো দিন কাটিয়ে আসতে চাইলে এখানে চলে আসুন। কলকাতা থেকে কাঁথি হয়ে দারিয়াপুর পৌঁছতে সময় লাগবে মোটামুটি সাড়ে ৪ ঘণ্টা। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে ইজিফিসো দারিয়াপুর হোমস্টের প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচ মোটামুটি ১,৫০০-২,০০০ টাকা।
৩. মৌসুনি দ্বীপ
সপ্তাহান্তের দু’টো দিন পেশাগত ব্যস্ততা, সাংসারিক চাপ ভুলে একটু নিরিবিলিতে কোথাও ঘুরে আসতে চান? তাহলে দৈনন্দিন ব্যস্ততা থেকে সাময়িক বিরতি নিয়ে সপ্তাহে শেষে ঘুরে আসতেই পারেন মৌসুনি দ্বীপ (Mousuni Island) থেকে। কলকাতা থেকে মাত্র ১১০ কিলোমিটার দূরে তিন দিক চেনাই নদী ও আর একদিকে সাগরের মোহনায় ঘেরা ‘নীল নির্জন’ নিরিবিলি ছুটির ঠিকানা মৌসুনি দ্বীপ। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নামখানা লোকাল ধরে নামখানা। সেখান থেকে ম্যাজিক ভ্যানে দুর্গাপুর-বাগডাঙ্গা ঘাট, পাতিবুনিয়া ঘাট বা হুজ্জুতি ঘাট। নদী পেরিয়ে টোটো ধরে সরাসরি মৌসুনি আইল্যান্ড। থাকা-খাওয়া মিলিয়ে মৌসুনি দ্বীপে ছুটি কাটানোর জন্য প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচ মোটামুটি ১,২০০-১,৮০০ টাকা।
৪. আরামবাগ
কলকাতা থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে আরামবাগে আপনার সাধ্যের মধ্যেই রয়েছে স্বপ্নের মতো সাজানো ট্রি-হাউজ! দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে রয়েছে আম, বাঁশ, তাল গাছ দিয়ে ঘেরা আরামবাগ ট্রি-হাউজ যা পোশাকি নাম আমবাগান-দ্য রিভারসাইড ট্রিহাউজ (Aambagan-The Riverside Treehouse)। হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে আরামবাগ স্টেশন। সেখান থেকে যে কোনও রিক্সা বা ভ্যান ধরে আপনি পৌঁছে যাবেন আরামবাগ ট্রি-হাউজে এখানে থাকা-খাওয়া মিলিয়ে খরচ পরবে মাথাপিছু মোটামুটি ২,০০০-২,২০০ টাকা।
৫. মনচাষা
দু’দিনের জন্য পড়ন্ত শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে গ্রামীণ কোলাহলমুক্ত পরিবেশে দুটো দিন কাটিয়ে আসতে চাইলে তার জন্য দুর্দান্ত একটা জায়গা হল মনচাষা। ঝটপট ব্যাগ গুছিয়ে এক বেলা বা এক রাত্রি কোথাও মন ভরে ছুটি কাটাতে চাইলে কলকাতার কাছেই মনের মতো নিরিবিলি ছুটির ঠিকানা এখানকার রিসর্টগুলিতে প্রতিদিনের মাথাপিছু খরচ মোটামুটি ২,৫০০-৩,০০০ টাকা। এখানে রাতে থাকার পরিকলেপনা না থাকলে খরচ মাথাপিছু ১০০০ টাকার মধ্যেই।
৬.দার্জিলিং
উত্তরবঙ্গে গেলে দার্জিলিং সেরা জায়গা। দুদিনে বেশি সাইট সিন করা যাবে না। তাই শহরকে ঘিরেই্ চলুক আপনাদের ঘোরাফেরা। দার্জিলিং সবাই চেনেন। সব বাজেটের জন্যই হোটেল-হোমস্টে রয়েছে। দুদিনে হাজার ২য়েক টাকায় ঘুরে আসতে পারবেন। ট্রেন, বাস, বিমান যাতেই চড়বেন পৌঁছে যাবেন। ট্রেন বা বাসে এলে রাতের যাত্রা শুরু করুনষ সকালের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছবেন।
৭. ডুয়ার্স
পাহাড় না যেতে চাইলে একইভাবে ডুয়ার্সে যেতে পারেন। শিলিগুড়ি বা এনজেপি থেকে গাড়ি ভাড়া করলে ২ থেকে ৩ ঘন্টা প্রায় গোটা ডুয়ার্সের যে কোনও জঙ্গলে পৌঁছে যাবেন। সারা দিন কাটিয়ে পরদিন ভোরে জঙ্গল সাফারি করে দুপুরে লাঞ্চ করে সময় থাকতে বেরিয়ে পড়ুন। চাইলে শিলিগুড়ি তাড়াতাড়ি ফিরে বিকেলে বেঙ্গল সাফারি পার্কে ঘুরে নিতে পারেন। রাতে এনজেপি বা শিলিগুড়ি জংশন, কিংবা মালবাজার বা আলিপুরদুয়ার থেকেও ট্রেন ধরে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হয়ে পড়ুন। মাথাপিছু হাজার দুয়েক টাকাতেই হয়ে যাবে।