Orange Villages Of North Bengal: কমলালেবু (Orange) বলতেই যে নাম সবার আগে মাথায় আসে তা হল দার্জিলিংয়ের কমলালেবু (Darjeeling Orange)। দার্জিলিংয়ের চা (Darjeeling Tea) এর মতোই সর্বোৎকৃষ্ট। আকারে খানিকটা ছোট, হালকা টক এর সঙ্গে মিষ্টি। এর স্বাদই আলাদা বলেন প্রকৃত কমলালেবুপ্রেমীরা (Orange Lovers)। নাগপুরের কমলা (Nagpur Orange) কিংবা কিন্নো যতই বাজারে ভরে থাকুক না কেন, এ কমলালেবুর টানই আলাদা। তবে দার্জিলিংয়ের কমলালেবু শুধু দার্জিলিংয়ে হয় তা কিন্তু নয়। আসলে দার্জিলিং জেলা হলেও দার্জিলিং শহরে কিন্তু কমলালেবু হয় না। দার্জিলিং ছাড়াও আরও কয়েকটি জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের উত্তর অংশে কমলালেবু চাষ হয়।
কমলালেবু গ্রাম হিসেবে সবচেয়ে প্রথমে মাথায় আসে দার্জিলিং জেলার কার্শিয়ং, মহকুমার সিটংয়ের। এছাড়াও সিটং থেকে কাছেই রবীন্দ্রনাথের প্রিয় জায়গায় মংপুতে, কালিম্পংয়ের পালমাজুয়া,আলিপুরদুয়ারের টোটোপাড়া, বক্সার লেপচাখাতে কমলালেবুর চাষ হয়। এছাড়া জলপাইগুড়ির সামসিংয়ে কমলালেবুর চাষ হয়।
১. সিটং
সিটং, দার্জিলিং জেলার কার্সিয়ং মহকুমার স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রাম। পাহাড়ের অন্যান্য জায়গার মতো এটিও নয়নাভিরাম। তবে এটি মূলত বিখ্যাত কমলালেবুর চাষের জন্য। এলাকাটি কমলার বাগানের জন্য বিখ্যাত এবং ধীরে ধীরে পর্যটকদের আকর্ষণে পরিণত হয়েছে কারণ লোকেরা দার্জিলিং ছাড়িয়ে নতুন আলোয় উত্তরবঙ্গকে আবিষ্কার করতে আগ্রহী। পাইন বনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে অবস্থিত, সিটং লেপচাদের অধ্যুষিত একটি গ্রাম।
২. পালমাজুয়া
উঁচু-নীচু পাহাড়ের ঢাল আর সেই পাহাড়ের ঢালে চা বাগান আর কমলালেবুর গাছ। নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কমলালেবু দেখতে পাবেন।মনে হয় যেন কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ৫,৮০০ ফুট উচ্চতা। কাছেই মিরিক। পাশেই সুদীর্ঘ লেক। পাইন-ওকের জঙ্গল। এই মেঘে ঢেকে গেল এলাকা। দেড় হাত দুরে কিছুই দেখা যায় না। আবার কয়েক মিনিট। কোথায় কী সব পরিষ্কার। জায়গাটার নাম পালমাজুয়া। মিরিক থেকে ১৫ কিলোমিটার। সরাসরি শিলিগুড়ি থেকে যেতে পারেন। আবার মিরিক থেকেও যাওয়া যায়। এখানকার কমলা পাহাড়ের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট।
৩. লেপচাখা
আলিপুরদুয়ারের বক্সা পাহাড়ের কমলালেবু গাছ রয়েছে প্রচুর। কিন্তু তার প্রচার তেমনভাবে বাইরের জগতের কাছে নেই। বক্সা পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় যে হোমস্টেগুলি রয়েছে তার আশপাশে প্রচুর কমলালেবুর গাছ রয়েছে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে এখানে পর্যটকরা বেড়াতে এলে পাকা কমলা পাবেন। স্থানীয়দের দাবি এখানকার কমলালেবুর দারুণ স্বাদ। বক্সা পাহাড়ের বক্সা ফোর্ট, লেপচাখা, সদর বাজার সহ বিভিন্ন পাহাড়ের বিভিন্ন পাদদেশে বেশ কিছু এলাকায় বাগান রয়েছে।
৪. টোটোপাড়া
আলিপুরদুয়ারেরই টোটোপাড়াতে কিছু পরিমাণ কমলালেবুর চাষ হয়। যে কেউ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে গেলে ঘুরে আসতে পারবেন। মাদারিহাট বা জলদাপাড়া থেকে খুব কাছে এই গ্রাম। তবে এই কমলা তেমন সুস্বাদু নয়। এটা ভুটানের কমলার প্রজাতি। তবে দেখতে এবং ঘুরতে যাওয়ার জন্য দারুণ জায়গা।
৫. সামসিং
ডুয়ার্সের জলপাইগুড়ি জেলার পাহাড়ি এলাকা সামসিং। লাটাগুড়ি থেকে চালসা হয়ে মেটেলি পার করে সামসিং চা-বাগান আর কমলালেবুর জন্য বিখ্যাত। এখানেও শীতকালে কমলালেবুর বাগানে ঘুরতে আসেন প্রচুর পর্যটক। কাছেই নেওড়া ভ্যালি জঙ্গল, রকি আইল্যান্ড, সুনতালেখোলা রয়েছে। সুনতালেখোলাতেও কিছু পরিমাণ কমলালেবু হয়।
তাই যদি কমলালেবু দেখতে চান, আর সিটংয়ে বুকিং না পান, এই সমস্ত এলাকাগুলিতে যেতে পারেন কমলালেবুর আনন্দ উপভোগ করতে, গাছ থেকে ছিঁড়ে খেতে যে আনন্দ, তা বাজার থেকে কিনে খাওয়ার মধ্যে নেই।