৮ জুলাই রাজ্য পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে যাতে কোনরকম হিংসার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে প্রথম থেকেই যথেষ্ট তৎপর রাজ্যপাল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে বুধবার ‘পিস অ্যান্ড হারমনি কমিটি’ গঠন করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত ভোটের ঠিক ৪৮ ঘণ্টা আগে 'পিস কনফারেন্স' থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সুর চড়ালেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ভাঙড়, ক্যানিং, বাসন্তী সহ রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বেলাগাম সন্ত্রাস চলেছে বলে অভিযোগ করেন বাংলার রাজ্যপাল। রাজ্যে একের পর এক মৃত্যুর ঘটনার জন্য সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেছেন সিভি আনন্দ বোস।
বৃহস্পতিবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহাকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশ্যে রাজ্যপালের সরাসরি প্রশ্ন, ‘এই পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় যদি গণতন্ত্র হত্যা হয়, তাহলে হত্যাকারী কে হবেন ? হত্যাকারী কে ? হত্যাকারী কে ? রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কি দয়া করে হাত তুলবেন ? নির্বাচন কমিশনার কি দায়িত্ব নেবেন ? হত্যাকারীদের সম্বন্ধে আপনাকে জানতে হবে ?’
বৃহস্পতিবার রাজভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ সেই সাংবাদিক বৈঠক থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা কেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সেই প্রশ্ন তোলেন রাজ্যপাল ৷ পাশাপাশি রাজীবা সিনহাকে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করার বার্তাও দেন ৷
রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে চরম ভর্ৎসনা করে রাজ্যপাল বলেন,‘আপনি আপনার দায়িত্ব পালনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আগুন ও রক্ত নিয়ে রীতিমতো খেলা চলছে। এত হিংসার জন্য দায় কার? আমি দেখেছি সন্তান হারানো মায়ের চোখের। পঞ্চায়েত নির্বাচনের হিংসায় খুনি কে? হিংসার ছবি দেখে আমি উদ্বিগ্ন। রক্ত নিয়ে এই খেলা বন্ধ করতেই হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের গণতন্ত্রকে খুন করা হয়েছে।’ রাজ্যপালের আরও সংযোজন, 'আমি ভেবেছিলাম, বাংলার গ্রামেগঞ্জে গিয়ে দেখব, চিত্ত হেথায় ভয় শূন্য, উচ্চ হেথায় শির। কিন্তু এসে দেখলাম একেবারে উল্টোটা। মানুষের মনে ভয়, মাথা হেঁট হয়ে আছে। গ্রামে গিয়ে বিধবার কান্না শুনেছি, পুত্রহারা মায়ের কান্না দেখেছি। কী করে এসব বন্ধ হবে, যখন রক্তাসুরের হাতেই ক্ষমতা। তবে মনে রাখতে হবে, রক্তাসুর থাকলে মহাকালীও থাকবে।'
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই হিংসার অভিযোগ উঠেছে বাংলার নানা প্রান্ত থেকে ৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঠগড়ায় শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস ৷ বিরোধীদের অভিযোগ শাসক দলের সন্ত্রাসেই রাজ্যের পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে ৷ মাসখানেকের মধ্যে বেশ কয়েকজন মারাও গিয়েছেন ৷ কখনও বিরোধী দলের সদস্যদের খুন করার অভিযোগ উঠেছে ৷ কখনও আবার নিহত হয়েছেন শাসক দলের নেতা-কর্মী-প্রার্থীরা ৷এই পরিস্থিতি গত কয়েকদিন ধরে রাজ্য়ের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷ দেখা করেছেন আক্রান্তদের সঙ্গে ৷ কথা বলেছেন নিহতদের পরিবারের সদস্য়দের সঙ্গে ৷ নির্বাচন কমিশনকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কড়াবার্তা দিয়েছেন ৷ এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে তাঁর অভিজ্ঞতার কথাই তুলে ধরেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস ৷