"হালুম হুলুম হালুম হুলুম
ঐ এলো রে মামা
পরেছে সে কালোর সাথে
হলদে ডোরার জামা।"
বাঘকে (Tiger) ঘিরে মানুষের কৌতুহল বরাবরই। কোন বাঘকে কী বলা হয়? কেমন দেখতে বেঙ্গল টাইগার (Bengal Tiger) বা রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Royal Bengal Tiger)? ভারতের বাইরে যে বাঘের দেখা মেলে তাদেরই বা স্বভাব কেমন? এহেন নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় অনেকের মনেই। আর তা হবে নাই বা কেনও বলুন তো? বাঘ তো আর মামুলি ব্যপার নয়, বেশ একটা রাজকীয় বিষয় বটে। আজ আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। আর তাই আমরা একটু বাঘা বাঘা বাঘদের নিয়ে গল্প করবো।
জানেন কি বিশ্বজুড়ে যত প্রজাতির বাঘের দেখা মেলে তার প্রায় ৭০ শতাংশেরই বাস এই ভারতে? তাই বাঘ আমাদের জাতীয় পশু। ২০১০ সালের ২৯ জুলাই, সেন্ট পিটাার্সবাগ টাইগার সামিটে বাঘ বসবাসকারী দেশগুলি একযোগে সিদ্ধান্ত নেয় ২০২২ সালের মধ্যে নিজেদের দেশের বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার অঙ্গিকার নেয়। গত ১০ বছরে ভারত সেই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ, নেপাল, ভূটান সহ একাধিক দেশ নিজেদের ভূমিকা পালন করতে পারেনি বলেই বিশেষজ্ঞদের মত।
গত দেড়শ বছরের ইতিহাস দেখলে বোঝা যায়, চোরাশিকার, মানব-পশু সংঘাত, বাসস্থানের অভাব থেকে মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে বাঘের সংখ্যা প্রায় ৯৫ শতাংশ হ্রাস পায়। এরপরই তড়িঘড়ি সেন্ট পিটাার্সবাগ টাইগার সামিটে ব্যঘ্র সংরক্ষণে জোর দেওয়া হয়।
বাঘ সংরক্ষণে ভারতের ভূমিকা-
২০০৬ সালে দেশে বাঘের সংখ্যা ছিল ১৪১১। ক্রমশ এই সংখ্যা কমতে থাকায় শুরু হয় তৎপরতা। অবশেষে ২০১০ সালে সেই সংখ্যা কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭০৬-এ। তাতেও, পরিবেশের ভারসাম্যে চাপ বাড়তে থাকায়, সেন্ট পিটাার্সবাগ টাইগার সামিটে ভারতই বাঘ সংরক্ষণের বিষয়টি নিয়ে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করে। অতি তৎপরতার সঙ্গে ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে দেশের বাঘের সংখ্যা ৫০০ ওপর বৃদ্ধি পায়। সংখ্যা দাঁড়ায় ২,২২৬-এ। ২০১৮ সালের বাঘ সুমারিতে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২৯৬৭-এ, যা বিশ্বের কাছে এক নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত।
প্রতি ৪ বছর অন্তর বাঘের সুমারি করা হয়। বাঘের চোরাশিকার রুখতে গত কয়েক বছরে ভারত যে ভূমিকা গ্রহণ করেছে, তা ইতিমধ্যেই গিনেস বুকে নাম তুলেছে। এছাড়াও, মধ্যপ্রদেশের বনাঞ্চল, ছত্তিশগড়ের বনাঞ্চল, সুন্দরবন থেকে দক্ষিণের মালভূমি অঞ্চলে বাঘের শিকার রুখতে বসানো হয়েছে ক্যামেরা। সেই সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের গলায় লাগানো হয়েছে রেডিও কলারও।
মানুষ-বন্যপ্রাণী সংঘাত-
বনাঞ্চলের পার্শবর্তী গ্রামগুলিতে মানুষের সঙ্গে বন্য প্রাণীর সংঘাত ঠেকাতে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে কাজে লাগিয়ে সেখানে চলছে পশিক্ষণ দেওয়ার কাজ। তবে, সভ্যতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ধ্বংস হয়ে চলেছে বনাঞ্চল। আর তাই বারবার লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘ। একদিকে যেমন মৃত্যু হচ্ছে বাসিন্দাদের, তেমনই অনেকসময় মানুষের হামলায় মারা যাচ্ছে বাঘ।