scorecardresearch
 

Rabindranath Tagore Sense of Humour: রবীন্দ্রনাথের ১০ রসিকতা, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবে

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যাঁর ব্যাপ্তির প্রায় কোনও সীমারেখাই নেই। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপেই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন তিনি। কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ নন, আজ ২৫ বৈশাখ তাঁর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তীতে হাস্য রসিক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু কথা হতেই পারে।

Advertisement
ভীষণ রসিক ছিলেন কবিগুরু ভীষণ রসিক ছিলেন কবিগুরু

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, এমন একজন ব্যক্তিত্ব, যাঁর ব্যাপ্তির প্রায় কোনও সীমারেখাই নেই। আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদক্ষেপেই যেন প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেন তিনি। কবি, সাহিত্যিক, গীতিকার, সুরকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক রবীন্দ্রনাথ নন, আজ ২৫ বৈশাখ তাঁর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তীতে হাস্য রসিক রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কিছু কথা হতেই পারে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মানুষটি এক্কেবারেই রাশভারী ব্যক্তি ছিলেন না। বরং বেশ রসিক মানুষ ছিলেন বলেই জানা যায়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বেশকিছু ঘটনায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রসবোধ ও রসিকতার বিভিন্ন কাহিনি উঠে আসে শান্তিনিকেতনের বুক থেকে। যে আশ্রম চত্বর জুড়ে পরতে পরতে আজও রয়েছে তাঁর জীবনদর্শন, তাঁর সাহিত্যবোধের বিভিন্ন প্রভাব। বহু গুণী ব্যক্তিত্বই রবীন্দ্রনাথের সময়কালে বিশ্বভারতীকে নানানভাবে সমৃদ্ধ করেছেন তাঁদের উপস্থিতিতে। সেই সময়ের কিছু মজার ১০ কাহিনি দেখে নেওয়া যাক, যা রবীন্দ্ররসবোধকে তুলে ধরে-

  • সাহিত্যিক ‘বনফুল’ তথা শ্রী বলাইচাঁদের এক ছোট ভাই বিশ্বভারতীতে অধ্যয়নের জন্য শান্তিনিকেতনে পৌঁছেই কার কাছ থেকে যেন জানলেন, রবীন্দ্রনাথ কানে একটু কম শোনেন। অতএব রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি যখন বললেন, 'কী হে, তুমি কি বলাইয়ের ভাই কানাই নাকি?', তখন বলাইবাবুর ভাই চেঁচিয়ে জবাব দিলেন, ‘আজ্ঞে না, আমি অরবিন্দ।’ রবীন্দ্রনাথ তখন হেসে উঠে বললেন, ‘না কানাই নয়, এ যে দেখছি একেবারে সানাই!’
  • শান্তিনিকেতনের ছেলেদের সঙ্গে অন্য প্রতিষ্ঠানের ছেলেরা ফুটবল খেলছে। শান্তিনিকেতনের ছেলেরা আট-শূন্য গোলে জিতেছে। সবাই দারুণ খুশি। শুধু রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করলেন 'জিতেছে ভালো, তা বলে আট গোল দিতে হবে? ভদ্রতা বলেও তো একটা কথা আছে।'
  • রবীন্দ্রনাথ একবার এক ভদ্রলোককে বললেন, 'আপনাকে আমি দণ্ড দেব।' ভদ্রলোক তো ভীষণ বিব্রত। না জানি কী অপরাধ হয়েছে তার। বললেন 'কেন, আমি কী অপরাধ করেছি?' রবীন্দ্রনাথ বললেন, 'গতকাল আপনার লাঠি মানে দণ্ডটা আমার এখানে ফেলে গিয়েছিলেন। এই নিন আপনার দণ্ড।' বলে তার দিকে লাঠিটা বাড়িয়ে ধরলেন।
  • একবার রবীন্দ্রনাথ ঘুমুচ্ছেন। ঘরের জানালা খোলা। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসছে। ফুটফুটে জ্যোৎস্না। আলোতে ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ভৃত্য মহাদেবকে ডেকে বললেন, 'ওরে মহাদেব, চাঁদটাকে একটু ঢাকা দে বাবা।' মহাদেব তো হতভম্ব। চাঁদ সে কীভাবে ঢাকা দেবে? গুরুদেব হেসে বললেন, 'জানালাটা বন্ধ কর, তাহলেই চাঁদ ঢাকা পড়বে।'
  • একবার এক ভদ্রলোক রবীন্দ্রনাথের কাছে কলম ধার চাইলেন। তিনি কলম চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি এই কবিতার দ্বিতীয় লাইনটা জানেন? প্রথম লাইনটা হচ্ছে ‘সকল পক্ষী মৎস্য ভক্ষী, মৎস্যরাঙ্গী কলঙ্কিনী'। রবীন্দ্রনাথ কলমটা দিয়ে বললেন, 'নিশ্চয়ই জানি। লাইন দুটো দাঁড়াল এ রকম : সকল পক্ষী মৎস্য ভক্ষী, মৎস্যরাঙ্গী কলঙ্কিনী। সবাই কলম ধার চেয়ে নেয়, আমিই শুধু কলম কিনি!'
  • সুধাকান্ত রায়চৌধুরীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ একবার বেড়াচ্ছিলেন । হঠাৎ গুরুদেবের কাতরক্তি শুনে সুধাকান্তবাবু তারদিকে তাকাতেই, রবীন্দ্রনাথ নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, 'পা-কে চরনকমলবা পাদ-পদ্ম কেনকলে জান?' প্রশ্ন শুনে সুধাকান্তবাবুর চোখে বিস্ময় দেখে রবীন্দ্রনাথ পায়ের মোজা খুলতে খুলতে বললেন 'তাই যদি না হয়, তাহলে শরীরের এত জায়গা থাকতে মোজা ভেদ করে মৌমাছিটা পায়ের একেবারে তলায় হুলটা বিঁধালো কেন!'
  • রবীন্দ্রনাথের অভ্যাস ছিল তিনি যখনই কোনও উপন্যাস লিখতেন তখন সেটা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। তাঁর সেই আসরে মাঝে মধ্যেই যোগদান করতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। একবার আসরের বাইরে তিনি জুতো খুলে আসার কারণে তাঁর জুতো চুরি হয়ে যায়। অগত্যা, পরের দিন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় জুতো দুটো কাগজে মুড়ে সেটা বগলদাবা করে আসরে ঢুকলেন। কবি সেটা বুঝতে পেরে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করলেন, শরৎ তোমার বগলে ওটা কী পাদুকাপুরাণ? রবি ঠাকুরের মুখে এই কথা শুনে সকলেই হাসতে শুরু করলেন।
  • কথাশিল্পী প্রমথনাথ বিশী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রিয় ছাত্রদের একজন। কবির সান্নিধ্যেই থাকতেন। একদিনের কথা। শান্তিনিকেতনের কুয়োর ধারে একটি গাবগাছ ছিল। সেদিন সেখান দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ও প্রমথনাথ বিশী যাচ্ছিলেন। হঠাৎ গাবগাছের কাছে দাঁড়িয়ে রবীন্দ্রনাথ বললেন, ‘জানিস, একসময় এই গাছের চারাটিকে আমি খুব যত্ন করে লাগিয়েছিলাম। আমার ধারণা ছিল, এটা অশোক গাছ। তারপরে যখন বড় হলো দেখি, অশোক নয়, গাব গাছ।’ এরপর প্রমথনাথের দিকে তাকিয়ে কবি বললেন, ‘তোকেও অশোক গাছ বলে লাগিয়েছি, বোধ করি গাব গাছ।’
  • একদিন এক ভক্তের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ বেড়াতে গেছেন। বসার জন্য তাঁকে চেয়ার দেওয়া হলো। চেয়ার দেখে কবি ভক্তকে বললেন, ‘চেয়ারটা বেশ সুন্দর। তা চেয়ারটা সজীব তো?’ ভক্ত কিছুতেই রবীন্দ্রনাথের কথার মানে বুঝে উঠতে পারছিল না। হাঁ করে তাকিয়ে রইল কবির মুখের দিকে। ভক্তের অবস্থা দেখে রবীন্দ্রনাথই বললেন, ‘বুঝতে পারনি বুঝি? আমি জিজ্ঞেস করছি, চেয়ারটা সজীব কি না, মানে এতে ছারপোকা আছে কি না।’
  • জীবনের শেষ দিকে এসে রবীন্দ্রনাথ একটু সামনের দিকে ঝুঁকে উবু হয়ে লিখতেন। একদিন তাঁকে ওভাবে উবু হয়ে লিখতে দেখে তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী বলল, ‘আপনার নিশ্চয় ওভাবে উপুড় হয়ে লিখতে কষ্ট হচ্ছে। বাজারে এখন এ রকম অনেক চেয়ার আছে যেগুলোতে আপনি হেলান দিয়ে বেশ আয়েশের সঙ্গে লিখতে পারেন। ওরকম একটা আনিয়ে নিলেই তো পারেন।’ লোকটার দিকে খানিকক্ষণ চুপচাপ তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ জবাব দিলেন, ‘তা তো পারি। তবে কি জানো, এখন উপুড় হয়ে না লিখলে কি আর লেখা বেরোয়! পাত্রের জল কমে তলায় ঠেকলে একটু উপুড় তো করতেই হয়।’

কবিগুরুর এধরনের রসিকতার বহু ঘটনাই রয়েছে। যা থেকে কবিগুরু রসবোধের গভীরতা সম্পর্কে জানা যায়। 

আরও পড়ুন

Advertisement

Advertisement

Advertisement