Netaji Subhash Chandra Bose: নেতাজি অন্তর্ধান রহস্য আজও জিইয়ে। নেতাজি কি আদৌ মারা গিয়েছেন? গেলে কবে? এ নিয়ে বহু রহস্য, আলোচনা, পর্যালোচনার পরও কোনও সঠিক ঐক্য়মত্যে আসা যায়নি। ফলে অমর হিসেবে তিনি মানুষের মণিকোঠায় থেকে গিয়েছেন। এর মাঝে ফালাকাটার শৌলমারি আশ্রমের এক সাধুই নেতাজি ছিলেন বলে বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যু রহস্যের মতোই এ নিয়েও আলোচনা, চর্চা এখনও একই রকম সজীব। আসুন জেনে নিই শৌলমারি আশ্রমের ওই সাধু সম্পর্কে কী বলছে গবেষণালব্ধ তথ্য।
আরও পড়ুনঃ একবার, দুবার নয় নেতাজির 'মৃত্যু' হয়েছিল ১৯ বার; অবাক করা তথ্য
নেতাজিকে নিয়ে প্রথম মিথ তিনি বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। কিন্তু তার কোনও প্রামাণ্য অকাট্য তথ্য না মেলায় দেশবাসীর বিশ্বাস, তাঁদের প্রিয় নেতাজি মারা যাননি। তিনি ষাটের দশকেও জীবিত ছিলেন। এরপর বিভিন্ন জায়গায় নেতাজির মতো মুখ দেখা গেলেই মানুষ উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা অনেকটাই সত্যের মতোই। কিন্তু বলাই বাহুল্য, কোনওটাই শেষমেষ প্রমাণে পরিণত হতে পারেনি। এর মধ্যে অন্যতম হল উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ফালাকাটার শৌলমারি আশ্রমের সাধুকে নিয়ে তৈরি হওয়া জল্পনা।
উত্তরবঙ্গের ফালাকাটার এক আশ্রমে তিনি কি ভিন্ন পরিচয়ে আত্মগোপন করেছিলেন? ২০১৬ সালের ২৭ মে প্রকাশিত গোপন ফাইলের কিছু তথ্য ফাঁস হয়। সে সময় বিভিন্ন রিপোর্ট এবং সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় সেউ তথ্য। জানা যায়, সেই সময় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা শৌলমারি আশ্রমের ওই ব্যক্তিকে নিয়ে নিয়মিত আলোচনা করতেন। প্রকাশিত অন্য একটি ফাইলের নথি বলছে, ভান্ডারির পরিচয়ে নেতাজি বিষয়ক যাবতীয় তথ্য সংরক্ষিত হয়েছিল অধুনা বিলুপ্ত একটি ফাইলে। যদিও তা কী হয়েছে পরিষ্কার জানা যায়নি।
বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, মূলত, বিতর্কের সূত্রপাত হয় ১৯৬৩ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে পাঠানো শৌলমারী আশ্রমের সম্পাদক রমণীরঞ্জন দাসের লেখা একটি চিঠি। ওই চিঠিতে নেতাজি বিষয়ক বেশ কিছু তথ্য ছিল বলে খবর ছড়ায়। চিঠি পাওয়ার পর ১৯৬৩ সালের ২৩ মে তারিখে বিষয়টি উদ্ধৃত করে ইনটেলিজেন্স ব্যুরোর ডিরেক্টর বি এন মল্লিককে একটি অত্যন্ত গোপনীয় মেমো পাঠান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য আপ্তসহায়ক কে রাম। ওই বছরের ১২ জুন আরেকটি চূড়ান্ত গোপনীয় নোটে কে কে ভান্ডারি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে জবাব দেন মল্লিক। এরপর এই নিয়ে একাধিকবার রিপোর্ট চালাচালি হয়। শৌলমারির সাধুই নেতাজি কি না, তা অবশ্য শেষমেষ প্রকাশ্যে আসেনি। গোপন রিপোর্টে বন্দি হয়ে জল্পনা হয়েই থেকেছে। নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তে নিয়োজিত মুখোপাধ্যায় কমিশন অবশ্য দাবি করে, সন্দেহ অমূলক।
১৯৯৯ সালে গঠিত বিচারপতি মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে থাকা কমিশন নেতাজি সম্পর্কীয় যাবতীয় গোপন নথি হস্তান্তরের জন্য পিএমও-কে চাপ দিতে শুরু করে। উপায় না দেখে চূড়ান্ত গোপনীয় ফাইলগুলি সাধারণ গোপনীয় ফাইলের আওতাভুক্ত করে কমিশনকে দেওয়া যায় কিনা, তাই নিয়ে লাগাতার আলোচনা চলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে। শেষমেষ কিছু রিপোর্ট ও তথ্যে ষাটের দশকে শৌলমারী আশ্রমের সাধুর সঙ্গে নেতাজির শারীরিক সাদৃশ্য নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। তবে সেই সন্দেহ বরাবরই ভিত্তিহীন বলে জানিয়ে এসেছে মুখোপাধ্যায় কমিশন। তবে সে রিপোর্টের পরও বিতর্ক ও জল্পনা থামেনি।