চলতি ইন্ডিয়ান সুপার লিগের (ISL) দ্বিতীয় লেগের সেমিফাইনালে নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে (North East United) ২-১ গোলে হারিয়ে দিল এটিকে মোহন বাগান (ATK Mohun Bagan)।
দুটো লেগ মিলিয়ে মোহনবাগান মোট ৩-২ গোলে জয়লাভ করল। আর সেইসঙ্গে প্রথমবার আইএসএল ইতিহাসে তারা ফাইনালের টিকিট কনফার্ম করে ফেলল। আসুন, দেখে নেওয়া যাক এটিকে মোহনবাগানের এই ফাইনালে ওঠার রাস্তাটা ঠিক কতটা কঠিন ছিল।
১. কেরালা ব্লাস্টার্স ০-১ এটিকে মোহনবাগান
চলতি আইএসএলের প্রথম ম্যাচে কেরালা ব্লাস্টার্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে যাত্রা শুরু করে এটিকে মোহনবাগান। ৬৭ মিনিটে ম্যাচের জয়সূচক গোলটি করেছিলেন রয় কৃষ্ণা।
২. ইস্টবেঙ্গল ০-২ এটিকে মোহনবাগান
মরশুমের দ্বিতীয় ম্যাচে এটিকে মোহনবাগানকে খেলতে হয়েছিল তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে। এটা ছিল আইএসএল টুর্নামেন্টের প্রথম কলকাতা ডার্সি। তবে ইস্টবেঙ্গলের থেকে যথেষ্ট ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। এই ম্যাচে গোল করেছিলেন রয় কৃষ্ণা এবং মনবীর সিং।
৩. এটিকে মোহনবাগান ১-০ ওড়িশা এফসি
৯৫ মিনিটে রয় কৃষ্ণার গোলে এটিকে মোহনবাগান ওড়িশা এফসি'কে পরাস্ত করেছিল। এই নিয়ে টানা তৃতীয় ম্যাচ জিতেছিল এটিকে মোহনবাগান।
৪. জামসেদপুর এফসি ২-১ এটিকে মোহনবাগান
এটিকে মোহনবাগানকে চলতি মরশুমে প্রথমবার হারতে হয়েছিল চতুর্থ ম্যাচে। জামসেদপুর এফসি'র বিরুদ্ধে ২-১ গোলে হেরেছিল এটিকে মোহনবাগান। জামসেদপুরের হয়ে জোড়া গোল করেন নেরিজুস ভালস্কিস। তিনি একাই জামসেদপুরের তিন পয়েন্ট নিশ্চিত করেন। এই ম্যাচে বাগান ব্রিগেডের হয়ে একমাত্র গোলটা করেছিলেন রয় কৃষ্ণা।
৫. এটিকে মোহনবাগান ১-১ হায়দরাবাদ এফসি
পরের ম্যাচেও জয়ের স্বাদ পায়নি এটিকে মোহনবাগান। হায়দরাবাদ এফসি'র বিরুদ্ধে তারা ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র করে। মনবীর সিংয়ের গো বাগান ব্রিগেড এগিয়ে গেলেও পেনাল্টি থেকে জোয়াও ভিক্টরের শট নিজ়ামবাহিনীর হয়ে সমতা ফেরায়। দুটো দলই একটা করে পয়েন্ট পেয়েছিল।
৬. এটিকে মোহনবাগান ১-০ এফসি গোয়া
আবারও জয়ের সরণীতে ফিরে আসে এটিকে মোহনবাগান। এফসি গোয়া'কে তারা ০-১ গোলে পরাস্ত করে। একমাত্র গোলটা করেছিলেন রয় কৃষ্ণা। ম্যাচের ৮৫ মিনিটে পেনাল্টি শট থেকে এই গোলটা আসে।
৭. এটিকে মোহনবাগান ১-০ বেঙ্গালুরু এফসি
ম্যাচের প্রথমার্ধে ডেভিড উইলিয়ামসের একমাত্র গোল বেঙ্গালুরু এফসি'র বিরুদ্ধে জয় ছিনিয়ে এনেছিল। গোয়ার ফাতোরদা স্টেডিয়ামে এই ম্যাচের আয়োজন করা হয়।
৮. চেন্নাইন ০-০ এটিকে মোহনবাগান
টানা সাত ম্যাচ পর এই ম্যাচে প্রথমবার এটিকে মোহনবাগান কোনও গোল করতে পারেনি। চেন্নাইন এফসি'র বিরুদ্ধে গোলশূন্য ড্র তাদের হজম করতে হয়।
৯. এটিকে মোহনবাগান ২-০ নর্থ ইস্ট ইউনাইটেড
আবারও জয়ের সরণীতে ফিরে আসে হাবাসের ছেলেরা। নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডকে তারা ২-০ গোলে কার্যত উড়িয়ে দেয়। এটিকে মোহনবাগানের হয়ে প্রথম গোলটা করেন রয় কৃষ্ণা। তবে বেঞ্জামিন ল্যাম্বোটের আত্মঘাতী গোলে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় এটিকে মোহনবাগান। এর থেকে ভালো আর কিছুই হওয়ার ছিল না।
১০. এটিকে মোহনবাগান ০-১ মুম্বই সিটি
তবে লিগের প্রথম পর্যায়ের শেষটা বেশ হতাশাজনক ছিল মেরিনার্স সমর্থকদের কাছে। কারণ মুম্বই সিটির কাছে এটিকে মোহনবাগান ১-০ গোলে হেরে গিয়েছিল। এই ম্যাচে একমাত্র গোলটা করেন বার্থেলেমিউ ওগবেচে। সেইসঙ্গে আইল্যান্ডার্স ব্রিগেড তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয়।
১১. এফসি গোয়া ১-১ এটিকে মোহনবাগান
একে তো মুম্বই সিটি'র কাছে পরাজয়, তার উপরে পরের ম্যাচেও বাগান ব্রিগেডের জঘন্য পারফরম্যান্স অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় লেগের প্রথম ম্যাচে এফসি গোয়ার বিরুদ্ধে তারা ১-১ গোলে ড্র করে। এটিকে মোহনবাগানের হয়ে একমাত্র গোলটা করেন এডু গার্সিয়া। বাগান লিড নিলেও ইশান পান্ডিতার গোলে সমতা ফেরায় গোয়া।
১২. এটিকে মোহনবাগান ১-০ চেন্নাইন
আবারও বাগান সমর্থকদের মুখে ফুটল জয়ের হাসি। চেন্নাইন এফসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিল এটিকে মোহনবাগান। ম্যাচের ইনজুরি টাইমে ডেভইড উইলিয়ামসের গোল থেকে গুরুত্বপূর্ণ তিনটে পয়েন্ট ছিনিয়ে নেয় মেরিনার্সরা।
১৩. নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ২-১ এটিকে মোহনবাগান
আরও একবার হারতে হল এটিকে মোহনবাগানকে। আর এবার নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের বিরুদ্ধে। লুই মাচাদোর গোলে প্রথমে এগিয়ে যায় হাইল্যান্ডার্সরা। তবে রয় কৃষ্ণার গোলে সমতা ফেরায় এটিকে মোহনবাগান। তবে ম্যাচের ৮১ মিনিটে ফ্রেডরিকো গ্যালেগোর অসাধারণ একটা গোল ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়।
১৪. ওড়িশা এফসি ১-৪ এটিকে মোহনবাগান
নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের কাছে হেরে যাওয়ার পর ধামাকাদার পারফরম্যান্স করে ফিরে এসেছিল মেরিনার্স ব্রিগেড। ওড়িশা এফসি'কে তারা ১-৪ গোলে কার্যত উড়িয়ে দেয়। জোড়া গোল করেন মনবীর সিং এবং রয় কৃষ্ণা। এই জয়টা এটিকে মোহনবাগানের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
১৫. বেঙ্গালুরু এফসি ০-২ এটিকে মোহনবাগান
চলতি মরশুমে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার বেঙ্গালুরু এফসি'কে হারাল এটিকে মোহনবাগান। মার্সেলিনহোর অসাধারণ একটা ফ্রি-কিকের পর রয় কৃষ্ণার পেনাল্টি শট বেঙ্গালুরুর কফিনে শেষ পেরেকটা পুঁতে দিয়েছিল।
১৬. এটিকে মোহনবাগান ১-০ জামসেদপুর এফসি
এই ম্যাচটায় লড়াই একেবারে হাড্ডাহাড্ডি হয়েছিল। ম্য়াচের ৮৫ মিনিটে রয় কৃষ্ণার গোল এই দুই দলের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে দেয়। তিনটে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মেরিনার্সরা সংগ্রহ করেছিল।
১৭. এটিকে মোহনবাগান ৩-১ ইস্টবেঙ্গল
চলতি আইএসএল টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় কলকাতা ডার্বি। এই ম্যাচটাও জিতেছিল সবুজ-মেরুন ব্রিগেড। বাগান তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দল ইস্টবেঙ্গলকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দেল। প্রথমে মোহন বাগানকে এগিয়ে দেন রয় কৃষ্ণা। কিন্তু, তিরির আত্মঘাতী গোলে বাগানের আকাশে কিছুটা আশঙ্কার কালো মেঘ জমা হয়েছিল। কিন্তু ডেভিড উইলিয়ামস এবং তারপর জাভি হার্নান্ডেজ়ের গোলে দ্বিতীয়ার্ধে সহজ জয় হাসিল করে হাবাস অ্যান্ড কোম্পানি।
১৮. হায়দরাবাদ এফসি ২-২ এটিকে মোহনবাগান
কলকাতা ডার্বিতে জয়লাভের পর আবারও ধাক্কা খেতে হল এটিকে মোহনবাগানকে। ১০ জনের হায়দরাবাদ এফসি'র কাছে ২-২ গোলে আটকে যায় এটিকে মোহনবাগান। ম্যাচের শুরুতেই লাল কার্ড দেখে বেরিয়ে যান সানা সিং। তারপর গোটা ম্যাচেই কার্যত লিড নিয়ে এগোতে থাকে নিজ়ামবাহিনী। শেষ মুহূর্তে প্রীতম কোটালের গোলে সমতা ফেরায় এটিকে মোহনবাগান এবং একটা পয়েন্ট নিজেদের ঝুলিতে সংগ্রহ করতে পারে।
১৯. মুম্বই সিটি ২-০ এটিকে মোহনবাগান
লিগ পর্যায়ের শেষ ম্যাচে আইএসএল লিগ উইনার্স শিল্ড জেতার জন্য এটিকে মোহনবাগানের মাত্র ১ পয়েন্ট দরকার ছিল। কিন্তু, মুম্বই সিটির সামনে তাদের সেই স্বপ্ন মাটি হয়ে যায়। এই ম্যাচে ২-০ গোলে হারতে হয় বাগান ব্রিগেডকে। মুম্বইয়ের হয়ে দুটো গোল করেন মোর্তাদা ফল এবং বার্থেলেমিউ ওগবেচে।
২০. নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ১-১ এটিকে মোহনবাগান
প্রথমার্ধে ডেভিড উইলিয়ামসের গোলে এটিকে মোহনবাগান এগিয়ে গেলেও ম্যাচের 'সুপার সাব' ইদ্রিসা সাইলার শেষবেলার গোলে সমতা ফিরিয়েছিল নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড।
২১. নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেড ১-২ এটিকে মোহনবাগান
গতকাল এই দুই দলের মধ্যে দ্বিতীয় লেগের সেমিফাইনাল ম্যাচ খেলা হল। এই ম্যাচে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় বাগান ব্রিগেড। ১-০ গোলে এগিয়ে থেকে তারা হাফটাইমের বিরতিতে যায়। প্রথমার্ধের একমাত্র গোলটা করেছিলেন ডেভিড উইলিয়ামস। তবে দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা হলেও লড়াইয়ে ফিরেছিল হাইল্যান্ডার্স ব্রিগেড। কিন্তু, ততক্ষণে এটিকে মোহনবাগানের লিড আরও এক গোলে বাড়িয়ে দিয়েছেন মনবীর সিং (৬৮ মিনিট)। তবে ম্যাচের ৭৪ মিনিটে সুহের ভিপি'র গোল কিছুটা হলেও খালিদ জামিলের কলজে ঠাণ্ডা করেছিল।