আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনি শুধুমাত্র একজন সফল অধিনায়কই নন, আইপিএল টুর্নামেন্টেও তিনি যথেষ্ট সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁর সিদ্ধান্তের জোরেই দল বেশ কয়েকটা হারা ম্যাচ জিতে ফিরেছে, জয় করেছে ট্রফিও।
অধিনায়ক হিসেবে মহেন্দ্র সিং ধোনি সবসময় সকলের থেকে আলাদা চিন্তাভাবনা করেন। একথা আমরা সকলেই জানি। ম্যাচের কঠিনতম মুহূর্তে তিনি এমন একটা সিদ্ধান্ত হয়ত নেবেন, যেটা বিপক্ষ হয়ত কখনও কল্পনাই করতে পারবে না। ২০০৭ সালে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালের কথা আশা করি, আপনাদের সকলেরই মনে আছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শেষ ওভারে তিনি যোগিন্দর শর্মার হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন। তারপর তো বাকিটা ছিল ইতিহাস।
আগে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা ধোনির এই খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক সমালোচনাই করেছেন। কিন্তু, অধিনায়ক ধোনি একের পর এক ম্যাচ জিতে মগজাস্ত্রের জোরে সমস্ত সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক, সেই চারটে সিদ্ধান্ত যা বদলে দিয়েছিল ধোনির আইপিএল কেরিয়ার -
১. কায়রন পোলার্ডের জন্য আম্পায়ারের পিছনে ফিল্ডার রাখা
আজ পর্যন্ত কোনও অধিনায়কই বোধহয় আম্পায়ারের একেবারে পিছনে দলের ফিল্ডার দাঁড় করাননি। কিন্তু ২০১০ সালে আইপিএল ফাইনালে কায়রন পোলার্ডের জন্য ধোনি এমনই ফিল্ডার সাজিয়েছিলেন। যখন সবাই বলেছিল যে এটা নেহাতই শিশুসুলভ ফিল্ডিং সাজানো, তখন ধোনি নিজের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে অকাট্য যুক্তিও খাড়া করেছিলেন।
চেন্নাই সুপার কিংস দলের অধিনায়ক জানিয়ে ছিলেন, কায়রন পোলার্ড ব্যাকরণ মেনে কখনই মিড অফে শট খেলেন না। বরং তাঁর শট খানিকটা সোজাসুজিই থাকে। ১০ বারের মধ্যে ন'বারই তিনি সোজা শট হাঁকিয়েছেন। সেকারণেই সাধারণ মিড-অফের বদলে একজন স্ট্রেট মিড-অফের দরকার ছিল।
সেই ম্যাচে অবশেষে ওই স্ট্রেট মিড অফের হাতে ক্যাচ দিয়েই আউট হয়ে যান।
২. ক্রিস গেইলের বিরুদ্ধে রবিচন্দ্রন অশ্বিন
২০১১ সালে বিধ্বংসী মেজাজে ছিলেন ক্রিস গেইল। কাউকেই তিনি ছেড়ে কথা বলছিলেন না। বল দেখামাত্রই তিনি সেটাকে বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছিলেন। এমন ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানের বিরুদ্ধে অত্যন্ত ঝুঁকি গ্রহণ করেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। ২০১১ সালের আইপিএল ফাইনালে পাওয়ার প্লে চলাকালীন তিনি নিয়ে আসেন একজন অফস্পিনারকে। নাম রবিচন্দ্রন অশ্বিন।
এই ব্যাপারে ধোনি একেবারে নিশ্চিত ছিলেন যে অফস্পিনারের বিরুদ্ধে গেইল বেশি করে রান তুলতে চাইবে। হতে পারে বেশ কয়েকটা বল তাঁর ব্যাটে লেগে বাউন্ডারির বাইরে চলে যাবে। কিন্তু, গেইলের কাছে অশ্বিনের বল বাইরের দিকে যাবে। সেক্ষেত্রে ব্যাটের কানা লাগারও সম্ভাবনা থেকেই যায়।
অবশেষে ধোনির সিদ্ধান্তই সঠিক হল। গেইলের ব্যাটের কানা লেগে একটা বল ধোনির গ্লাভসে গিয়ে জমা পড়ল। আর সেই ধাক্কাটা সামলাতে পারেনি রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর। আইপিএল টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়বার খেতাব জয় করল চেন্নাই সুপার কিংস।
৩. দীপক চহ্বার এবং ভাজ্জিকে উপরের দিকে ব্যাট করতে পাঠানো
২০১৮ সালের আইপিএল টুর্নামেন্টের একটা ম্যাচে ধোনি ব্যাটিং অর্ডারে এক বিশাল রদবদল করেন। তিনি তাঁর আগে ব্যাট করতে পাঠান হরভজন সিং এবং দীপক চহ্বারকে। সেই ম্যাচে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করছিল চেন্নাই সুপার কিংস। পরে ধোনি জানিয়েছিলেন, তিনি পঞ্জাবের টিম ম্যানেজমেন্টে একটু চাঞ্চল্য তৈরি করতে চেয়েছিলেন এবং বিপক্ষের বোলিং পরিকল্পনাকে ঘেঁটে দিতে চেয়েছিলেন।
ওই ম্যাচে ধোনি নিচের দিকে ব্যাট করতে নামেন এবং সহজেই ম্যাচটা শেষ করে দেন। কিন্তু, তাঁর আগে চহ্বার এবং ভাজ্জি যে রানটা করে দিয়েছিলেন, সেটা চেন্নাই সুপার কিংস দলকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।
৪. রায়াডুকে ওপেন করতে পাঠানো
২০১৮ সালে অম্বাতি রায়াডুকে কেনে চেন্নাই সুপার কিংস। প্রত্যেকেই ভেবেছিলেন রায়াডু হয়ত মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নামবেন। কারণ তিনি আদতেই একজন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান। ইতিপূর্বে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলেও তিনি ওই জায়গাতেই ব্যাট করছিলেন।
কিন্তু, ধোনি সবাইকে কার্যত চমকে দিয়ে চেন্নাই সুপার কিংস দলের অপর ওপেনার শেন ওয়াটসনের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠান অম্বাতি রায়াডুকে। ২০১৮-র আইপিএলে ওপেনার হিসেবে রায়াডু বেশ সাফল্য অর্জন করেছিলেন এবং চেন্নাই সুপার কিংস দলকে বেশ কয়েকটা ম্য়াচও জিতিয়েছিলেন।