প্রীতম ব্যানার্জী
বিমল গুরুং প্রকশ্যে আসার পর থেকেই ঘোরালো হচ্ছে পাহাড়ের পরিস্থিতি। আরও চওড়া হচ্ছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অন্দরের ফাটল। রবিবারই পাহাড়ে মিছিল করে বিনয় তামাং গোষ্ঠী। মিছিলে নাম না করলেও বিমলের বিরোধিতা স্পষ্ট। আবার পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় ইতিমধ্যেই পোস্টার পড়তে শুরু করেছে বিমল গুরুং-এর সমর্থনে। এর জেরে পাহাড়ের পরিস্থিতি নতুন করে জটিল হয়ে উঠতে পারে বলেই আশঙ্কা রাজনৈতিক মহলের। আবার এনডিএ-এর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে তৃণমূলকে সমর্থনের যে ঘোষণা বিমল গুরুং করেছেন, মোর্চার গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে তাতে শেষ পর্যন্ত রাজ্যের শাসক দলের কোনও সুবিধা হবে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। কারণ গুরুং-এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগ থাকায় আগামিদিনে এই বিষয়টিকে প্রচারে আনতে পারেন বিরোধীরা। যদিও আগামী নির্বাচনে গুরুং-এর সমর্থন নেওয়া হবে কি না সেই বিষয়ে অবশ্য এখনও পর্যন্ত তৃণমূলের তরফে সরকারি ভাবে কিছু জানান হয়নি।
২০১৭ সালে বিমল গুরুং পাহাড় ছাড়ার পরেই নিজেকে মোর্চার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেন বিনয় তামাং। আবার বিনয়কে জিটিএ-এর শীর্ষ পদে বসিয়ে পরোক্ষে পাহাড়ের রাশ নিজের হাতেই নেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর থেকে নির্দিষ্ট ছন্দেই চলছিল পাহাড়। কিন্তু আচমকাই বিমল গুরুং-এর প্রকাশ্য আসা ও তৃণমূলকে সমর্থনের ঘোষণায় নতুন করে আন্দোলিত হয় পাহাড়ের রাজনীতি। রাজনৈতিক মহল এটাকে লোকসভা ভোটে পাহাড় ডুয়ার্সে হারানো জমি উদ্ধার করতে তৃণমূলের মোক্ষম চাল বলে মনে করলেও, এর মধ্যে নতুন করে পাহাড় অশান্ত হওয়ার সিঁদুরে মেঘও দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুরুং প্রকাশ্যে আসায় একদিকে যেমন উজ্জীবিত তাঁর সমর্থকেরা, আবার বিগত ৩ বছরে পাহাড়ে বানানো নিজেদের জমিও এত সহজে ছেড়ে দেবেন না বিনয়পন্থীরা। আর শুধু এবারই নয়, এর আগেও বিরোধী পক্ষের সঙ্গে এঁটে উঠতে না পেরে পাহাড় ছাড়তে হয়েছে সুবাস ঘিসিং-এর মত নেতাকে। যার জেরে দফায় দফায় অশান্ত হয়েছে পাহাড়। সেক্ষেত্রে এবারও 'শৃঙ্গ' দখলের লড়াইকে কেন্দ্র করে ফের পাহাড় অশান্ত হতে পারে বলেই মত অনেকের।
অন্যদিকে পাহাড় যদি ফের অশান্ত হয়, তাহলে তৃণমূলের কৌশলও কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়েও থেকে যাচ্ছে প্রশ্ন। কারণ যাঁর অনুপস্থিতিতে বিনয় তামাং-এর সঙ্গে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠতা বেড়েছিল, এখন সেই বিমল গুরুং-ই তণমূলের দিকে। সেক্ষেত্রে বিমল-তৃণমূলের এই সখ্যতা ভাল ভাবে নাও নিতে পারে বিনয় গোষ্ঠী। তাছাড়া এটা ভুললেও চলবে না, নিজেদের গোর্খাল্যান্ডের দাবি থেকে কিন্তু এখনও সরেননি বিমল গুরুং। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে যে আবার তিনি ডিগবাজি খাবেন না তাও কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায় না। কারণ একটা কথা মনে রাখতে হবে, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু হয় না !