নন্দীগ্রাম দিবসে (Nandigram Divas) সারা পৃথিবীব্যাপী রাজনৈতিক হিংসায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। মঙ্গলবার ট্যুইটারে পোস্টের মধ্যে দিয়ে এই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন তিনি। এদিন ট্যুইটারে মমতা লেখেন,"আজ নন্দীগ্রাম দিবস -‘নতুন ভোর’-এর নামে বর্বর গণহত্যার ১৩ তম বার্ষিকী। যাঁরা বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক হিংসার কারণে প্রাণ হারিয়েছে তাঁদের সকলের প্রতি আমার শ্রদ্ধা। শান্তিকে সবসময় জিততেই হবে।" এদিকে এই নন্দীগ্রাম দিবসেই এলাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি অন্য বার্তা দিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
সিঙ্গুর আন্দোলনের পর ২০০৭ সালের নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই বাংলার রাজনীতিতে নিজের মাটি কার্যত পাকাপাকি ভাবে শক্ত করেন তৃণমূল নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সালেম গোষ্ঠীর প্রকল্পের জন্য তৎকালীন বাম সরকারের জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলে গ্রামবাসীরা। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটি বা বিইউপিসির নামে শুরু হয় আন্দোলন। জমি ও জীবিকা হারানোর ভয়ে আন্দোলন শুরু করেন গরীব কৃষিজীবী গ্রামবাসীরা। আর শুধু গ্রামবাসীরাই নয়, আন্দোলনে সমল হয়েছিল বিরোধী রাজনৈতিক দল, এমনকি তৎকালীন শাসক দলের নেতারাও। যদিও নিজেদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসেনি তৎকালীন বাম সরকার। যার ফলশ্রুতি, রক্তে ভেসেছিল নন্দীগ্রামের মাটি। নিখোঁজ হয়ে যান বেশ কয়েকজন, যাঁদের আজও হদিশ নেই।
পরবর্তী সময়ে অবশ্য ক্ষমতায় এসে বারেবারেই সিঙ্গুর নন্দীগ্রাম সহ রাজ্যের সর্বত্র কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের উন্নতিকল্পে বেশকিছু পদক্ষেপও করেছে তাঁর সরকার। এমনকি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি শুভেন্দু অধিকারীকে ওখান থেকেই বিধায়ক করেছেন মমতা। কিন্তু সাম্প্রতিককালে সেই শুভেন্দু অধিকারীর (Subhendu Adhikary) সঙ্গেই দলের সম্পর্ক নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। ইতিমধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন জায়গায়, এমনকি ভিন জেলাতেও শুভেন্দু অধিকারীর একক ছবি দিয়ে পড়েছে পোস্টার ও ব্যানার। যার নেপথে রয়েছেন 'দাদার অনুগামী'রা। এমনকি নন্দীগ্রাম দিবসেও এখনও পর্যন্ত দলের মঞ্চে দেখা যানি শুভেন্দুবাবুকে। পরিবর্তে এদিন গোকূলনগর হাইস্কুলের মাঠে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির আযোজিত সভায় দেখা যায় তাঁকে। তিনি বলেন,"আমি হোঁচট খাচ্ছি না গাড্ডায় পড়েছি তার জবাব রাজনৈতিক মঞ্চে দেব। রাজনৈতিক মঞ্চে লড়াই হবে।" এদিকে ফিরহাদ হাকিম, দোলা সেন এবং পূর্ণেন্দু বসুকে নিয়ে এদিন সভার আয়োজন করেছেন জেলার তৃণমলূ নেতা শেখ সুফিয়ানও। এছাড়া চৌরঙ্গিতে আবু তাহেরের আয়োজিত সভায় উপস্থিত থাকছেন সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী এবং জেলার তৃণমূল মুখপাত্র মধুরিমা মণ্ডল। এক্ষেত্রে এই নন্দীগ্রাম দিবসের সভা, পালটা সভার মধ্যে দিয়ে রাজ্য রাজনীতি নতুন কোনও মোড় নেয় কি না এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।