দক্ষিণবঙ্গ যখন প্রবল গরমে নাজেহাল, সেখানে উত্তরবঙ্গ টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত। পাহাড় থেকে সমতল এক সপ্তাহ ধরে টানা বৃষ্টিতে কোথাও সেতু ধসে গিয়েছে, কোথাও নদী ফুলেফেঁপে উঠছে। আবার কোথাও ধস নেমে রাস্তা বন্ধ হয়ে রয়েছে। পাহাড়ে তিস্তা থেকে মালদায় ফুলহর নদী। মহানন্দা, বালাসন, কালজানি, মুজনাই, করলা, গঙ্গা, লিস, তোর্ষা, ঘিস সহ বহু ছোট-বড় নদীতে জল বেড়েছে। নতুন করে দার্জিলিং-কালিম্পং রাস্তাও বন্ধ হয়েছে।
পাহাড়ে টানা প্রবল বৃষ্টিতে কার্যত ধসে যেতে বসেছে সোনাদার জনপ্রিয় ‘ইন্দ্রাণী ফলস’ (Indreni Falls)। যা পর্যটকদের কাছে রেইনবো ফলস (Rainbow Falls) সংলগ্ন এলাকার পরিকাঠামো। দার্জিলিংয়ের সোনাদার কাছে, শহর থেকে ২৩ কিলোমিটার দূরে এই ফলসটি ক্রমেই পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ হয়ে উঠেছে। এখানে আদিমতা বজায় রাখতে বাঁশ ও কাঠের সেতু তৈরি করা হয়েছিল। কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে এই বাঁশ ও কাঠের সেতুটি পুরো ভেসে গিয়েছে। এমনকি দার্জিলিংগামী মূল রাস্তা থেকে এই ফলস অবধি পৌঁছনোর যে সংকীর্ণ রাস্তাটি রয়েছে সেটার অবস্থাও অত্যন্ত বেহাল। এই রাস্তা দিয়ে এলাকায় কোনও গাড়ির যাওয়াটাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ইন্দ্রাণী ফলস প্রোটেকশন কমিটির সদস্য বিসাত রাই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টিতে এলাকার পরিকাঠামো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই এলাকার পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য জিটিএ কর্তৃপক্ষকে তাঁরা একটি স্মারকলিপি দিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণের আর্জিও জানিয়েছেন।
এদিকে প্রবল বর্ষণের জেরে ফের বন্ধ হল দার্জিলিং-কালিম্পং সড়ক। তিস্তায় জলস্ফীতি এতটাই বেড়েছে যে, পেশকের রাস্তার ওপর দিয়ে জল বইছে। প্রশাসনের তরফে রাস্তাটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে তিস্তাবাজার এবং সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে কালিম্পং জেলা প্রশাসন। এখানকার বাসিন্দাদের ফের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রাখা হয়েছে। কালিম্পংয়ে নদীতে একটি অজ্ঞাত পরিচয় মৃতদেহ ভেসে আসতে দেখা গিয়েছে। চারিদিকে আতঙ্কের পরিবেশ।
১০ নম্বর জাতীয় সড়ক নতুন করে সম্পূর্ণ বন্ধ না করা হলেও, কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। তেমনই সতর্কতার সঙ্গে গাড়ি চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কারণ, কয়েকটি জায়গায় তিস্তার জল রাস্তার উপর উঠে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি রবিঝোড়া, লিকুভিরের মতো জায়গাগুলিতে ফের ধস নেমেছে।
উত্তরবঙ্গের ব্যাপক বৃষ্টির ফলে জল বাড়তে শুরু করেছে মালদার ফুলহর নদীতে। আর নদীর জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীর দক্ষিণ দিকের অসংরক্ষিত এলাকায় শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার ইসলামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নদীর অসংরক্ষিত অঞ্চলে থাকা রশিদপুর থেকে গোবরা হাট পর্যন্ত ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। বুধবার রাত থেকে নদীর জল বাড়তে শুরু করায় স্রোত আরও বেড়ে গিয়েছে। আর এই স্রোতের দাপটে নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে। আতঙ্কে নদীর দক্ষিণ পাশে থাকা অসংরক্ষিত অঞ্চলের রশিদপুর, ভাকুরিয়া মীরপাড়া তাঁতি পাড়া সহ একাধিক গ্রামের বাসিন্দা। রশিদপুরের অনেক কাছে চলে এসেছে নদী। উত্তর মালদার সাংসদ খগেন মুর্মু সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইতিমধ্যেই দিল্লিতে গঙ্গা এবং ফুলহর নদীর ভাঙন সমস্ত স্থায়ী সমাধান নিয়ে কেন্দ্রীয় সেচ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান।
অন্যদিকে কোচবিহারে রাতভর ভারী বৃষ্টির জেরে জলমগ্ন অবস্থা তৈরি হয়েছে। কোচবিহার শহরের দুই নম্বর ওয়ার্ড, তিন নাম্বার ওয়ার্ড, সাত নম্বর ওয়ার্ড, ১২ নম্বর ওয়ার্ড, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড উনিশ নম্বর ওয়ার্ডে সবথেকে বেশি জল জমেছে। শহরের ব্যস্ততম কোচবিহার মিনি বাস স্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তায় প্রায় এক হাঁটু জল জমে যাওয়ায় নাজেহাল পরিস্থিতি পথচারী থেকে শুরু করে যাত্রীদের। জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া নীচু এলাকার নানা, জায়গা জলমগ্ন হয়ে রয়েছে।