Darjeeling New Political Party: ২০২৬ সালে বিধানসভা ভোটের আগে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে দার্জিলিং পাহাড়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এরই মধ্যে ফের পাহাড়ে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির জল্পনা শুরু হয়েছে। শোনা যাচ্ছে অজয় এডওয়ার্ডের তৈরি নতুন হামরো পার্টির নাম বদলাতে চাইছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ নিয়ে অবশ্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা খুব একটা আশাবাদী নন। নতুন দল তৈরি করে কী লাভ হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন তাঁরা। অনেকে চাইছেন বর্তমান দলগুলিকে নিয়ে জোট বা যৌথ লড়াই। যা রাজ্য রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। মোর্চার মত দল আবার সব দলকে নিয়ে জোট করে লড়ার পক্ষে।
সূত্রের খবর, হামরো পার্টির নাম বদল করে নতুন নামকরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানে ‘গোর্খা’ শব্দটি জোড়ার পক্ষে জোর সওয়াল করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ২৬-এর বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে দার্জিলিং এবং কালিম্পংয়ের কিছু নেতা-নেত্রী মিলে একটি রাজনৈতিক দল তৈরির কাজ শুরু করেছেন। সেখানে হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ড রয়েছেন, কালিম্পংয়ের পরিচিত মুখ ব্যবসায়ী নরেন্দ্র তামাং, প্রাক্তন জিটিএ চিফ বিনয় তামাংয়ের নাম উঠে আসছে। তবে এখনও বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না আলোচনা শুরু করা কোনও নেতাই। কোন লক্ষ্য নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরির ছক কষা হচ্ছে, কারা কারা থাকবেন সেই দলে সেসব নিয়ে জল্পনার তুঙ্গে। কালিম্পংয়ের বাসিন্দা নরেন্দ্র তামাং বলেছেন, দল গঠন নিয়ে আলোচনা চলছে। অনেকের সঙ্গেই কথাবার্তা হচ্ছে।
তবে যাঁরা এই জোটে থাকবেন না, তাঁরা এটা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি সংবাদাধ্যমে দাবি করেছেন, একটি নতুন দল আসছে বলে শুনেছি। তবে তাতে কী সুবিধা হবে জানি না। গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি দল হয়েছে। কোনও লাভ হয়েছে কি? পাল্টা প্রশ্ন তাঁর। তিনি বলেন, "দাবি আদায়ে সবার একজোট হয়ে লড়া উচিত। মোর্চার তরফে সেই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।" বিজিপিএমের মুখপাত্র শক্তিপ্রসাদ শর্মা আবার অজয়ের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, নতুন দল হবে হবে বলে খুব জল্পনা চলছে। কিন্তু গোর্খাল্যান্ড না উন্নয়ন, কিসের ভিত্তিতে নিয়ে দল করা হবে পরিষ্কার নয়। তাঁর দাবি,অজয় এডওয়ার্ড একটা পার্টিকেই এতদিনে দাঁড় করাতে পারলেন না।
২০০৭ সালের আগে পাহাড়ে একচ্ছত্র রাজ ছিল সুবাস ঘিসিংয়ের নেতৃত্বে গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (GNLF)-এর। এরপর ২০২৭-এ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা তৈরি করেই বিমল গুরুং, রোশন গিরিরা পাহাড়ের দখল নেন। সুবাস ঘিসিংকে পাহাড়ছাড়া হতে হয়। তিনি জলপাইগুড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এরপর তারপর থেকে পাহাড়ে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা (বিজিপিএম), জন আন্দোলন পার্টি (জাপ), হামরো পার্টির মতো একাধিক রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছে। আগে থেকেই কনটেম্পরারি হিসেবে অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের মতো দল রয়েছে। তাছাড়া বিজেপি, কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম, সিপিআই এর শাখাও রয়েছে নিজেদের মতো করে।
কালিম্পংয়ের প্রাক্তন বিধায়ক ডঃ হরকাবাহাদুর ছেত্রী জাপ তৈরি করেছিলেন। সম্ভাবনা থাকলেও সেই দল মুখ থুবড়ে পড়ে। আপাতত দলটি খাতায় কলমে থাকলেও আদতে কোনও কাজই করে না। এরপর অজয় এডওয়ার্ডের নেতৃত্বে হামরো পার্টি আত্মপ্রকাশেই সাড়া ফেলে দেয়। তারা দার্জিলিং পুরভোটে দাঁড়িয়ে পুরবোর্ড দখল করে। যদিও বেশিদিন ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেনি তাঁরা। তৃণমূলের সমর্থনে অনিত থাপার নতুন রাজনৈতিক দল বিজিপিএম দল ভাঙিয়ে হামরোর বেশিরভাগ নেতাদের দলে টেনে আনেন। ফলে পুরবোর্ডে ক্ষমতা চলে যায় অনিতদের হাতে। এর মধ্যে জিটিএ-তেও অনিত থাপারা ক্ষমতা দখল করেন। এরপর হামরো হীনবল হয়ে পড়ে। এর মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে হামরো কংগ্রেসকে সমর্থন করে এবং কংগ্রেস প্রার্থী অজয় এডওয়ার্ডই ঠিক করে দেয়।