North Bengal Water Logging: টানা বৃষ্টি ও তিস্তাতে জলস্তর বৃদ্ধি নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিকিমে বন্যার ফলে এমনিতেই জলস্তর বেড়েছে তিস্তার। ফলে শঙ্কিত উত্তরবঙ্গের মানুষ। নবান্নে এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মুখ্য়মন্ত্রী জানান, উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কারণ সিকিমে মেঘ ফেটেছে। জলস্তর বাড়ছে। সেজন্য জলপাইগুড়ি, কোচবিহার নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কারণ আছে। আসুন এই মুহূর্তে কী পরিস্থিতি রয়েছে তা দেখে নিই।
গত সপ্তাহখানেক টানা বৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়েও চলছে তুমুল বর্ষণ। শুক্রবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমেছে। তাতে পাহাড়ে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও উত্তরবঙ্গের সমতলে জল জমা হয়ে রয়েছে। এর মধ্য়ে উত্তরের নদীগুলিতে জল বেড়েছে। পাহাড়ের দুই জেলা বাদ দিয়ে বাকি সব জেলাতেই একাধিক জায়গা জলমগ্ন। আপাতত বৃষ্টির পরিমাণ কম থাকলেও নদীগুলিতে জল কমেনি। পাশাপাশি একাধিক জায়গায় নদীতে ভাঙন দেখা গিয়েছে। বহু এলাকায় জল ঢুকে রয়েছে। নতুন করে বৃষ্টি না হলে আর নদীতে জল কমলে সপ্তাহখানেকের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে পারে।
বালুরঘাটের জলছবি
ভারী বৃষ্টিতে ফের জলমগ্ন বালুরঘাট শহরের একাংশ ওয়ার্ড। কোথাও কোথাও রাস্তার উপর জমেছে হাঁটু জল। আবার কোথাও তার থেকে বেশি। এমনকি বালুরঘাট হাসপাতালের সামনেও জমেছে জল। বালুরঘাট শহরের মধ্যে সবথেকে বেশি জল জমেছে ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে। শুক্রবার মধ্য রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ভারী বৃষ্টি হয় বালুরঘাটে। একটানা বৃষ্টির ফলে জল জমে যায় বঙ্গী, খাদিমপুর মাস্টার, আনন্দবাগান সহ শহরের বেশকিছু এলাকায়। বেহাল নিকাশি ব্যবস্থার কারণে জল নামতে দেরি হয় বলেই অভিযোগ শহরবাসীর। এমনকি শহরের বেশকিছু রাস্তা খারাপ থাকায় সেই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে ব্যাপক দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। যদিও পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, যেখানে জল নামতে সমস্যা হচ্ছে সেইসব জায়গায় পাম্পের সাহায্যে জল বের করা হচ্ছে।
ফালাকাটার জলমগ্ন এলাকা
আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ব্লকের কড়াইবাড়িতে গ্যারগান্ডা নদীর পাড়ভাঙনে নিশ্চিহ্ন কংক্রিটের রাস্তা। ফলে ওই রাস্তায় প্রায় এক মাস ধরে যানবাহন চলাচল বন্ধ। এতে সমস্যায় পড়েছেন মাদারিহাট বীরপাড়া ও ফালাকাটা ব্লকের কমবেশি ২০ হাজার মানুষ। রাস্তা পুনর্নির্মাণে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির স্থানীয় সদস্যা মাধবী বর্মন।
মাদারিহাটের অবস্থা
রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় বেশি সমস্যায় পড়েছেন মাদারিহাটের রাঙ্গালিবাজনার বাসিন্দারাই। কারণ জটেশ্বরে যাতায়াত করতে এখন তাঁদের বীরপাড়া হয়ে কয়েক কিমি ঘুরপথে যেতে হচ্ছে। এতে তিনগুণ বেশি সময় লাগছে। নাজেহাল হচ্ছেন উত্তর শিশুবাড়ি, দক্ষিণ শিশুবাড়ির বাসিন্দারা। আবার ওই রাস্তা দিয়ে ফালাকাটার জটেশ্বর, ধুলাগাঁও, কড়াইবাড়ির কৃষিজীবী মানুষরাও রাঙ্গালিবাজনার শিশুবাড়িহাটে বিকিকিনি করতে যান।
সম্প্রতি বৃষ্টিতে জল বেড়েছে রায়ডাকে। এদিকে জল বাড়তে শুরু করায় নতুন করে পাড়ভাঙন শুরু হয়েছে তুফানগঞ্জ-২ এর ভানুকুমারি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের চর ভানুকুমারি এলাকায়। শুক্রবার সেই ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন তুফানগঞ্জ-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শীতলচন্দ্র দাস। পাড়ভাঙন রুখতে স্থানীয়দের তরফে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে বোল্ডারের বাঁধের দাবি জানানো হয়। সেচ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন সভাপতি।
মালদার মানিকচক
টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জলবন্দি মাদ্রাসার বয়েজ হস্টেলের চারিদিক। হস্টেলের চারিদিকে প্রায় হাঁটু সমান জল। হস্টেলের চলাচল করার রাস্তাটিও ডুবে গিয়েছে জলে। সাপ, পোকামাকড়ের আশঙ্কা রয়েছে। চারিদিকে জল থাকায় হস্টেলে থাকা ছেলেরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই হস্টেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রতুয়া-২ ব্লকের রানিনগর হাই মাদ্রাসা হস্টেলের এই চিত্র। বৃহস্পতিবার থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ হস্টেলের ছেলেদের ছুটি দিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে চলছে লাগাতার বৃষ্টি। আর এই প্রবল বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে মানিকচকের সবজি চাষিরা। গত কয়েক দিনের লাগাতার বৃষ্টিতে মানিকচকের নুরপুরের বিঘার পর বিঘা সবজি ক্ষেত জলের তলায়। প্রায় ৩০০ বিঘার ও বেশি সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে বাঁধাকপি চাষিরা। ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকার বেশি বলে দাবি সবজি চাষিদের।
জলপাইগুড়িতেও জলমগ্ন এলাকা
জলপাইগুড়ির কোনও কোনও এলাকায় এমনিতেই জল ঢুকতে শুরু করেছে। কারণ তিস্তায় জল বাড়ার জন্য সমস্ত বাঁধের লকগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে হুড়মুড়িয়ে জল নেমে আসছে জলপাইগুড়িতে। সেখানে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। ফলে সতর্ক রয়েছে প্রশাসন।