Sikkim Lake Teesta: গত কয়েক বছরে দারুণ বিপর্যয়ের মুখে তিস্তা। একদিকে টানা বৃষ্টিতে নাব্যতা হারিয়ে উপচে পড়ছে, অন্য়দিকে ধসের কারণে তিস্তার পার ধসে যাচ্ছে। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে সিকিম থেকে নেমে আসা তিস্তার জল যেভাবে পাহাড়ি এলাকায় ক্ষতি করছে তা সামাল দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। তার উপর প্রচুর অর্থ ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সহ ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগিতাও জরুরি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলি জিটিএ-র আওতাভুক্ত হওয়ায় সেচ দফতরের তরফেও পদ্ধতিগত জটিলতা রয়েছে পদক্ষেপ করার। সেই সমস্যা মিটিয়ে বৃহত্তর জনস্বার্থে নাব্যতা ফেরানোর কোনও উপায় বের করা যায় কি না, তা নিয়ে সহযোগিতা চেয়ে জিটিএ রাজ্য সেচ দফতরে চিঠি পাঠিয়েছে।
গত বছর অক্টোবরের শুরুতে সাউথ লোনাক লেক ভেঙে তিস্তায় নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। যার রেশ এখনও কাটেনি। তিস্তার বুকে পলি জমে রিভার বেড বুজে আসছে। ইস্ট রাথোং সহ তিনটি হিমবাহ হ্রদ বা গ্লেসিয়ার লেকে সম্প্রতি সমীক্ষা চালিয়েছে সিকিমের বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি দপ্তর। সেই সমীক্ষা রিপোর্টেই ‘আয়তন বৃদ্ধি’-তে উদ্বেগ স্পষ্ট। হিমবাহ গললেই মূলত গ্লেসিয়ার লেকের আয়তন বাড়ে। ফলে ফের বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ বিশেষজ্ঞরা।
ধারাবাহিক বৃষ্টিতে জলস্তর বাড়ছে। সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুসারে, বুধবার মেল্লিতে তিস্তার জলস্তর নতুন করে বিপদসীমা (২২৬ মিটার) অতিক্রম করে পৌঁছে যায় ২২৬.৮ মিটারে। বৃহস্পতিবার ডেঞ্জার জোন (২২৭ মিটার) অতিক্রম করে তিস্তার জল। গত দু’দিনে ভারী বৃষ্টি না হয়নি, তা সত্ত্বেও তিস্তায় জলস্ফীতি ঘটছে কীভাবে? সাউথ লোনাক লেক বিপর্যয়ের জেরে তিস্তাগর্ভে পলির যে স্তর পড়েছে, তাতে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় সাধারণ বৃষ্টিতে জল বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন গবেষকরা।
নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় আপার তিস্তায় এখন জলধারণ ক্ষমতা কম। কিন্তু জলস্ফীতির কারণ নানাবিধ হতে পারে। ফলে নানা দিক খতিয়ে দেখা উচিত। মূলত দেখতে হবে পলির স্তর কতটা বেড়েছে।’তবে এর পিছনে হিমবাহের গলনের বিষয়টি উড়িয়ে দিচ্ছেন না অনেকেই। গ্লেসিয়ার লেক নিয়ে কাজ করা পদ্মশ্রী ডঃ একলব্য শর্মা মনে করছেন, ‘এখন গরম পড়ে যাওয়ায় বরফ গলতে শুরু করেছে। তাই লেকগুলিতে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। এখন থেকেই যদি মনিটরিং না করা হয়, তবে বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।’
সিকিমের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর যে সমীক্ষা রিপোর্ট প্রশাসনিক স্তরে জমা করেছে, তাতেও তিনটি লেকের আয়তন বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। সমীক্ষা রিপোর্টে টিকিপ লা’র গভীরতা ৫৫ মিটার, ভালে পোখরির ৪২ মিটার এবং রাথোংয়ের ২৪.৪ মিটার বৃদ্ধি হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিপদ এড়াতে হ্রদগুলিতে থাকা অটোমেটিক ওয়েদার সেন্টারের উন্নতিকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আর এই রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসতেই আশঙ্কার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে সিকিমে।