ভাটপাড়ায় তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় এবার গ্রেফতার মূল অভিযুক্ত। একদা বাংলার অক্সফোর্ড এখন দুষ্কৃতীদের চারণভূমি। এই অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রোজই গ্যাংওয়ার দেখে অভ্যস্থ এলাকার মানুষ। একটা সময় এই এলাকা ছিল জুটমিলের জন্য বিখ্যাত। সেই সময় জুটমিলের রাজনীতি নিয়ে উত্তপ্ত ছিল জগদ্দল, কাঁকিনাড়া। আর এখন ইস্যু এলাকা দখল। এই এলাকা দখলের লড়াইতেই কার্যত প্রাণ গিয়েছে তৃণমূল নেতা অশোক সাউয়ের। এমনটাই দাবি করেছেন তদন্তকারীরা। এরপরেও এই ঘটনায় উঠে এসেছে বেশ কিছু তথ্য। ঘটনার পাঁচ দিন পর গ্রেফতার হল মূল অভিযুক্ত সুজলকে।
তদন্তে জানা গিয়েছে, দাদার খুনের বদলা নিতেই তৃণমূল নেতা অশোক সাউকে খুন করেছে সুজল। সুজলের সঙ্গে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জগদ্দল থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে বারুইপাড়া নামে একটি এলাকা থেকে সুজলকে সোমবার গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জড়িত আরও চার-পাঁচজন পলাতক। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
গত বুধবার সকালে ভাটপাড়ার ৪ নম্বর বাসস্ট্যান্ড চত্বরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত হন তৃণমূল নেতা অশোক সাউ। তিনি ১২ নম্বর ওয়ার্ডের দলের প্রাক্তন সভাপতি ছিলেন। অশোকবাবু ওই দোকানে চা খাওয়ার জন্য বসেছিলেন। সেই সময় দুষ্কৃতীরা অতর্কিতে হামলা চালায়। তাঁকে লক্ষ্য করে পরপর কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় আততায়ীরা। দুষ্কৃতীদের গুলি পেটে লাগে তৃণমূল নেতা অশোক সাউয়ের। রক্তাক্ত অবস্থায় দোকানের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি। তারপর দুষ্কৃতীরা বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এলোপাথাড়ি বোমাবাজি করতে করতে হেঁটে চম্পট দেয় ঘটনাস্থল থেকে। স্থানীয় বাসিন্দারা তড়িঘড়ি অশোককে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার অলোক রাজোরিয়া। ঘটনার তদন্তে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট সিট গঠন করে। সিটের দায়িত্বে রয়েছেন ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাস।
সিটের আধিকারিকরা ঘটনার তদন্ত নেমে জানতে পারেন, ২০২০ সালে ভাটপাড়ার পালঘাট রোডে আকাশ সাউ নামে এক সমাজবিরোধীকে পিটিয়ে মারা হয়। সে ছিল মাদক পাচারের চাঁই। তার বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতি ও রাহাজানি-সহ আরও বেশকিছু অপরাধমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। মারধরের ঘটনায় অভিযুক্ত ছিলেন তৃণমূল নেতা অশোক সাউও। অভিযোগ, দাদার খুনের বদলা নিতে নিহত আকাশের ভাই সুজল ২০২৩ সালে অশোককে একবার খুনের চেষ্টাও করেন।
অশোক সাউ খুনের ঘটনার পর থেকে তৃণমূলের তরফ থেকে আঙুল তোলা হচ্ছিল বিজেপির দিকে। কিন্তু বিজেপি নেতা অর্জুন সিং প্রথম থেকেই অভিযোগ করছিলেন, একটি খুনের মামলার বদলা নিতেই এই খুন। অশোক সাউ সেই খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। অর্জুন দাবি করেছেন, অশোক আকাশ নামে এক জনকে খুন করেছিলেন। আকাশের ভাইরাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত বলে প্রথম থেকে দাবি করেছিলেন অর্জুন। কার্যত সেই একই দাবি করেছিলেন নিহত অশোকের পরিবারের সদস্যরাও। পুলিশি তদন্তে সেই বিষয়টিও স্পষ্ট হল।
নিহত অশোকের পরিবারের পক্ষ থেকে জগদ্দল থানায় সুজল-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের হয়। ঘটনার তদন্ত নেমে গত বৃহস্পতিবার পুলিশ কাউসার আলিকে গ্রেফতার করে। কাউসারকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় সুজন পাশোয়ানের জড়িত থাকার কথা জানতে পারে। শনিবার ভোররাতে টিটাগড়ের একটি গোপন ডেরা থেকে পুলিশ সুজনকে গ্রেফতার করে। ধৃত কাউসার ও সুজনকে জেরা করে পুলিশ তৃণমূল নেতা খুনের মূল অভিযুক্ত সুজলের অবস্থান জানতে পারে। রাজ্য পুলিশের এডিজি সিআইডি বিশাল গর্গ ও ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ গণেশ বিশ্বাসের নেতৃত্বে মূল অভিযুক্ত সুজলকে ধরতে বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়। সেইমতো সোমবার ভোররাতে ভিনরাজ্যের গোপন ডেরা থেকে সুজলকে পুলিশ পাকড়াও করে। এদিন দুপুরেই তাদের ব্যারাকপুর মহাকুমা আদালতে তোলা হয়।